প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১০ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারে গরিবের সরকারি কম্বল খেয়েছে দু*র্নী*তির ইঁদুর

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে গরিবের সরকারি কম্বল খেয়েছে দু*র্নী*তির ইঁদুর

Manual2 Ad Code

* দরিদ্র মানুষকে দেওয়ার জন্য ১৫ বছরে প্রায় ১ লাখ কম্বল সরবরাহ

Manual7 Ad Code

* হাতেগোনা বিতরনে চরম গোপনীয়তা

* দেড় কেজি ওজনের কথা বলা হলেও পাওয়া গেছে এক কেজির কম্বল

 

মিলাদ জয়নুল:

বিয়ানীবাজারে প্রতিবছর শীত মৌসুমে গরিব মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য গড়ে ৫ হাজার পিস করে করে কম্বল সরবরাহ করে সরকার। কিন্তু এসব কম্বল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যথাযথ নিয়মে বিয়ানীবাজারে কম্বলপ্রাপ্ত লোকের স্ংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। আর সরকারিভাবে বরাদ্ধ হওয়া অবশিষ্ট কম্বল কে বা কারা নিয়েছে, তার তথ্যও নেই কারো কাছে।

Manual7 Ad Code

 

গত ১৫ বছর থেকে সরকারিভাবে বরাদ্ধ হওয়া গরিবের কম্বল খেয়েছে দূর্নীতির ইঁদুর। বিয়ানীবাজারের গরিব-দরিদ্র মানুষের জন্য এসব কম্বল সরবরাহ করা হলেও তা তাদের কাছে পৌঁছেনি। কিছু সংখ্যক জনপ্রতিনিধি নিজের পছন্দের ব্যক্তি-ভোটার, সরকারি দলের রাজনীতিকরা হাতেগোনা কতিপয় দর্লীয় কর্মীর কাছে অতি গোপনে কম্বল তুলে দিতেন। আর কম্বল বিতরণের এই কাজে খবরদারি করতেন রাজনৈতিক বিশেষ এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয়ভাবে পিএস হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিয়ানীবাজারে ৫৭২০ পিস এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৩৯০ পিস কম্বল সরকারিভাবে বরাদ্ধ দেয়া হয়। সে হিসাবে বছরে গড়ে ৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্ধ হলে গত সরকারের টানা মেয়াদের সময়ে তা প্রায় এক লাখ হওয়ার কথা। কিন্তু আগামী প্রজন্ম’র এই প্রতিবেদক ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে কম্বল পেয়েছেন এমন ৯ জন লোকের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমুলক তথ্য পেয়েছেন। তাহলে অবশিষ্ট কম্বল পেল কারা-এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কেউ নেই বিয়ানীবাজারে।

 

Manual1 Ad Code

ত্রাণ হিসেবে একটি কম্বল পেয়েছিলেন চারখাইয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দরিদ্র। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর হয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাঁর হাতে গিয়ে পৌঁছায় কম্বলটি। মন্ত্রণালয়ের ক্রয়সংক্রান্ত নথিতে কম্বলটির যে ওজন, আকার ও মূল্য দেখানো হয়েছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। ত্রাণ হিসেবে কম্বলটি পাওয়ার দুদিন পর এর পরিমাপ করা হয়। এতে দেখা যায় ওজন ১ কেজি; আর ৬ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট চওড়া। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কম্বলটির ওজন দেখানো হয়েছে ১ কেজি ৫০০ গ্রাম। আকার দেখানো হয়েছে ৭ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা আর ৬ ফুট ১ ইঞ্চি চওড়া। ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৬২৫ টাকা। আর ওই ব্যক্তিকে দেওয়া কম্বলটির বাজারমূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি নয় বলে অনেকের দাবি। ত্রাণ হিসেবে কম্বল পাওয়া ব্যক্তি বলেন, ‘আমারে যে চাদর (কম্বল) দিছনই (দিয়েছে), তার দাম ২০০ টাকার ওপরে নায়। বাজারে একই রকম ও একই ওজনের কম্বল বিক্রি অর (হচ্ছে) ২০০-২৫০ টাকা করিয়া।’

 

ত্রাণ হিসেবে গত বছর ও তাঁর আগের বছরের শীতে দুটি কম্বল পেয়েছেন আলীনগরের আব্দুর রহীম। তাঁর একটি কম্বলের ওজন ২৫০ গ্রাম এবং অপরটির ওজন ১ কেজি। আকারেও বেশ ছোট। জানতে চাইলে আব্দুর রহীম বলেন, ‘সরকার যে কম্বল আমারে দিছে, তা নামেই কম্বল। এই কম্বলে শীত মানে না। এটা মূলত: একটা উলের চাদর।’

 

ইউপি সদস্য কবির আহমদ বলেন, ‘শীতে সরকারিভাবে যে কম্বল দেওয়া হয়, তা খুবই নিম্নমানের। গত বছর ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় যে কম্বল বিক্রি হয়েছে, তা সরকারি কম্বলের চেয়ে অনেক ভালো। বিনামূল্যে দেওয়া কম্বল খুবই পাতলা, আর সাইজেও অনেক ছোট। একজনের বেশি থাকা যায় না।’

জানা যায়, সরকারিভাবে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা কম্বল নিয়ে বিয়ানীবাজারের মানুষের অভিযোগ বহু পুরনো। কারণ, এসব কম্বলে শীত নিবারণের মূল উপাদান উলের অস্তিত্ব নেই।

 

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমান খান জানান, সরকার থেকে বরাদ্ধ দেয়া কম্বল আমরা বিতরণ করি। এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ক্রয় করা হয়। ভারী-পাতলা এসব বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code