প্রজন্ম ডেস্ক:
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার (এআই) নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। এর অপব্যবহার রোধে রয়েছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। তবে নির্বাচনের পাঁচ অংশীপক্ষ যদি ১০টি কাজ যথাযথভাবে করতে পারে তাহলে এই চ্যালেঞ্জ অনেকটা উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য- নির্বাচনে নতুন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া, জনগণ ও রাজনৈতিক দলকে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় ভুয়া তথ্যসংবলিত কনটেন্ট ভোটের মাঠে ব্যাপকভাবে প্রভাব রাখতে পারে। কারণ দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ মিডিয়া বা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে তুলনামূলক কম সচেতন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, এতটাই নিপুণ করে এআই দিয়ে ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে, যা শনাক্ত করা অনেক কঠিন। সেই কারণে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণকে সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমেরও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনও আগামী নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহারকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। গতকাল শনিবার খুলনায় এক সভায় তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি একটি আধুনিক হুমকি, যা অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে যেকোনো ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর হস্তক্ষেপ রোধে কমিশন সতর্ক রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এআই দিয়ে নির্বাচনি ভিডিও বানানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ধরনের কনটেন্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের ভয়েস দিয়ে বিতর্কিত বা সংবেদনশীল বক্তব্যও প্রচার হচ্ছে। অথচ সেসব বক্তব্য আদৌ রাজনীতিবিদরা দেননি। কিন্তু অনেকেই যাচাই না করে সেই বক্তব্য বিশ্বাস করে ফেলছেন।
গত তিন মাসের পর্যালোচনায় জানা যাচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দলের নেতা-কর্মী শত শত ফেসবুক পেজ ও আইডিতে এসব ভিডিও পোস্ট করেছেন। এসব ভিডিওতে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানানো হয়। অনেক সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে, যা প্রভাবিত করছে ভোটারদের। যাদের অনেকে এআই সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। অনেক সময় সঠিকভাবে যাচাই করতেও তারা অক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম সবচেয়ে বড় অংশীপক্ষ বা স্টেকহোল্ডার। এআইয়ের অপব্যবহার রোধে সরকার চাইলে আইন চালু করতে পারে। নির্বাচনি প্রচারের জন্য ভুয়া তথ্য দিয়ে ভিডিও তৈরি হলে নিষিদ্ধ করতে পারে সেটিও। একই সঙ্গে কারা এআইয়ের অপব্যবহার করছে তা মনিটরিং করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সেলও গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি ভোটারদের এ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন চালু করা যায়।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনি আচরণবিধি হালনাগাদ বা আপডেট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভিডিওতে যেন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে তা এআই দিয়ে তৈরি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন। এটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভুয়া খবর, বট আইডি শনাক্ত করার জন্য সম্মিলিত নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। কমিশনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- ভোটার তালিকা সুরক্ষা, ভোটারদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা এবং অনলাইনের মাধ্যমে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। কারণ সাইবার হামলার মাধ্যমেও তথ্য চুরি করে ভোটের মাঠে প্রভাব রাখতে পারে অপব্যবহারকারীরা।
জনগণকেও সচেতন হতে হবে। মিডিয়া তথা গণমাধ্যম সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে নিশ্চিত হতে হবে, তথ্যটি সঠিক। রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এআই যেন নৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য কেউ যেন মিথ্যার আশ্রয় না নেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে দেশ ও জনগণের প্রতি। সর্বোপরি মিডিয়াকে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজটি করতে হবে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশে নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। ২০১৬ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ৩০ হাজার বট আইডি দিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হয়। গত বছরের ২৫ অক্টোবর ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক বিপার্টিসান পলিসি সেন্টার ‘প্রিপেয়ারিং ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজন্স অ্যান্ড আদার চ্যালেঞ্জ টু ইলেকশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের নির্বাচন পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে।
সেই প্রতিবেদনে ভোটের সময় ও স্থান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগসহ আট ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে; যা এআই দিয়ে করা হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ওপর জোর দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় সেই প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পেইন লিগ্যাল সেন্টারের (সিলসি) নির্বাহী পরিচালক আদাব নতি নির্বাচনে কীভাবে এআই কাজ করে এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে এক নিবন্ধে বলেছেন- প্রার্থী, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ভোটাররা ভোট দেওয়ার আগে এবং পরে এআই দিয়ে জনসাধারণকে লক্ষ্য করে এমন বার্তা দিতে পারে; যা নির্বাচনের ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব রাখতে পারে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া তথ্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com