প্রজন্ম ডেস্ক:
অপরাধ দমনে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলামান থাকার মধ্যেই গত কয়েক দিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লুট, ছিনতাই, চুরি, সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়ায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল রাজধানীসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নগরবাসী। তবে ঢাকা মহাগনরীতে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গা-ঢাকা দিয়েছে অপরাধীরা। পুলিশের টহল কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় সোমবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও রাজধানীতে ছিনতাই, লুট কিংবা বড় ধরনের সন্ত্রাসী কোনো কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘কোনো জায়গায় যদি কোনো রকমের গাফিলতি আমার কর্মচারী বা বাহিনীর ভেতরে থাকে, তবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় ৫০০টি টহল দল এবং ৫৪ চেকপোস্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
পুলিশ এও বলছে, জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে রাজধানীতে পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে পুলিশ। গত সোমবার রাত ১২টা থেকে এই জোরদার টহল শুরু করা হয়। মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে বেশি বেশি টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ছিনতাই ও ডাকাতির হট স্পটগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
এর আগে গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই, লুটপাট ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিনেদুপুরে ছিনতাই ও মারামারির ঘটনায় দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে যৌথবাহিনীর অভিযান ও পুলিশের টহল জোরদার করে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথা জানায়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় অপরাধ দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো সেই পুরোনো ধারাতেই কাজ করছে। পুলিশ এখনো সোজা হতে পারেনি। এই সুযোগে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নগরীর অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে।
ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৪ জন ডাকাত, ১৬ জন ছিনতাইকারী, ৭ জন চাঁদাবাজ, ১১ জন চোর, ২২ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে। অভিযানে তাদের হেফাজত থেকে তিনটি ছুরি, চারটি চাকু, একটি প্লায়ার্স, একটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি লোহার শাবল, একটি চাপাতি, একটি দা ও দুটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ৪৯ কেজি ৮৭০ গ্রাম গাঁজা ও ৭০৪ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
এদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৯৯ জনকে। এদিকে ডেভিল হান্টসহ অন্যান্য মামলায় মোট ১ হাজার ৬৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে, গত সোমবার নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ওই সভায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কোর কমিটির ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বাড়ানোর বিষয়ে। এ ছাড়া অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো এবং সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী টার্গেট এলাকায় অপারেশন পরিচালনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নৌবাহিনীর একটি অতিরিক্ত পেট্রোল এবং কিছু এলাকায় কোস্ট গার্ডের একটি অতিরিক্ত পেট্রোল নিয়োজিত থাকবে। ডিএমপির মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেল টহলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের যাতে পাকড়াও করা যায় সে জন্য সবাইকে সজাগ হতে হবে। ছিনতাইকারী-ডাকাতরা অবস্থান করতে পারে, এমন সম্ভাব্য স্থানগুলোয় কম্বাইন্ড অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তারে করতে হবে। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে টঙ্গি, বসিলা, কেরানীগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জ এলাকায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার টহল বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়। কম্বাইন্ড অভিযানে ৫০০ এপিবিএন সদস্য ডিএমপিতে ন্যস্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে।
এদিকে থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতেও ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ ছাড়া মিথ্যা, গুজব ও প্রোপাগান্ডা বন্ধেও আইনি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সফলতা এবং ব্যর্থতা, আপনারা আমাদের তথ্য দিতে পারবেন। আমরা যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছি, এটার কোনো জায়গায় যদি কোনো রকমের গাফিলতি আমার কর্মচারী বা বাহিনীর ভেতরে থাকে, আমি তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা পুলিশ হোক, বিডিআর (বিজিবি) হোক, র্যাব হোক, আনসার হোক, ঠিকমতো তাদের কাজ যদি না করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
গত সোমবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত কম্বাইন্ড অপারেশনের কোনো অগ্রগতি আছে কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভেবেছি, সকাল পর্যন্ত আপডেট আপনারা দিবেন। আমার মনে হয় আল্লাহ দিলে ভালো।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কারেক্ট রিপোর্টটা (সঠিক প্রতিবেদন) দিবেন। আগে সংবাদ দিতে পারেননি। এখন সংবাদ দেন। সঠিক সংবাদটা দেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, সত্যি সংবাদ দেন। সত্যি সংবাদের ওপর বেইজ করে দেখেন আমরা অ্যাকশন নিই কি না। কারেক্ট সংবাদ পরিবেশন করেন, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।’
এদিকে গতকাল ‘জাতীয় শহিদ সেনা দিবসে’ রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবের হেলমেট হলে আয়োজিত ফটো এক্সিবিশন অনুষ্ঠানে দেশের এই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পেছনে কিছু কারণ উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘প্রথম কারণ হচ্ছে- আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। যেহেতু আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। তারা (অপরাধী) খুব ভালোভাবেই জানে এই সময়ে অপরাধ করলে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সেই কারণে এই অপরাধগুলো হচ্ছে। আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি, তাহলে এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই- দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে অতীতে। খারাপ কাজের সঙ্গে অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। দেশ এত বছর স্থিতিশীল ছিল, এর কারণ হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর বহু সদস্য ও সিভিলিয়ান সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে ইফেক্টিভ রেখেছে, সে জন্য এতদিন ধরে একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি।’
কিশোর গ্যাং ‘মাউরা গ্রুপের’ প্রধান সোহেল গ্রেপ্তার
রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে ‘কিশোর গ্যাং’ নেতা মো. সোহেল ওরফে মাউরা সোহেল (২৫) ও তার সহযোগী মো. আলাল হোসেনকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক খান আসিফ তপু বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল র্যাব-২ জানতে পারে আদাবর থানা এলাকায় ৮-১০ জন ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহেল ওরফে মাউরা সোহেল ও আলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ১টি সামুরাই, ১টি ছুরি ও ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com