প্রজন্ম ডেস্ক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে, সেজন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বুধবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় নির্বাচন-সংক্রান্ত আরও কিছু প্রস্তুতির কথা জানান উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রস্তুতির মধ্যে অনেক বিষয় আছে। যেমন নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে নির্বাচন সামনে রেখে আগামী মাসগুলোতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে আট লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। ৫ লাখ ৭০ হাজার থাকবে আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার থাকবে পুলিশ বাহিনীর সদস্য। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব সদস্যের আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, দেশে ৪৭ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে সমীক্ষায় দেখা গেছে। এসব কেন্দ্রে কীভাবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পুলিশের শরীরে ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রতিটি কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা। এগুলো যাতে ঠিকমতো মনিটরিং হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগে নির্বাচন কেন্দ্র করে চার দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হতো। এবার এটা সাত দিন করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যাতে ভোটের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়’ বলেন শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ১৮-৩২ বছর বয়সী ভোটারদের পৃথক তালিকা এবং আলাদা বুথ রাখা যায় কি না, সে বিষয় নিয়েও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল আছে কি না, যদি নতুন নিয়োগ করতে হয় তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করে দিন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। প্রতিদিন ট্রেনিং হবে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আগে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছে, সেটা ছিল ‘লোকদেখানো নির্বাচন’। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেজন্য একটা প্রকৃত নির্বাচন কী করে আয়োজন করতে হয় সেটার ট্রেনিং দিতে হবে। কার কী ভূমিকা সেটা পরিষ্কার থাকতে হবে। দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন করতে হবে যাতে অনুশীলন হয়।”
ভোটারদের জন্যও নির্বাচনের নিয়ম বর্ণনা করে ভিডিও কনটেন্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, ‘টেলিভিশনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ভিডিওগুলো প্রচার করতে হবে। জরুরি নম্বরগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে কোনো ভোটারের অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতে পারে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ভোটার যেন সরাসরি কানেক্ট থাকতে পারে।’
নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষভাবে জোর দিয়ে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্ধেক ভোটার নারী। কেউ যেন ভোটের অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করতে না পারে। এজন্য পর্যাপ্ত নারী সদস্য ও কর্মকর্তা মোতায়েন থাকতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। এজন্য যা কিছু দরকার তা এখন থেকেই শুরু হবে। লোকবল লাগলে এখন থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।’
যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, ‘১৬ বছর মানুষ কোনো ভোট দেখেনি। ভোটারের স্মৃতিতে আছে ভোটকেন্দ্রে মারামারি, ভোটচুরি। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে। প্রথম ভোট যারা দেবে, এটা তাদের জন্য গৌরবের। সে যেন ভালো অনুভব করে।’
সরকারের আরও কিছু প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ইউএনওদের লটারির মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন কার যায় কি না, সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, যাতে কেউ কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তিনি বলেন, গত সরকারের আমলে সিসি ক্যামেরা দেখে একটি কেন্দ্রে অনিয়ম পেয়ে পুরো আসনের ভোট বাতিল করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইন করে নির্বাচন কমিশনের ওই ক্ষমতা খর্ব করেছিল। ফলে বর্তমানে কমিশন শুধু যে কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের আগের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি দিক খতিয়ে দেখতে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে কোনো কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারে।
‘এ ছাড়া বিগত বিতর্কিত নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং এজেন্ট হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাইকে হয়তো বাদ দেওয়া যাবে না। তবে যত বেশি সম্ভব নিরপেক্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় সেই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা’ বলেন উপ-প্রেস সচিব।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন পর্যায়ে মনিটরিং সেল স্থাপনের কথা জানিয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, কোথাও অনিয়ম দেখা দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আগে অনেক সাংবাদিক দলীয় কর্মীর ভূমিকা পালন করেছেন নির্বাচনে। কিন্তু এবার যাতে প্রকৃত সাংবাদিক নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান, সেই প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, প্রায় দুই লাখ পর্যবেক্ষক এবারের নির্বাচনে থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের নামে কেউ যাতে দলীয় কর্মী ভোটকেন্দ্রে পাঠাতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সশস্ত্র বাহিনী আর কতদিন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পালন করবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বিস্তারিত কিছু না বললেও জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com