প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেট, বাড়তি ব্যয়ের অর্থসংস্থান নিয়ে সরকারের উদ্বেগ

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ণ
ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেট, বাড়তি ব্যয়ের অর্থসংস্থান নিয়ে সরকারের উদ্বেগ

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের প্রস্তুতিও চলছে। একই সঙ্গে বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু রাজস্ব আয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় বাড়তি ব্যয়ের অর্থসংস্থান নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে সরকার। এ অবস্থায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট আগামী ডিসেম্বরেই সংশোধন করা হবে।

চলতি অর্থবছরে মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় পরিকল্পনার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৪৩ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা এবং ভাতায় ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বেতন-ভাতা খাতে মোট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কারণে এই বরাদ্দ আরও বাড়তে পারে। সার্বিকভাবে কত ব্যয় বাড়বে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

Manual8 Ad Code

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সরকার ব্যয়ের অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণের কাজ করছে। কোন খাতে ব্যয় সাশ্রয় সম্ভব, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিসেম্বরের সংশোধিত বাজেটে এর প্রভাব দেখা যাবে। সাধারণত মার্চ মাসে বাজেট সংশোধন হয়, কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার আগেভাগেই তা করা হচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন,‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকির ৬২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য বকেয়াও পরিশোধ চলছে। তবে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়ে গেছে, যা সামাল দেওয়া কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বেতন কাঠামোর প্রভাব পড়বে পরবর্তী সরকারের ওপর। বেতন কমিশন যদি আগামী এপ্রিল-মেতে কার্যকর হয়, তাহলে বর্তমান সরকারকে কিছু প্রভিশন রেখে যেতে হবে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘২০১৫ সালের বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের পর থেকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন মূল্যস্ফীতির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এমন দাবি বাস্তবসম্মত নয়। বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ফলে তারা আসলে মূল্যস্ফীতির পেছনে নেই।’

Manual6 Ad Code

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘যেখানে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো কতটা যৌক্তিক- তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।’

গত জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে ২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তারা।

Manual7 Ad Code

এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারিতে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ জন সাবেক কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দিয়েছে, যার মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে উন্নীত হয়েছেন। এই পদোন্নতির ফলে সরকারের বাড়তি ব্যয়ও বেড়েছে।

জুলাই মাসে পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়, যার ফলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। একই সময়ে এক হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।

সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতাও সম্প্রতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষকদের ভাতা বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া বিদেশি মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বৈদেশিক ভাতা ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৩৫ কোটি টাকার ব্যয় যোগ হবে।

Manual8 Ad Code

সব মিলিয়ে, রাজস্ব আয়ে স্থবিরতা ও ক্রমবর্ধমান আর্থিক দায় সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code