প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বাজার থেকে আবার উধাও সয়াবিন তেল

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ণ
বাজার থেকে আবার উধাও সয়াবিন তেল

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন, পাম অয়েলের বাজার স্থিতিশীল। দেশেও যে পরিমাণে সয়াবিন, পাম অয়েল আমদানির পাশাপাশি পাইপ লাইনে রয়েছে তাতে আসন্ন রমজানে সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রমজানের এক মাস আগেই ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সেই পুরোনো পথে হাঁটছেন।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, খুচরা বাজারে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এই অবস্থা। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রতি বছরই মিলাররা রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য একই কাজ করে। পাইকারি, ডিলার ও খুচরাবাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও একই পথে তারা হাঁটছেন বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে ভোজ্য তেলের দর স্থিতিশীল রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ভ্যাট ছাড় দিয়েছে। কিন্তু এখন মিলাররা তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিনের বৈঠক হয়। তবে সে বৈঠকে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

Manual2 Ad Code

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত চেয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে সরকার একটি নীতিমালা করে। নীতিমালা অনুযায়ী, সয়াবিন তেলের দাম সময়ে সময়ে বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা। বর্তমানে ডলার ও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা সরকারের নীতিমালা মেনেই দর সমন্বয় করতে বলেছি।

উল্লেখ্য, মাত্র দুই মাস আগে গত ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম সমন্বয় করেছে। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি আট টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া, বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮১৮ থেকে বাড়িয়ে ৮৬০ টাকা করা হয়। কিন্তু এখন আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেছেন, আসন্ন রমজানে তেলের দাম বাড়বে না।

Manual7 Ad Code

এদিকে প্রস্তাব অনুযায়ী দর সমন্বয়ের আগেই বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। ফলে পণ্যটির দাম বাড়তি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের প্রতিবেদনে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুচরা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, তারা চাহিদামতো সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না। কোম্পানিগুলো ঠিকমতো তেল দিচ্ছে না। তারা বলেন, ডিলারদের পাঁচ কার্টন তেল অর্ডার দিলে এক থেকে দুই কার্টন পাওয়া যায়। ফলে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

রাজধানীতে ভোজ্য তেলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। কিছুটা সংকট রয়েছে। মিলাররা বলছেন, ১৫-২০ দিনের মধ্যে সয়াবিন চলে আসবে। তখন সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে আড়াই লাখ টন তেল দেশে উত্পাদিত হয়। বাকি ২০ থেকে ২১ লাখ টন ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন।

Manual7 Ad Code

জানা গেছে, সরকার রমজানে পণ্যটির দাম বাড়াতে চাইছে না। সেজন্য রোজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রেখেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান বলেন, দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই। বর্তমান দরেই সয়াবিন বিক্রি করতে হবে।

Manual7 Ad Code

সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন বলেছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের যে দাম দেখছি, তাতে দেশে দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। একই অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থায় আমাদের সহযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা থেকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থায় যেতে হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code