প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

অভিবাসন নিয়ে দু:সংবাদ দিল পর্তুগাল

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২৪, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ণ
অভিবাসন নিয়ে দু:সংবাদ দিল পর্তুগাল

Manual5 Ad Code

নিউজ ডেস্ক:
অভিবাসী কর্মীরা এখন থেকে কাজের ভিসা ছাড়া পর্তুগালে যেতে পারবেন না। কেউ গেলে পরবর্তী সময়ে তার নিয়মিত হওয়ার সুযোগ মিলবে না। দেশটির অর্থনীতিতে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

হঠাৎ করে ও অপ্রত্যাশিতভাবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্তুগাল। যার কারণে অনিয়মিত পথে যাওয়া অভিবাসী কর্মীরা কাজের ভিসার জন্য আবেদনরত অবস্থায় দেশটিতে আর থাকতে পারবেন না। দেশটির অভিবাসনবিষয়ক নীতির প্রধান ও উপমন্ত্রী রুই আর্মিন্দো ফ্রাইটাস বলছেন, এই পরিবর্তন ইউরোপীয় বিধি-বিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কিন্তু এনজিও প্রতিনিধিরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করা ডানপন্থী শক্তির চাপেই সরকার দেশটির অভিবাসননীতিকে কঠোর করেছে।

Manual5 Ad Code

ফ্রাইটাস বলেছেন, অনিয়মিত পথে দেশে ঢোকার সুযোগ এবং তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে অনেক অনিয়মিত অভিবাসী শ্রমিক পর্তুগালের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। এই সুযোগটি দ্রুত বন্ধ করা উচিত। কারণ অভিবাসন সংস্থা এআইএমএ জানিয়েছে, এখনো নিয়মিতকরণ বিষয়ক প্রায় ৪০ হাজার আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় থাকা আবদেনগুলোর মধ্যে অনেকগুলো জমা হয়েছে অন্তত দুই বছর আগে। এই ব্যাকলগ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করা উচিত। বহু বছর ধরে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি।’

অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসী শ্রমিক
জুন থেকে যেসব অভিবাসী শ্রমিক পর্তুগালে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের দেশটিতে বসবাসের অনুমতি বা রেসিডেন্স পারমিটের জন্য বিদেশে অবস্থিত পর্তুগিজ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে আবেদন করতে হবে। এই শর্ত অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। কারণ যেসব দেশ থেকে অভিবাসী কর্মীরা পর্তুগালে যান, তেমন অনেক দেশেই পর্তুগালের দূতাবাস বা কনস্যুলেট নেই।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেপাল বা বাংলাদেশের কথা। এসব দেশ থেকে কৃষি ও ফসল কাটার কাজে আগ্রহী শ্রমিকদের পর্তুগালের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পর্তুগিজ দূতাবাসে যেতে হয়।

পর্তুগিজ কৃষক সমিতির মহাসচিব লুইস মিরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘অন্য সময়গুলোতে না হলেও ফসল কাটার সময় আমাদের অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অভিবাসী কর্মীরা দ্রুত ও অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া পর্তুগালে আসতে পারেন।’

পর্তুগালের অর্থনীতি অনেকটাই অভিবাসী কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের বেশির ভাগ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে যান এবং কৃষিতে নিযুক্ত হন। এসব কর্মীকে কম মজুরিতে ব্রোকলি, জলপাই সংগ্রহ করা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য বেরি বাছাইয়ের কাজ দেওয়া হয়। হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা পর্যটনশিল্পে কাজ করেন ব্রাজিলিয়ানরা। আর নির্মাণ খাতে কাজ করেন মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকরা।

ডানপন্থীদের চাপে এমন সিদ্ধান্ত
পর্তুগালের অভিবাসী শ্রমিকরা সাধারণত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই দেশটিতে যান। বসবাসের অনুমতি পেতে তারা বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকেন। অবশ্য এই সময়টায় তারা দেশটিতে কাজ করার অনুমতি পান। একই সঙ্গে তাদের কর দিতে হয় এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অবদান রাখতে হয়।

ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো পর্তুগালেও অনিয়মিত অভিবাসন একটি আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে অতি-ডানপন্থী দলগুলো এই ইস্যুতে চলমান বিতর্ককে আরো উসকে দিচ্ছে। পর্তুগালের অতি ডান ও জাতীয়তাবাদী দল শেগা। এর অর্থ হলো ‘যথেষ্ট’। অভিবাসনের বিরোধিতা করে তারা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দলটি অভিবাসন কোটা সীমিত করাসহ অভিবাসন ইস্যুতে গণভোটের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

Manual2 Ad Code

তবে উপমন্ত্রী রুই আর্মিন্দো ফ্রাইটাস অবশ্য ডানপন্থীদের চাপকে খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না। তিনি বলছেন, সরকার কম অভিবাসী চায় বিষয়টি এমন নয়। তবে শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার নীতিমালা চায় সরকার, যাতে ডানপন্থী শক্তি এই ইস্যুটিকে তাদের প্রচারে ব্যবহারের সুযোগ না পায়।

পর্তুগালের অভিবাসননীতি বিষয়ক প্রধান মনে করেন, অভিবাসননীতির এই পরিবর্তন পর্তুগালে যাওয়া মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘যারা আসেন তাদের সমাজে একীভূত করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিদেশি কর্মী প্রয়োজন। নতুন নিয়মগুলো যারা এ দেশে আসবেন এবং যারা ইতিমধ্যে এখানে বসবাস করছেন, তাদের সবার উপকারে আসবে।’

এ ছাড়া অভিবাসননীতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে ফ্রাইটাস বলেন, এটি মানবপাচারকারী চক্রের শিকার থেকে অভিবাসীদের রক্ষা করবে।

অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা বাড়বে?
এদিকে পর্তুগালে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়ে করা আবেদনের সংখ্যা গত তিন মাসে প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। এনজিওগুলো বলছে, অনেক বিদেশি কর্মী অনিয়মিতভাবে দেশটিতে যাচ্ছেন।

Manual7 Ad Code

অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন সলিদারিয়েদেদে ইমিগ্রান্তের (সোলিম) আলবার্তো মাতোস জানান, খামার ও রেস্তোরাঁর শ্রমিকরা যাচ্ছেন, কারণ দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে তাদের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি এসব অভিবাসীকে পর্তুগালে আসার পর নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া না হয়, অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমে বাড়তেই থাকবে।’

Manual1 Ad Code

তিনি শঙ্কা জানিয়ে আরো বলেন, সরকারের নেওয়া নতুন অভিবাসননীতি হিতে বিপরীত হতে পারে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code