প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বড়লেখায় দুর্ভোগ কমাতে নিজেদের অর্থ-শ্রমে সড়কের গর্ত ভরাট করছেন স্থানীয়রা

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৮, ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ
বড়লেখায় দুর্ভোগ কমাতে নিজেদের অর্থ-শ্রমে সড়কের গর্ত ভরাট করছেন স্থানীয়রা

Manual6 Ad Code

বড়লেখা সংবাদদাতা:
গভীর রাত। চারদিকে অন্ধকার। স্থানীয় সব মানুষ তখন ঘুমে। এরমধ্যে সড়কে নিরলস কাজ করছে একদল মানুষ। তবে তা সরকারি কোনো উদ্যোগে নয়। দুর্ভোগ কমাতে স্বেচ্ছাশ্রমে তারা সড়কের গর্তগুলো ভরাট করছেন।

Manual1 Ad Code

শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলী-তেরাকুড়ি-শিমুলিয়া সড়কের সাইডিং বাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। দিনের বেলা যান চলাচলসহ মানুষের যাতায়াতে সড়কটি ব্যস্ত থাকায় গভীর রাতে তারা এই কাজ করছেন।

Manual5 Ad Code

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, কাঠালতলী-তেরাকুড়ি-শিমুলিয়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্যা গর্ত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। বিষয়টি তারা জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। তাতে কারও কোনো সাড়া মেলেনি। কাজও হয়নি। এই অবস্থায় সরকারিভাবে সংস্কারের অপেক্ষা না করে স্থানীয় লোকজন টাকা তুলে সড়কের গর্ত ভরাট কাজ শুরু করেছেন। শনিবার রাত দশটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত কাঠালতলী বাজার থেকে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক দুলালের বাড়ি পর্যন্ত সড়কের কয়েকটি স্থানের গর্ত ভরাট করা হয়েছে।

Manual8 Ad Code

প্রায় ৩ কিলোটিমিটার এই সড়কটি গর্ত ভরাট করতে প্রায় এক লাখ টাকা প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি টাকা স্থানীয়দের কাছ সংগ্রহ করে তারা সড়কটির গর্ত ভরাট করবেন বলে স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন।

Manual2 Ad Code

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাঠালতলী-তেরাকুড়ি-শিমুলিয়া সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। সড়কটি উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঠালতলী বাজার (বড়লেখা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক) থেকে পশ্চিম দিকে গিয়ে সুজানগর ইউনিয়নের তেরাকুড়ির সঙ্গে মিশেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ আসা-যাওয়া করেন। ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। সড়কের বিভিন্নস্থানে কয়েকদফা বন্যা পানি উঠে ক্ষত তৈরি হয়েছে।

এলজিইডি দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগই নেয়নি। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এতে একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের এসব গর্তে পানি জমে যায়। তখন হেঁটে চলাচল করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরমধ্যে ছোট-বড় যানবাহনের চালকরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এই অবস্থায় সম্প্রতি সড়কটির গর্তগুলো ভরাটের কথা চিন্তা করেন ব্যাংকার নাজমুল ইসলাম। তিনি বিষয়টি স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহিন আহমদকে জানান। পরে শাহিন কয়েকজন অটোরিকশা চালককে বিষয়টি জানালে তারা এগিয়ে আসেন।

এরপর সবাই মিলে এলাকার মানুষজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে পাথর, বালু ও সিমেন্ট কেনা হয়েছে। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত দশটা থেকে ব্যবসায়ী শাহিন আহমদের নেতৃত্বে রাজমিস্ত্রী আব্দুল আহাদ, অটোরিকশা চালক আব্দুর রুপ, সুমন আহমদ, বারহাম উদ্দিন, ইলিয়াস আহমদ ও বাবুল আহমদসহ কয়েকজন মিলে সড়কটির গর্ত ভরাট কাজ শুরু করেছেন। ওইদিন (শনিবার) রাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত কাঠালতলী বাজার থেকে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক দুলালের বাড়ি পর্যন্ত সড়কের কয়েকটি স্থানের গর্ত ভরাট করা হয়েছে।

ব্যাংকার নাজমুল ইসলাম বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। এই অবস্থায় চলাচল করতে গিয়ে মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছিলেন। জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। সম্প্রতি সড়কটির গর্তগুলো ভরাট করা যায় কিনা তা নিয়ে ব্যবসায়ী শাহিন আহমদসহ আরও কয়েকজনের সাথে আলাপ করি। সবাই তাতে সাড়া দেন। এরপর সবাই মিলে টাকা সংগ্রহ করে সড়কটির কাজ শুরু করেছি।

ব্যবসায়ী শাহিন আহমদ বলেন, সড়কটি দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোটিমিটার। সড়কটির গর্ত ভরাট করতে প্রায় এক লাখ টাকা প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা স্থানীয়দের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি টাকা স্থানীয়দের কাছ থেকে তুলে সড়কটি সংস্কার করা হবে। দিনের বেলা সড়কটি দিয়ে মানুষের চলাচল বেশি থাকে। তখন কাজ করতে সমস্যা হবে ভেবে রাতে কাজ করছি। কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেই আমরা গর্ত ভরাট করছি।

অটোরিকশা চালক আব্দুর রুপ, সুমন আহমদ, বারহাম উদ্দিন, ইলিয়াস আহমদ ও বাবুল আহমদ বলেন, আমরা নিজেরাই টাকা দিয়েছি। মানুষদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছি। এখন শ্রম দিয়ে সড়কের গর্ত ভরাট করছি। সড়কটি সংস্কার হলে সবাই নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কাওছার আহমদ বলেন, সড়কের কিছু দূর পর পর ছোটবড় অনেক গর্ত ছিল। এতে আমাদের চলাচলে সমস্যা হত। এলাকার লোকজন টাকা তুলে নিজেরা শ্রম দিয়ে গর্ত ভরাট করেছেন। এতে মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।

বড়লেখা উপজেলা প্রকৌশলী প্রীতম সিকদার জয় বলেন, বরাদ্দ না আসায় রাস্তাটির কাজ করা যায়নি। কয়েকদিন আগে একজন ফোন দিয়ে বললেন সড়কটির গর্তগুলো ভরাট করবেন। তাকে মৌখিকভাবে ভরাটের অনুমতি দিয়েছি। অর্থ বরাদ্দ পেলে সড়কটি সংস্কার করে দেওয়া হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code