প্রজন্ম ডেস্ক:
প্রশাসনে সচিব ও সচিব পদমর্যাদার (গ্রেড-১) ৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। আর অতিরিক্ত সচিবের শূন্য পদ দুই শতাধিক। পদ শূন্য থাকা সত্তে¡ও পদোন্নতি না পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে কর্মকর্তাদের একাংশের মধ্যে। নিজেদের বঞ্চিত বলছেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয় ও ছয়টি দফতরের প্রধান (সচিব) না থাকায় বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদোন্নতি নিয়ে ত্রিমুখী চাপে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনে বিএনপিপন্থি, জামায়াতপন্থি ও বৈষম্যবিরোধী নেতাদের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিকে। সে কারণে তারা বিপাকে পড়েছেন। চাপের মুখে ফ্যাসিস্ট অভিযোগে বেশ কয়েকজন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলেও এখন ত্রিমুখী চাপে সেই শূন্য পদগুলোতে দ্রæত নিয়োগ দিতে পারছে না সরকার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ১৯ জুন চার সচিবকে একসঙ্গে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তারা হলেন-বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) কাজী এনামুল হাসান, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) সুকেশ কুমার সরকার, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইবরাহিম ও জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) মো. সহিদ উল্যাহ। এ ছাড়া ২৪ জুন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনকে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। কিন্তু এই পাঁচ সচিবের পদে এখনও অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে সচিব পদ শূন্য রয়েছে।
এর মধ্যে গত বছরের ৬ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদকে সেখানে বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির এক মাস ৯ দিন পর গত ২৯ ডিসেম্বর আকমল হোসেনকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে এই মন্ত্রণালয়ে সচিব নেই। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া গত ২৫ মার্চ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বদলি করার পর থেকে এ বিভাগেও অন্য কাউকে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল হোসেন রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৩০ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান অবসরে যাওয়ার পর থেকে এ মন্ত্রণালয়ও সচিব শূন্য।
অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) পদসহ একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের অনেক পদ শূন্য রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদফতরে মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক পদও শূন্য।
একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, সচিবসহ বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা প্রধানের পদ শূন্য থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকার পরও বঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
তাদের মতে, সরকারের উচিত ছিল কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অথবা ওএসডি করার আগে ওই পদে কাকে পদোন্নতি বা নিয়োগ দেবে তা ঠিক করা। তা না করায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি চাপের মুখে রয়েছে। বিএনপিপন্থি ও জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের চাপের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারাও তাদের পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও ভালো পদায়নের সুপারিশ করছেন। কিন্তু পদের চেয়ে বেশি সুপারিশ থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত কমিটিকে।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি শূন্য সচিব পদ দ্রুত পূরণে প্রধান উপদেষ্টাকে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সভাপতি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে তিনি বলেন, সরকার গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি গঠন করেছে। অন্যান্য কাজের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে পদায়নের সুপারিশ করা এই কমিটির অন্যতম কাজ।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে সচিব পদায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত কমিটির মাধ্যমে সচিব পদায়নের জন্য একটি ফিটলিস্ট প্রণয়ন করেছে। ফিটলিস্ট থেকে সচিব পদায়নের সুপারিশ করা হবে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে শূন্য পদগুলো পূরণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংগঠনের মহাসচিব মো. শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করে তারা দ্রুত পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে ফ্যাসিস্টের দোসর অনেক কর্মকর্তা এখনও বহাল রয়েছেন অভিযোগ তুলে তাদের বরখাস্ত করার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। তাদের অভিযোগ বঞ্চিতদের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রশাসনে বিতর্কিত ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল এবং স্বৈরাচারের দোসর কর্মকর্তাদের অপসারণ করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সময়মতো পদোন্নতি ও ভালো পদায়ন পেয়েছেন এমন অনেক কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের আমলে হয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
বর্তমান সরকারের আমলেও তাদের প্রভাব কমেনি। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পর উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে প্রশাসনের ১ হাজার ৩০০ কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারা পদোন্নতি পাননি এই কারণ দেখিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদের আগের তারিখ থেকে পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়। সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারই সবচেয়ে বেশি সুপারনিউমারারি পদোন্নতি পাওয়ায় অন্য ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, তাদের নিয়মিত পদোন্নতির দাবি উপেক্ষা করা হলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ধাপে ধাপে পদোন্নতি পাচ্ছেন।
তবে শিগগিরই শূন্য থাকা সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, নিয়োগ ও পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তবে এবার চুক্তিভিত্তিক নয়, নিয়মিতরাই সচিব হবেন। ইতিমধ্যে এসএসবির বৈঠকে ১২ জনকে সচিব পদের জন্য বাছাই করা হয়েছে। বেশিরভাগ বঞ্চিত ও যোগ্যরাই পদোন্নতি পাবেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com