প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভোট আসে ভোট যায়, বিয়ানীবাজারের উন্নয়ন আর হয় না

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৪:২২ অপরাহ্ণ
ভোট আসে ভোট যায়, বিয়ানীবাজারের উন্নয়ন আর হয় না

Manual3 Ad Code

ছবি: বিয়ানীবাজারের দু’টি গ্যাসকূপ থেকে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ হয়। কিন্তু বিয়ানীবাজারবাসী বঞ্চিত/

 

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:

যখন নির্বাচন আসে, তখন জনগণের চাওয়া-পাওয়া বৃদ্ধি পায়। জনগণ খুঁজতে থাকে, কোন প্রার্থী তাদের চাওয়ার যথোপযুক্ত মূল্যায়ন করবেন। এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করবেন। জনগণের তখন প্রথম ও প্রধান প্রত্যাশা হয়ে দাঁড়ায়, ‘ভোট দেব, উন্নয়ন বুঝে নেব।’ সহজ কথায় বলা যায়, ‘ভোটের বিনিময়ে উন্নয়ন!’ কিন্তু বিয়ানীবাজারবাসী সেই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।

Manual5 Ad Code

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও প্রবাসী অধ্যুষিতবিয়ানীবাজার উপজেলা আজও মৌলিক অবকাঠামো ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে উন্নয়ন বঞ্চনার চক্রে আবদ্ধ। প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাসের এ উপজেলাটি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলেও সড়ক যোগাযোগহীনতা, স্বাস্থ্যসেবার অচলাবস্থা, জরুরি সেবার সীমাবদ্ধতা, পৌরসেবার দুর্বলতা, প্রশাসনে জনবল সংকট, শিল্পকারখানা ও কর্মসংস্থানের অভাব এবং শিক্ষাখাতের অনগ্রসরতা এখানে নিত্যদিনের বাস্তবতা।

 

Manual3 Ad Code

বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ আসন থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বশীল ব্যক্তিরা নির্বাচিত হলেও স্থানীয় উন্নয়ন দৃশ্যমান নয় এমন অভিযোগ বহুদিনের। ঝুকিপূর্ণ শেওলা সেতু, চন্দরপুর সেতুর সংযোগ সড়ক নদী ভাঙ্গনে ঝূকিরমুখে, অনিশ্চিত শিকপুর-বহরগ্রাম সেতু এ অঞ্চলের মানুষকে নতুন করে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে। কদমতলী-শেওলা বন্দর পর্যন্ত ফোরলেন সড়ক নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। সরকারিভাবে কোন খেলার মাঠ যথাযথ করে গড়ে তোলা হয়নি। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে।

 

জানা যায়, মুড়িয়া হাওর বেষ্টিত সীমান্তবর্তী জনপদ বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ আসন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের পর দু্ইবার মন্ত্রী, তত্বাবধায়ক সরকারের দুই জন উপদেষ্ঠা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী উপদেষ্ঠা, অন্তত: ৫ জন সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ এলাকা থেকে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জাতীয় পর্যায়ে মন্ত্রী ও শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয় উন্নয়ন কার্যকরভাবে এগোয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, আমরা ভোট দিই, নেতা জাতীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী হন, কিন্তু বিয়ানীবাজারবাসীর দুঃখ-দুর্দশায় কোনো পরিবর্তন আসে না।

Manual7 Ad Code

 

বিয়ানীবাজারবাসীর বর্ণনায়, সরকারের প্রতিটি মৌসুমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, চিকিৎসা সংকট, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ, হাওরের উন্নয়ন, প্রবাসীদের সুরক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতা যেন বিয়ানীবাজারবাসীর জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সাবেক প্রধান শিক্ষক জিয়া উদ্দিন আহম্মদ বলেন, বিয়ানীবাজারের রাজনীতি এখন অনেকটা পুরোনো নাটকের নতুন মঞ্চায়নের মতো। দৃশ্যপট পাল্টায়, চরিত্র বদলায়, কিন্তু সংলাপ একই থাকে। ক্ষমতায় যে-ই আসুক, সবাই বলে জনগণের পাশে আছি; অথচ সময়ের পরতে পরতে দেখা যায়, সেই জনগণই মঞ্চের বাইরে পড়ে থাকে—তালি দেয়, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কিন্তু গল্পের পরিণতি আর বদলায় না। এখানকার উন্নয়ন লাল ফিতায় বন্ধি থাকে।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কোনো ইউনিয়নেই যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা ভালো নয়। কেবল ইউনিয়ন নয়, কোন একটি গ্রামীণ রাস্তাও চলাচলের উপযুক্ত নয়। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তাই বেহাল। সিলেট নগরী থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার সাথে একমাত্র একমুখি রাস্তাও বিরক্তিকর। সেতু নির্মাণের অভাবে দুই ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ দূর্ভোগে-এমন সংবাদ ছাপা হয়। দূর্ভোগ দূর করতে রাস্তায় নামে মানুষ-এটা বিয়ানীবাজারের উন্নয়নের চিত্র সহজেই ফুটিয়ে তুলে।

 

স্বাস্থ্যসেবার চিত্রও অন্য খাতের মতোই হতাশাজনক। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়ে নতুন ভবন পেলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও নার্সের সংকট কাটেনি। ফলে জরুরি রোগীদের সিলেটে পাঠাতে হয়। মুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, হাসপাতাল আছে, কিন্তু চিকিৎসা নেই। যন্ত্রপাতি কম, ডাক্তার-নার্সের অভাব। আমরা সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকি।

পৌরসভার সেবাও বহুদিন ধরে পিছিয়ে। বিয়ানীবাজার পৌরসভা ১৯৯৯ প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো ডাম্পিং সাইট নেই। শহরের সড়ক ভাঙাচোরা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল; ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। পৌর এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগম বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই হাঁটা যায় না। এত বছর পৌরসভায় থেকেও উন্নয়নের স্বাদ পাইনি। সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য নজরুল হোসেন বলেন, বিয়ানীবাজারের উন্নয়ন বঞ্চনা কাটানোর সুযোগ থাকলেও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা আগ্রহী ছিলেননা।

শিক্ষাখাতেও অনগ্রসর বিয়ানীবাজার। উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব। উচ্চ শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই। সুযোগ থাকলেও এই উপজেলায় গড়ে তোলা হয়নি কোন যুগপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্টান, নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গর্ব করার মত কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানের নাম তালিকায় দেখা যায়নি।

বিয়ানীবাজারের দু’টি গাসকূপ থেকে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষের প্রাণের দাবী স্বত্ত্বেও এই উপজেলা গ্যাস বঞ্চিত। গ্যাসভিত্তিক কোন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয়নি। কর্মসংস্থান তৈরীর জন্য কোন পরিকল্পনা নেই। স্বীকৃত কোন পর্যটন স্পট স্থাপন হয়নি। ব্যাংকে শ’ত-শ’ত কোটি অলস টাকা পড়ে থাকলেও বিনিয়োগে আগ্রহী হননা সংশ্লিষ্টরা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পতিত আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গি ছাড়া এখন অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভোট চাইতে শুরু করেছে। তবে কেবল ‘উন্নয়নের’ দোহাই দিয়ে সেই ভোট মিলবে না বলে মনে করেন সুজন বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন। তিনি বলেন, একটানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বয়ানকে মানুষ ঘৃণার চোখে দেখছে। টানা এই সময়ে জনবান্ধব একটি প্রকল্পও গ্রহণ করতে পারেনি দলটির নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকার।

 

বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি সজীব ভট্রাচার্য বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের মৌসুমে রাজনীতি যেন হঠাৎ করে আবার ‘উন্নয়ন ও জনবান্ধব’ হয়ে ওঠে। তখন জনগণকে নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি, মিছিল, স্লোগান যেন সব কিছুতেই প্রাণ ফিরে আসে। কিন্তু ভোট শেষ হলে সেই সংযোগ আবার হারিয়ে যায়।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code