প্রজন্ম ডেস্ক:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পুলিশপ্রধান ড. জাবেদ পাটোয়ারী, সচিব কবির বিন আনোয়ার ও সাবেক ৫৭ পুলিশ সুপারের (এসপি) আয়কর বিবরণী খতিয়ে দেখে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ)। আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য গোপন করে এ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট প্রণীত প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে এসব জানা যায়। এসব ব্যক্তির বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে এনবিআর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকেও এই ব্যক্তিদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত করা হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে ভোট চুরির সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাশালীই হোক তাদের দুর্নীতির তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।’ এনবিআর সৎ করদাতাদের সেবা দিতে প্রস্তুত।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলারও প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চুরিতে সহযোগিতার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিগত সরকারের আমলে এসব ব্যক্তি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ৫৭ জন এসপিসহ ওই ৬১ ব্যক্তি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী ছিলেন। চাকরি করার সময় কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই অনৈতিক লেনদেনের (ঘুষ) মাধমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতি করবর্ষে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও তাতে তারা আয়-ব্যয় ও সম্পদের নামমাত্র তথ্য উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ করা হিসাবের চেয়ে প্রকৃত আয় কয়েক শ গুণ বেশি। হাতিয়ে নেওয়া অর্থের বেশির ভাগই পাচার করা হয়েছে। পাচার করা অর্থ বিদেশে গচ্ছিত রেখেছেন। সেসব অর্থ দিয়ে বিদেশ বাড়ি, ফ্ল্যাট, ভিলা ও বাণিজ্যিক স্থাপনাও কিনেছেন। দেশের মধ্যে বেশির ভাগ সম্পদই বেনামে করেছেন।
তারা বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের কিছু মাছের খামার, গবাদি পশুর চাষ, মুরগির ফার্মের আয় হিসেবে দেখিয়ে বৈধ করেছেন। এরপর এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কর অব্যাহতি নিয়েছেন। ফলে এসব ব্যবসার একটি অর্থও কর পরিশোধ করেননি। যা তদন্তে কর ফাঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই ৬১ জনকে এনবিআর কর্মকর্তারা পাওনা কর পরিশোধে তাগাদা দিলেও একটি অর্থও পরিশোধ করেননি। উল্টো এনবিআরের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী পাওনা আদায়ে যোগাযোগ করেছেন তাদেরকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় প্রভাব খাটিয়ে এনবিআরের এসব কর্মকর্তাকে বদলি করেও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তদন্তের প্রয়োজনে আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ওই ৬১ জনের আয়কর ফাইল বিভিন্ন কর সার্কেল থেকে তলব করে। একই সঙ্গে এসব ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তান ও কাছের মানুষ বলে পরিচিত বন্ধু আত্মীয়স্বজনের আয়কর ফাইলও তলব করা হয়েছে। তাদের ভূমি নিবন্ধন সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ব্যক্তি সরকারি অর্থে ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এদের সন্তানরা বিদেশে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পড়ালেখা করছেন। এরা বিভিন্ন ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খুলে নামসর্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন পাঠানোর নামে অর্থ পাচার করেছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত সরকারের দুর্নীতির তদন্তে নামে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের রাতের ভোটে কে বা কারা জড়িত তা তদন্তে নামে। আয়কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির তথ্যনির্ভর একাধিক অভিযোগ এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ভোট চুরিতে এবং বিনা ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অপকর্মে এই ৬১ জনের জড়িত থাকার কথা তদন্তে বেরিয়ে আসে। কর্মরত কর্মকর্তাদের আয়কর ফাঁকি অনুসন্ধান করা হয়।
এনবিআরের প্রতিবদনে আয়কর ফাঁকিবাজ হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- এসএম সিরাজুল হুদা পিপিএম, উত্তম প্রসাদ পাঠক, শাহ ইফতেখার আহমেদ, মোহাম্মদ গোলাম সবুর পিপিএম, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ফেরদৌস আলী, কামাল হোসেন, মোহাম্মদ নূরে আলম, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ছাইদুল হাসান, মুহাম্মদ রাশিদুল হক, সাইফুর রহমান, তারিকুল ইসলাম, আরিফুর রহমান, আকবর আলী মুনশি, রাফিউল আলম, এএইচএম আব্দুর রকির, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আজিম উল আহসান, মশিউদ্দৌলা রেজা, সাদিয়া খাতুন, আবুল হাসনাত খান, সাঈদুর রহমান পিপিএম, আবদুস ছালাম, সাইদুল ইসলাম, মাহিদুজ্জামান, ওয়াহিদুল ইসলাম বিপিএম, মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, মোহাম্মদ শফিউর রহমান, আল-বেলি আফিফা, মাসুদ আলম বিপিএম-পিপিএম, মাহবুবুল আলম, মো. শাহজাহান পিপিএম, জিএম আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান পিপিএম, মোহাম্মদ আসলাম খান, মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম মোস্তফা রাসেল পিপিএম, মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম, কাজী শফিকুল আলম, মো. কামরুজ্জামান বিপিএম, মোনালিসা বেগম পিপিএম, ফয়েজ আহমেদ, মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম, মোহাম্মদ এহসান শাহ, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মনজুর রহমান, এসএম মুরাদ আলী, মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, আব্দুল মান্নান, জাকির হাসান, শহীদুল ইসলাম পিপিএম, তারেক বিন রশিদ, এসএম শফিউল্লাহ বিপিএম, মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম, মীর আবু তৌহিদ বিপিএম, সৈকত শাহীন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা ও তার সরকার কিছু সুবিধাবাদী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের নীলনকশা আঁকেন। এ কাজে নেতৃত্ব দেন এসব অসাধু ব্যক্তি।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com