প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শিল্পকারখানার চিত্র ও গ্যাস-বিদ্যুতের অচলাবস্থা!

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ণ
শিল্পকারখানার চিত্র ও গ্যাস-বিদ্যুতের অচলাবস্থা!

Manual6 Ad Code

সম্পাদকীয়:
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হইল বেসরকারি খাত। অথচ সর্বশেষ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একের পর এক মামলা, শিল্পকারখানা ভাঙচুর, দখল ও শ্রমিক অসন্তোষের ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা যে ভয়াবহ সংকটে পতিত হইয়াছেন, তাহার প্রভাব আজ সর্বত্র দৃশ্যমান। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অনেকে দেশ ছাড়িতে বাধ্য হইয়াছেন, কারখানাগুলি বন্ধ হইয়া পড়িয়াছে, আর যাহারা দেশে রহিয়াছেন তাহারা মামলার খড়ুগ ও হয়রানির ভয়ে পুঁজি বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হইতেছেন। ইহাতে শিল্প খাতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা পূরণ করিতে পারিলে উত্তম; কিন্তু তাহা সামলাইতে না পারিলে বিনিয়োগ হ্রাসের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পড়িবে কর্মসংস্থানে। বাস্তবেও দেখা যাইতেছে, এখন নূতন কর্মসংস্থানের পরিবর্তে বেকারত্ব বাড়িতেছে।

ইতিপূর্বে বিভিন্ন সহিংসতায় চার শতাধিক পোশাক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে; কেবল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হইয়াছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবৎসরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশে বেকারত্বের হার বাড়িয়া ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে পৌঁছাইয়াছে। বর্তমানে বেকারের সংখ্যা দাঁড়াইয়াছে প্রায় ২৭ লক্ষ ৩০ হাজারে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমে গিয়াছে ৭ শতাংশের নিচে, যাহা গত ২২ বৎসরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইহা ছাড়া এলসি খোলা কমিয়া গিয়াছে ২৫ শতাংশ। ঋণ নেওয়াও কমিয়াছে। অর্থনীতিবিদগণ স্পষ্ট করিয়াছেন, স্থিতিশীল সরকার না আসিলে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিবে না, বিনিয়োগও বাড়িবে না। ফলে প্রবৃদ্ধির হার ইতিমধ্যেই নামিয়া আসিয়াছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এই তথ্যাবলি ইঙ্গিত করে-অর্থনীতির চাকায় আশানুরূপ গতি ফিরাইবার পথ এখনো সুদূর।

Manual1 Ad Code

শিল্পের এই মন্দাভাবকে বহুগুণে বাড়াইয়া তুলিতেছে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট। নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাতটি ইউনিটই তিন মাস ধরিয়া বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ৬১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হইয়াছে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় গ্যাসের তীব্র সংকটে শিল্পকারখানা পর্যন্ত অচলাবস্থায় পতিত। গ্যাস-সংকটে পোশাক, সিরামিক ও সিমেন্ট খাতের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমিয়া গিয়াছে। উৎপাদকরা বাধ্য হইয়া অধিক সময় ধরিয়া জেনারেটর চালাইতেছেন, ফলে খরচ বাড়িতেছে বহুগুণে। সার কারখানাগুলিতেও উৎপাদন ব্যাহত, সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দীর্ঘ লাইন এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সাধারণ ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় আরো জটিল হইতেছে।

Manual1 Ad Code

অর্থনীতির এই জটিল সংকটের মূল কারণ হইল আস্থার অভাব। মামলা-হয়রানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের ভয় ও সংশয়ের জন্ম দিয়াছে। উদ্যোক্তারা নূতন কারখানা খুলিবার সাহস পাইতেছেন না, বরং পুরাতন অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করিতে বাধ্য হইয়াছেন। আবার জ্বালানি ঘাটতি শিল্পের চাকায় ব্রেক টানিয়া ধরিতেছে। ফলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের এই ত্রিমুখী সংকটে অর্থনীতি প্রবল ধাক্কা খাইতেছে। ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে সরকারের প্রতি দাবি তুলিয়াছেন-সকল ধরনের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করিতে হইবে, ব্যবসায়ীদের নির্বিঘ্নে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হইবে এবং নীতিনির্ধারণে হঠাৎ পরিবর্তন আনা হইবে না। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি ও কার্যকর সংলাপের মাধ্যমেই আস্থা ফিরাইয়া আনা সম্ভব। ইহার পাশাপাশি গ্যাস-সংকট নিরসনে তৎপর হইতে হইবে। আপৎকালীন এলএনজি আমদানি এক সময়িক সমাধান দিতেছে বটে; কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে টিকসই পথ খুঁজিয়া না পাইলে সংকট দিনদিন প্রকট হইবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি নিহিত রহিয়াছে শিল্প ও কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণে। অথচ বর্তমানে মামলা-হামলা, গ্যাস-বিদ্যুতের অচলাবস্থা ও বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে এই শক্তি ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু হইতেছে। আজ যদি আস্থা ফিরানো না যায়, তাহা হইলে সামনে অর্থনীতির জন্য আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করিতেছে। একটি দেশের স্বাধীনতার অর্থ হইল জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি। আর সেই মুক্তির চাবিকাঠি হইল কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবর্তে যদি কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হইতে থাকে, তাহা হইলে রাষ্ট্রের মৌলিক অর্জনই বিপন্ন হয়। অতএব ঢালাও মামলা-হয়রানির অবসান, জ্বালানি খাতে টিকসই সমাধান এবং বিনিয়োগের অনুকূল আবহ সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। তবে এই ক্ষেত্রেও আমরা ধৈর্য ধারণের কোনো বিকল্প নাই বলিয়া মনে করি।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code