প্রজন্ম ডেস্ক:
মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশের বেশ টানাপড়েন চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক ধার্য করেছে তা কমিয়ে আনতে বেশ দেনদরবার চালানো হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতেই মার্কিন বাজারে পোশাক রফতানিতে বেশ সুখবর এলো। পঞ্জিকা বর্ষের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানিতে প্রতিযোগী যেকোনো দেশের চেয়ে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির দাপট অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন সংস্থা ওটেক্সা ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ সূত্রে (বিএই) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৬০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭.০৬ শতাংশ, যার পরিমাণ ৩১.৭০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির বিপরীতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি ১০.০২ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে ভারত ১৬.৯৬ শতাংশ, পাকিস্তান ২১.৫৮ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১৬.৩৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ১৩.৫৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ১৭.৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে মার্কিন বাজারে দক্ষিণ কোরিয়া এবং হন্ডুরাসের পোশাক রফতানি কমেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এদিকে মার্কিন বাজারে ইউনিট প্রতি মূল্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশ খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। বাংলাদেশের ইউনিট মূল্য বেড়েছে মাত্র ০.৪৭ শতাংশ। বিপরীতে ভিয়েতনাম ৩.৪৭ শতাংশ ইউনিট মূল্যে প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। চীন ০.৯৩ শতাংশ, পাকিস্তান ৩.২৪ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া ৪.১৯ শতাংশ হারে ইউনিট মূল্যে পিছিয়ে পড়েছে।
পোশাক রফতানিতে মার্কিন বাজারে ভালো অবস্থানের বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আমাদের জন্য সর্ববৃহৎ বাজার। বছরে আমরা ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পোশাক রফতানি করে থাকি। এই বাজারে পোশাক রফতানির ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটা বড় স্বস্তির বিষয়। যদিও এই রফতানির প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে, তবুও আমি মনে করি এমন সময় এই তথ্য জানা গেল যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আমাদের চরম টানাপড়েন চলছে। আমার বিশ্বাস মার্কিন বাজারে এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখব। তবে মার্কিন প্রশাসন যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে এবং এটা যদি আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়ে যায় তা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।
এদিকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রফতানির পরিমাণ ও মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক খবর। তবে ইউনিট মূল্যে স্থবিরতা বা পতন আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ক্রেতারা এখনও দামে বেশ সংবেদনশীল এবং মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে আমরা অধিকাংশ সময়েই ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারছি না। ভিয়েতনাম যেভাবে ইউনিট মূল্যে এগিয়ে আছে তা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। বাংলাদেশকে এখন শুধু পরিমাণ নয়, মান ও মূল্য সংযোজনেও আরও মনোযোগী হতে হবে, না হলে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।
বিশ্ববাজারেও ভালো অবস্থান
এদিকে একক দেশ হিসেবে গত বছরও বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
যদিও বাজার হিস্যা দশমিক ৪৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে। বাংলাদেশের পর তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। আর শীর্ষ অবস্থানে আছে বরাবরের মতো চীন। যদিও তাদের বাজার হিস্যা ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস
কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসে এটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বৈশ্বিক পণ্য ও সেবা বাণিজ্য ৪ শতাংশ বেড়ে ৩১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা কি না তার আগের বছর (২০২৩ সাল) ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। গত বছর বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ২ শতাংশ এবং সেবা খাতের ব্যবসা বেড়েছে ৯ শতাংশ। এ ছাড়া বৈশ্বিক বাণিজ্যে সেবা খাতের হিস্যা বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০০৫ সালের পর সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর (২০২৪ সাল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ৫৫৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল ৫২০ কোটি ডলারের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী টানা দুই বছর ধরে (২০২৩ ও ২০২৪ সাল) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে আছে। গত বছর রফতানি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক ২১ শতাংশ। রফতানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাজার হিস্যা কমে গেছে বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছর সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এ বিষয়ে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমতে পারে। অন্যদিকে এই বাজারে ভিয়েতনামের রফতানি বাড়তে পারে। এতে করে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রফতানি কাছাকাছি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারপরও এই বছর দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
এদিকে করোনার আগে থেকে চীনের রফতানি কমলেও বিশ্ববাজারে এখনও দেশটি শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক। গত বছর চীন ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি মাত্র দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০১৭ সালে বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনের বাজার হিস্যা ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ। গত বছর সেটি কমে হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
একক দেশ হিসেবে বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। ২০২০ সালে দেশটি বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছিল। অবশ্য এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ আবার দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করে। গত বছর ভিয়েতনাম ৩৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। এই রফতানি তার আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া তাদের বাজার হিস্যাও কিছুটা বেড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
অন্য দেশের কী অবস্থান
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী একক দেশ হিসেবে বিশ্বের তৈরি পোশাক রফতানিতে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে তুরস্ক ও ভারত। গত বছর তুরস্ক ১৮ বিলিয়ন ও ভারত ১৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর তুরস্কের রফতানি ৪ শতাংশ কমলেও ভারতের বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। আর বাজার হিস্যা তুরস্কের ৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ভারতের ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রফতানিতে একক দেশ হিসেবে ষষ্ঠ থেকে দশম অবস্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর কম্বোডিয়া ১০ বিলিয়ন, পাকিস্তান ৯ বিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ৯ বিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com