স্টাফ রিপোর্টার:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফশিল ঘোষণাকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিনের জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ আগামীকাল বুধবার রেকর্ড হবে। এজন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেতারকে ডেকেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সোমবার এ সংক্রান্ত চিঠি দুই প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। তপশিল ঘোষণার আগে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি। একই সঙ্গে বৈঠক করবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। তবে যেদিন সিইসির ভাষণ রেকর্ডিং হয়, সাধারণত সেইদিন রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তপশিল ঘোষণা করা হয়। সেই হিসেবে আগামীকাল বুধবার তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে, নির্বাচনে দুই ধাপে ৮১টি দেশীয় সংস্থাকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। আমরা কোনো অনাস্থা নিয়ে আসিনি। ইসির ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’
বাংলাদেশ টেলিভিশন-বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারে সিইসির ভাষণ রেকর্ড প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর সিইসি বিটিভি ও বেতারের জন্য তফসিলসংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করবেন। ভাষণের বিষয়বস্তু ও রেকর্ডিংয়ের নির্দিষ্ট সময় সিইসি নিজেই নির্ধারণ করবেন। তিনি আরো জানান, রেকর্ডিংয়ের তারিখ ঠিক হলেও ভাষণের বিষয়বস্তু বা সময় এখনো সচিবালয় জানে না। সিইসি সিদ্ধান্ত দিলেই তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাতের সময়সূচিও এখনো ঠিক হয়নি, তবে মঙ্গলবার তা জানানো হতে পারে। বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, বিকাল সাড়ে ৪টায় সাক্ষাত্ হতে পারে। আর আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করবে ইসি কমিশন। গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন সিইসি ও কমিশনারগণ।
বিটিভি ও বেতারকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সিইসি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, যা উভয় মাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। রেকর্ডিংয়ের সময় ঠিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিটিভিকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডিং টিম প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। রেকর্ড করা ভাষণ নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে প্রচারের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, তপশিল ঘোষণার পর পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও সচিব বিস্তারিত জানান। তিনি জানান, তপশিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ও আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধন করতে হবে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসারসহ নির্বাচনি দায়িত্বে মাঠে থাকা সদস্যদের নিবন্ধনের সময় পরে নির্ধারিত হবে। এসব ছাড়া অন্য যোগ্য ভোটারদেরও ১৫ দিনের মধ্যেই নিবন্ধন শেষ করতে হবে।
ইসির নিবন্ধন পেল ৮১ পর্যবেক্ষক সংস্থা :এদিকে, আসন্ন নির্বাচনে দুই ধাপে ৮১টি দেশীয় সংস্থাকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখা থেকে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ৭৩টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রাথমিক তালিকা ধরে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ইসি। এগুলোর বিরুদ্ধে যে কোনো দাবি, আপত্তি বা অভিযোগ ২০ অক্টোবরের মধ্যে কমিশন সচিবের কাছে লিখিতভাবে জানানোর সময় দেওয়া হয়। পাশাপাশি অভিযোগের সপক্ষে সহায়ক প্রমাণও দেয়ার নিদের্শনা ছিল। কয়েকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় সেগুলো বাদ দিয়ে ৬৬ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম চূড়ান্ত করেছিল এবং নিবন্ধন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে যাচাই-বাছাই করে আরো ১৫ পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ১৫ সংস্থাকে চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি—জামায়াত : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে তপশিল চূড়ান্তের প্রস্তুতি চললেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সুনিশ্চিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছে জামায়াত ইসলামী। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রমাণ আমরা উনাদের সামনে তুলে ধরেছি। সুনির্দিষ্টভাবে এসব ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা মাঝে মাঝে খুব গুরুতর অবনতি দেখছি। একটা দলের সভার ওপরে অন্য দলের হামলার ঘটনা ঘটছে। নারীরাও গণসংযোগে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ শুনতে জাতি অপেক্ষা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নামে যে অভিযান চলছে সেটিকে আরো কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন—এ বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ আলোচনায় এ বিষয়টি ছিল না। তবে আমরা আগে আলোচনা করেছি। কেউ কেউ নানান ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে যে কথা বলেছেন। দলের কোনো ব্যাংক হয় না, দলের মালিকানায় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকে না। রাজনৈতিক বিতর্ক তুলতে এই ইস্যুটা একসময় আলোচনায় এসেছিল। তারা (ইসি) নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আছে এমন কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ দেবেন না।
রাজনৈতিক নেত্রীর অসুস্থতার কারণেও নির্বাচন পেছানোর শঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনো আশঙ্কা করি না। কারণ নির্বাচন একটা ভিন্ন জিনিস। এটা সাংবিধানিক, আইনগত বিষয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে ইসি থেকে কী বলা হয়েছে? এমন প্রশ্নে জামায়াতের এই নেতা বলেন, উনারা এ বিষয়ে কথা বলেননি। তবে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গা, কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছি।
Sharing is caring!