প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

মৃত ব্যক্তি কি আত্মসমালোচনা করার সুযোগ পাবে ?

editor
প্রকাশিত মে ২৭, ২০২৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
মৃত ব্যক্তি কি আত্মসমালোচনা করার সুযোগ পাবে ?

এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
বিজ্ঞানের ভাষায় জীবনের সংজ্ঞা বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। অধিকাংশ বিজ্ঞানী প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পর থেকে ৩২ বছর এর প্রতি একমত পোষন করেছেন। সেই সংজ্ঞাকে প্রাদান্য দিয়ে মাননীয় আদালতযেকোন ব্যাক্তি দোষী হলে তাহাকে যাবতজ্জীবন (৩২) বছরের শাস্তি প্রদান করতে থাকেন। জীবিত ব্যাক্তিকে মৃত ব্যক্তির জানাযায় গিয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্য বলে থাকেন, “কুল্লু নাফসিন যা ইকাতুল মউত” অর্থাৎ প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করিতে হইবে। কিন্তু বক্তা বা উপস্থিত মুসল্লির বডি ল্যাংগুয়েজ থেকে অনুমান করা যায়, বললাম তো মুসল্লিগণ আমল করুক। বাস্তবে জানাযা থেকে কেহ কিছুই শিখলাম না। মরতে হবে জানি, কিন্তু আত্মসমালোচনা বা সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে তা কিন্তু মানি না। মানুষের উচ্চতা হয়ত ৫-৬ ফিট। আল্লাহ শরীর কে এমন ভাবে অঙ্গঁপ্রত্যঙ্গঁ দিয়ে সৃষ্টি করে শ্রেষ্টত্বদান করেছেন, যাহাতে শান্তিতে স্বাভাবিক জীবনটাকে উপভোগ করা যায়। কল্পনা কি একটি বার করেছেন, স্বাভাবিক প্র¯্রাব যদি বন্ধ হয়ে যায় কোন ঔষধে ভাবে কাজ হচ্ছে না। তখন যদি প্রশ্ন করা হয়, হাজার কোটি টাকা বনাম প্রস্রাব কে স্বাভাবিক করা ? কোনটি বেছেঁ নিবেন। স্বাভাবিক প্রস্রাব নিষ্কাষনকে গ্রহন করিবেন। এখান থেকে কি শিক্ষা নেওয়া যায় না ? চাইলে নিতে পারেন। যেহেতু হাজার কোটি টাকা প্রত্যাখ্যান করলেন সেহেতু এই হাজার কোটি টাকা উপার্জন করতে হলে, অন্যায়, অভিচার, ভ্যাবিচার, দুর্নীতি,ঘোষ, সুদ, অরাজকতা ইত্যাদির আশ্রয় নিতেই হবে। উপার্জিত সম্পদ কি পশ্রাব স্বাভাবিক করনে কোন কাজে আসে নাই। হয়ত উপার্জিত টাকা দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য বাচঁতে পারেন। এটা কিন্তু অতি কষ্টের। যাহারা ডায়ালগ আমাদের করে কিছু দিন বেচে থাকেন, তাহাদের নিকট থেকে এই চিকিৎসা কত কষ্টের এবং ব্যয়বহুল তা জেনে নিতে পারেন। আল্লাহ যদি স্বাভাবিক ব্যবস্থায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করেন, তখন কি মন খোলে শুকরিয়া আদায় করেছেন। না, শুকরিয়া আদায় করেননি। করলে কিন্তু এই হাজার কোটি টাকা উপার্জনের জন্য কোন অন্যায় বা ব্যাভিচারকে প্রশ্রয় দিতেন না। আর প্রশ্রয় না দিলে সমাজে কোন ধরনের অপরাধ প্রবণতা থাকবে না। আর এই অপরাধ প্রবণতা কমে গেলে জীবনটা শান্তিপূর্ণ হবে এবং পরকালে আল্লাহ চাইলে অনন্তকালের জন্য শান্তিময় জীবন দিবেন। প্রত্যেকটা প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তির জন্য আল্লাহ ওয়াদাবদ্দ।

অবৈধ পথে হাজার কোটি টাকা অর্জন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ২০২৪ সালের গণ অভ্যুস্থানের পর। তাহাদের অর্জিত সম্পদ ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী বা অন্য কোন আপনজন গ্রহন করিতেছেন না। ভেবে দেখুন এই চুরি চামারির জন্য সমাজে তাহারা লজ্জিত, অসম্মানীত, অবহেলিত। অন্যায় করলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ জীবন যাপনের জন্য। কিন্তু তাহারা প্রত্যাখ্যান করলেন।

আজিমপুর,বনানী কবরস্থানে যাহাদেরকেই সমাহিত করা হইয়াছে তাহাদের নাম ফলকে কেহ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব বা খ্যাতি সম্পূর্ন ব্যাক্তি লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। তাহাদেরকে সমায়িত যে ভাবে করা হইয়াছে সেই মাটিতেই সাধারন মানুষকে হয়ত জেলা প্রশাসককের মালিকানাধীন বা পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হইয়াছে। হাজার হাজার মানুষ এই অল্প জায়গায় সমাহিত করা সম্ভব। এখানে কোন মিছিল মিটিং হরতাল, অবরোধ, সীমানা বিরোধ, ঘুষ দুর্নীতি, ইত্যাদি কি কেহ করিতেছেন? না করেননি। দুনিয়াবি জিন্দেগীতে যদি কোন নেক সন্তান বা ভাল কোন কাজ করে থাকেন, তাহলে কবরের পাশে গিয়ে বারবার কান্না জড়িতে কন্ঠে কায়মানো বাক্যে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। “রাব্বির হামুমা কামা রাব্বায়েনি সগিরা” অথবা ভাল কাজের জন্য কবরের জীবনকে শান্তিময় করে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করিতে পারে। সুতরাং জীবিত ও সুস্থ থাকতে থাকতে নিজে নিজেকেই আত্মসমালোচনা করুন। যেনে রাখা ভাল, কর্মময় জীবনের হিসাব রাখার জন্য আল্লাহ ২ জন ফেরেশতা কে আমলনামা লিপিবদ্ধ করনের জন্য ডান আর বাম কাদে বিনাবেতনে অনন্তকালের জন্য দিয়েছেন। সুতরাং, লুকিয়ে বা মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়ার সুযোগ নেই। মৃত্যুবরনের পর সেই আত্মসমালোচনা বা কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

লেখক: সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন). বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবা: ০১৮১৯-১৭৩২১৭

Sharing is caring!