প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শাহজাহান কমর: স্মৃতির আঙ্গিনায় প্রিয় মুখ

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ
শাহজাহান কমর: স্মৃতির আঙ্গিনায় প্রিয় মুখ

Manual1 Ad Code

 

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী :

শাহজাহান কমর। সাংবাদিক, কবি ও ছড়াকার। ভদ্র, নম্র, সদালাপী ও হাসিমুখের মিশুক একজন মানুষ। সিলেট শহরে এক সময় ছিলেন অত‍্যন্ত পরিচিত ও আপনজনের মতো। সাহিত‍্যের মাঠে যেমন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ এক নাম।

জাতীয় শিশু-কিশোর ও যুব কল‍্যাণ সংগঠন চাঁদের হাট সিলেট শাখা ও ছড়া পরিষদ, সিলেট-এর কার্যক্রমে তার সক্রিয় উপস্থিতি ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আজও মনে পড়ে। দুটি সংগঠনেরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ) তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। জৈন্তাবার্তা, সিলেট বাণী ও আজকের সিলেট-পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতার কাজ করেছেন। সব সময় হাসিখুশি, আড্ডা প্রিয় এবং প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন আমাদের প্রিয় জন কমর ভাই।

জাতীয় শিশু-কিশোর ও যুব কল‍্যাণ সংগঠন চাঁদের হাট সিলেট শাখার উদ‍্যোগে সিলেট অডিটোরিয়ামে সাহিত‍্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের বিশাল আয়োজন করা হয়। চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, প্রখ‍্যাত ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই, বিশিষ্ট শিশু সাহিত‍্যিক আলী ইমামসহ কেন্দ্রীয় চাঁদের হাটের অনেকেই ঢাকা থেকে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। সেই উৎসবে আমাদের সঙ্গে প্রাণবন্ত পরিশ্রম করেন কমর ভাই।

সিলেট থাকাকালীন সময় তার সঙ্গে আমার ছিল গভীর সখ্যতা। প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো। কখনো পত্রিকা অফিসে, কখনো চায়ের আড্ডায়, কখনো সাহিত‍্যের সভা কিংবা ছড়ার আসরে। তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিলেট শহরের কুমারপাড়ায় একটি বইয়ের দোকান চালাতেন। কমর ভাই রুটিন মাফিক সময় সেখানেও বসতেন।

এছাড়াও ছড়া পরিষদ-এর প্রাণকর্মী ছড়াকার-সংগঠক মরহুম আব্দুল মালেক রানার সাত্তারিয়া রেষ্টুরেন্টে প্রায়ই বসতো আমাদের জমজমাট আড্ডা। সেখানে রং চা ও গরম পিয়াজু খেয়ে খেয়ে হাসি খুশি গল্প চলতো। চলতো লেখালেখি নিয়েও সরব আলোচনা। মাঝে মাঝে সেই আড্ডায় কমর ভাইও শরীক হতেন। আমাদের বৈকালিক আড্ডা ছিল জিন্দাবাজারের প্রীতিরাজ রেষ্টুরেন্টে। যা বেশিরভাগ সময়ই রাত পর্যন্ত চলত। কমর ভাইও আসতেন সুযোগ পেলেই সেই আড্ডায়। আড্ডা শেষে সন্ধ‍্যার পর দেখা যেত থাকে দৈনিক পত্রিকার টেবিলে ব‍্যস্ত সময় কাটাতে। একজন দক্ষ ও দায়িত্ববান সাংবাদিক হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল।

Manual2 Ad Code

একদিন ছড়া পাঠের আসর শেষে প্রবল বৃষ্টির মধ‍্যে আম্বরখানা বড় বাজারে দৈনিক আজকের সিলেট-এর অফিসে নিউজ নিয়ে হাঁটুজল ভেঙ্গে আমি কমর ভাইয়ের টেবিলের পাশে যেতেই বলে উঠেন, ‘এই বৃষ্টির মধ্যে আপনি নিউজ না নিয়ে এসে টেলিফোনে আমাকে দিতে পারতেন। আসলে আমাদের প্রতি তার প্রচন্ড ভালোবাসা ছিল বলেই তিনি এমন কথা বলেছিলেন। সিলেট বিভাগের আন্দোলনের সময় ছড়া পরিষদের ছড়া পাঠের আসর বসে। সেখানে ছড়াকার বন্ধুদের ছড়া পাঠে উজ্জীবিত আমরা। সিলেট বিভাগ দাবি নিয়ে ছড়া পাঠ করছেন উপস্থিত সকলেই। চোখ থেকে ঝরঝর পানি ঝরছে টিয়ারগ‍্যাসের ধোঁয়ায়। সেখানেও কমর ভাই আমাদের সাথে।

Manual2 Ad Code

শাহজাহান কমর ভাই এক সময় কর্মসূত্রে ঢাকায় চলে যান। প্রথমে বাংলা বাজার পত্রিকা, পরে আমাদের সময় পত্রিকায় যোগ দেন। আমাদের সময়ে তিনি মফস্বল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা থেকেও তিনি আমাদের খবরাখবর রাখতেন। সিলেটের বাড়িতে আসলে সময় সুযোগে ধোপাদিঘীর পূর্ব পাড়ে আমাদের বাসায় চলে আসতেন। সহজ-সরল হাসিমাখা মুখ, বন্ধু বৎসল আচরণ-এ সবই ছিল তার সহজাত বৈশিষ্ট্য।

আমি আমেরিকায় চলে আসার পরেও তার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছে। তিনি সব সময় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন সিলেটি ভাষায় কথা বলার অনুরোধে মজা করে হেসে বলতেন, ঢাকায় থাকার ফলে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেই অভ‍্যস্ত হয়ে গেছেন।

ছড়া পরিষদে যুক্ত থাকার সময় আমরা কয়েকজন মিলে এক খামে ছড়া পাঠাতাম ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায়। পাশাপাশি ছাপা হতো আমাদের লেখা। সে ছিল এক অনন্য আনন্দ। কমর ভাইও ছিলেন আমাদের ছড়া সাহিত্যের মিছিলে একজন স্বতঃস্ফূর্ত সাথী।

ঢাকায় গেলে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় কমর ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলে বেশ আদর- আপ‍্যায়ন করতেন এবং সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ কর্মরত সকল সাংবাদিকের সাথে পরিচয় করে দেন। সেই সময় বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলা চলছিল। মহান ভাষার মাস ফ্রেব্রুয়ারি। শুক্রবার আমাদের সাথে সঙ্গ দেন কমর ভাই। তা যেন আজ শুধুই স্মৃতি।

ছড়া পরিষদ, সিলেট ও চাঁদের হাট সিলেট শাখার সেই সোনালি দিনগুলো আজও মনে নাড়া দেয় ভীষণভাবে।মনে পড়ে সেই সময়ের প্রিয় মুখগুলো। স্মৃতির এ‍্যালবামে যত্ন করে রাখা এ প্রিয় মুখগুলো ভালোবাসার বাঁধনে বুকের মাঝে আছে আত্মার আত্মীয় প্রিয়জন-স্বজন।

সেদিন হঠাৎ তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মর্মাহত হয়ে গিয়েছিলাম ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্মৃতির পাতা খুলে একের পর এক মনে ভেসে উঠে স্মৃতি। বার বার চোখে ভেসে উঠে তার সেই হাসিখুশি মুখ। শাহজাহান কমর ভাই নেই- মনে বড্ড কষ্ট হয়। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন তার কর্ম- কাজে।

আমাদের স্মৃতিতে,আমাদের ভালোবাসায়,আমাদের সাহিত্যে।

Manual3 Ad Code

লেখক: ছড়াশিল্পী, শিশু সাহিত্যিক, সাবেক সভাপতি ছড়া পরিষদ সিলেট

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code