প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বছরজুড়ে শিক্ষায় অস্থিরতা, শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই ‘বিজয়’

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
বছরজুড়ে শিক্ষায় অস্থিরতা, শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই ‘বিজয়’

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
গণঅভ্যুত্থানের বছর ২০২৪। বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক, অনন্য, অসাধারণ, অভূতপূর্ব একটি বছর। বিশ্বে বিস্ময় জাগানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছেন তরুণরা। বহু ত্যাগের বিনিময়ে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন শিক্ষার্থীরাই। স্বাভাবিকভাবে আলোচিত বহু ঘটনার কেন্দ্রে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আগের ছয় মাসেও শিক্ষাখাতে আলোচিত নানান ঘটনা দেখা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলোচিত মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সরিয়ে দেওয়া, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন, পাঠ্যবই বিতরণে দেরি, পাঠ্যবই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, সর্বজনীন পেনশন বাতিলে শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতির মতো ধাক্কা শিক্ষা প্রশাসনকে সামাল দিতে হয়েছে।

তবে জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে সহিংসতা ও গণহত্যা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে পরিচালিত হয়, তা ইতিহাসের নৃশংস বর্বরতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যে নৃশংসতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। গড়ে ওঠে ‘হাসিনা হটাও’র এক দফার আন্দোলন। ৫ আগস্ট সেই এক দফা বাস্তবায়নও করেন শিক্ষার্থীরাই। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

Manual7 Ad Code

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরও শান্ত হয়নি শিক্ষাঙ্গন। তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া, আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা, উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ‘মব জাস্টিস’র নামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাড়তে থাকে ক্ষোভ। তাছাড়া শিক্ষাপ্রশাসনেও ওলট-পালট করায় কার্যক্রমে দেখা দেয় স্থবিরতা।

Manual1 Ad Code

শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ডা. দীপু মনির আমলে (২০১৯-২০২৩) ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নতুন শিক্ষাক্রম, শিক্ষা প্রশাসনে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কলেজের অধ্যক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল দীপু মনির বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গঠিত শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদে তাকে রাখা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। তার স্থলে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি দীপু মনির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী ছিলেন। তবে নওফেলের দায়িত্ব নেওয়ায় শিক্ষায় সুশাসন ফেরেনি। উল্টো আগের চেয়েও ঘুস-দুর্নীতি, দলাদল ও দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উল্টা-পাল্টা সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অভিভাবকরা। তিনি শিক্ষাঙ্গনে ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করেন। সবমিলিয়ে নওফেলের সাত মাসের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শিক্ষাপ্রশাসন।

২০২৪ সালে বছরের শুরুর দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে সব পাঠ্যবই দিতে ব্যর্থ হয় সরকার। সবার হাতে সব বই পৌঁছাতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে নিম্নমানের কাগজ, কয়েক কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। তাছাড়া বইয়ে থাকা বিভিন্ন গল্প-কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে বিতর্কিত ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। বাধ্য হয়ে কমিটি করে সেই গল্পটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ রাতে হঠাৎ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বুয়েটে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতারা। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। আদালত ছাত্ররাজনীতির পক্ষে রায় দেন। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। বুয়েট কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধই রয়েছে বুয়েটে।

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করায় আন্দোলনে নামেন দেশের ৫৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। টানা ১৬ দিন কর্মবিরতি করেন তারা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নওফেলও শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সঠিক নয় বলে জানান। এর মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সরকার তড়িঘড়ি শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে হঠাৎ সব দাবি মেনে নেন। তবে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে রাস্তায়ই ছিলেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাতিল করা হয়। কোটা বাতিলে সরকারের সেই প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ৬ জুন তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ৬-১০ জুন পর্যন্ত তারা প্রথম পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন। মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি শুরু হয়। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালান শিক্ষার্থীরা। ৩০ জুন থেকে শুরু হয় বড় কর্মসূচি। তাতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের পর ৭ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। অন্যদিকে পাল্টা অবস্থান নিতে শুরু করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। ৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর নৃশংস হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ শহীদ হন। একই দিন আরও কয়েকজন মারা যান। এরপর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।

Manual3 Ad Code

১৭ জুলাই রাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সারাদেশে ইন্টারনেট সেবাও শাটডাউন করে সরকার। ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই কারফিউ ভেঙে সারাদেশে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। ২২ জুলাই সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা। ক্রমে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। দমন-পীড়নের মধ্যেও রাজপথ দখলে নেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শেখ হাসিনার পতনের এক দফা ঘোষণা করা হয়। ৪ আগস্টও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকেন। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে লাখো জনতা রাজধানীতে আসেন। ওইদিন দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে সংকট তৈরি হয়। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানায় থাকা পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন পরীক্ষা স্থগিত থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিল করে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে দাবি আদায় করেন। এতে অর্ধেক বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। তবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল প্রকাশের পরও শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ অসন্তুষ্টি জানায়। তারা অটোপাস দেওয়ার দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন। এমনকি শিক্ষা বোর্ডে ভাঙচুরও চালান। তবে ফেল করা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হালে পানি পায়নি। সরকার তাদের দমন করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়।
শিক্ষাক্রম বাতিলের ‘ধাক্কা’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের আপত্তি দীর্ঘদিনের। সরকার পতনের পর তারা দ্রুত শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি তোলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১ সেপ্টেম্বর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে। একই সঙ্গে ২০১২ সালে প্রণীত সৃজনশীল শিক্ষাক্রমে সাময়িকভাবে ফেরার কথা জানায়। ফলে শিক্ষার্থীদের মাত্র দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষায় বসতে হয়। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। যদিও নামমাত্র পরীক্ষা নিয়েই বছর পার করেছে শিক্ষা প্রশাসন।

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দেয়। পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় বাড়তে থাকে অপরাধ। সারাদেশে পিটিয়ে হত্যার নৃশংসতা দেখা দেয়। সেগুলো ‘মব জাস্টিস’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাও দেখা যায়। তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনটি পিটিয়ে হত্যার নৃশংসতা উচ্চ শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করে।

Manual3 Ad Code

সেসময় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে দেশের শীর্ষ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত তিনটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডে। সেগুলো হলো—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা এবং সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জেলকে হত্যার ঘটনা ঘটে। মাসুদ ও শামীম মোল্লা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তোফাজ্জেল ছিলেন নিরীহ যুবক। তাকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় তেমন কোনো আইনি পদক্ষেপও চোখে পড়েনি।

টানা প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উপাচার্য, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের চেয়ারেও ছিলেন দলটির অনুসারীরা। হঠাৎ শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিপাকে পড়েন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও। পেশাজীবী হলেও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে তাদের পড়তে হয়। তবে শিক্ষার্থীদের সেই বিক্ষোভ ও পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর প্রক্রিয়া ছিল দৃষ্টিকটু। সেখানে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রথম দিকে সরকার বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকলেও পরে দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঠেকানোর চেষ্টা করে। তবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরজুড়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো শিক্ষকদের পদত্যাগ করানোর লাঞ্ছনার ঘটনায় কলুষিত হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর ক্লাস-পরীক্ষা চলেছে ঢিমেতালে। কয়েক মাস শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো সম্ভব হয়নি। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাও ছিল ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ মনে করা। এমন পরিস্থিতিতে তুচ্ছ ঘটনায় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আরেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধানমণ্ডির আইডিয়াল ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে হতাহত হন। সর্বশেষ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়ে দফায় দফায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পূর্বঘোষণা দিয়ে মারামারিতে জড়ালেও পুলিশকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।

শিক্ষাপ্রশাসনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নিজেদের লোক বসিয়ে সাজিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পদে পদে চলেছে দুর্নীতি-অনিয়মও। গড়ে ওঠে বহু সিন্ডিকেট। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চক্র সরিয়ে নতুন করে শিক্ষাপ্রশাসন ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান-সদস্য, মাউশির মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ইউজিসির চেয়ারম্যান-সদস্য, পিএসসির চেয়ারম্যান-সদস্য পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়। তাছাড়া ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ নতুন প্রশাসন নিয়োগ করে সরকার। অসংখ্য কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে রদবদল করা হয়েছে। ফলে একযোগে শিক্ষা প্রশাসনের সব জায়গায় নতুনরা এসেছেন। এতে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষাখাত। নতুনরা কাজ বুঝে না ওঠায় সেই স্থবিরতা সহসাই কাটছে না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code