প্রজন্ম ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস আজ। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত করার প্রয়াসে দিবসটি পালিত হয়। শেখ হাসিনার এক দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসন পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে দিবসটি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সারা বিশ্বে স্বৈরশাসনের কারণে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আজ হুমকির মুখে। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা আরও বেশি হুমকির মুখে রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত সবশেষ গণতন্ত্র সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনমন তাই বাংলাদেশের। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ পিছিয়েছে।
১৬৫টি দেশ ও ২টি অঞ্চলের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম। আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বের আর কোনো দেশের গণতন্ত্রের সূচক এতটা পেছায়নি। ইআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজন নিয়ে চাপে রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তারা শাসনভার গ্রহণ করে। তবে নির্বাচন দেওয়ার আগে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে চায় তারা।
২০০৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এ দিবসের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। এরপর থেকেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্যোগে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রের নীতি প্রচার ও সমুন্নত রাখা। যা স্বাধীনতা, আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার, জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সমর্থন করে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য : ‘গভর্ন্যান্স ও সিটিজেন এনগেজমেন্টের জন্য এআই নেভিগেট করা’, তথা সুশাসন ও নাগরিক অংশগ্রহণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করা। আইনের প্রতি আনুগত্য নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তির উৎকর্ষকে কাজে লাগাতে হবে। দিবসটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের মতে, গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার আছে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। গণতন্ত্রের অর্থ জনগণের শাসন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বের গণতন্ত্র বা গণতন্ত্র ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার অবস্থা ছিল। কিন্তু ওই দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কারণে সরকারগুলো স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে জনগণের মধ্যে না পাওয়ার কাজ করে। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। একটা বিষয়ে মানুষের যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, সেটি যখন আর সম্ভব হয় না তখন অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়। একটা সরকার যখন দীর্ঘদিন থাকে এবং পরে চলে গেলে নতুন সরকার আসে। আর নতুন সরকার এলে তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়। তারা একটি কনসেপ্টের ওপর ক্ষমতায় আসে। এতে জনগণের দাবিও থাকে তুঙ্গে। তখন সরকারের ওপরে চাপ শুরু হয়। আর এতে গণতন্ত্রের মূল সৌন্দর্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের লাভ হলেও সাধারণ মানুষের না পাওয়ার বেদনা থাকে। যেটি বিশ্ব শান্তির জন্য ভালো কিছু নয়। সাধারণ জনগণের ভোটাধিকারও বাধাগ্রস্ত হয়। সাধারণ জনগণের অনেক কিছু ধামাচাপা পড়ে যায়। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল এমনকি বাংলাদেশ সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। তবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারলে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবারও হোঁচট খাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতি কোনো জড়বস্তু নয়। রাজনীতি হলো সমস্যা সমাধানের উপায়, মানুষের কল্যাণ। কিন্তু বর্তমানে এ দেশে রাজনীতির লক্ষ্য জনকল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকা। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কতগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ক্ষমতায় যাওয়া এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকার রীতিটা ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সুশাসনের ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পথে। যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর সংস্কার প্রয়োজন। আর এটি না করতে পারলে দেশে টেকসই গণতন্ত্র কখনোই আশা করা যাবে না।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com