প্রজন্ম ডেস্ক:
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই স্বল্প সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের প্রস্তুতি কেমন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অভিজ্ঞ মহলে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাঠ প্রশাসন এখনো অগোছাল। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি প্রশাসনের নেই।
যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয় জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) প্রশাসনের অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের। তবে এই সময়কালে ক্যাডারবৈষম্য, শূন্যপদে পদায়ন, বদলি-পদোন্নতিসহ নানা ইস্যুতে জটিলতার কারণে প্রশাসন এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। এতে নির্বাচন আয়োজন নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগে ভাটা পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীসহ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন সংস্থা প্রশিক্ষণ ও নানা প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু রিটার্নিং অফিসারসহ আরও নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে কার্যকরী নির্বাচনি প্রস্তুতি বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ- কিছুই শুরু হয়নি। এখন ইসি থেকে কেবল চিঠি চালাচালি শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) রাহিমা আক্তার বলেন, ‘নির্বাচনে দায়িত্ব পালন সমন্বয় করেন বিভাগীয় কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে ইতোমধ্যেই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ইসি কীভাবে সমন্বয় করবে, সেটা নিয়ে একটা মিটিং হবে। সেখান থেকে যে ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যাবে, সে অনুসারে কাজ করা হবে।’
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনকে সাজাতে হবে সম্পূর্ণ নতুনভাবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। অনেকের মতে, এ জন্যই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ প্রশাসনে উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখবে। এ সময় যেকোনো ধরনের ছোট একটি ভুলও অনেক বড় সমালোচনা বা ইস্যু হতে পারে। তাই কোনো বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সদস্যরা। এ কমিটি সবদিক বিবেচনায় নিয়ে শূন্য পদ পূরণের বিষয়টি সময় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কারণেই এখনো নির্বাচন উপলক্ষে সেভাবে প্রস্তুতির বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ শূন্য হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ ২৮ সেপ্টেম্বর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব পদ ২৮ আগস্ট, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব পদ ৩০ সেপ্টেম্বর এবং সমবায় বিভাগের সচিব পদটি শূন্য হয় ২৬ মার্চ। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে দপ্তর বদল করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর পর থেকেই পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবের পদটি শূন্য রয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই সব পদে আর কাউকে পদায়ন করা হয়নি। তবে এর মধ্যে ২১ দিন পর গত রবিবার সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও ১৪ দিন পর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এই হিসাবে এখনো সচিববিহীন সরকারের অপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এতে এসব বিভাগের শীর্ষ পদগুলো সচিব শূন্য থাকায় থেমে গেছে বিভাগের সার্বিক কর্মকাণ্ড। সচিবের মতো পদগুলো শূন্য থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই।
কর্মকর্তাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, প্রথমে দেশের অন্যতম বড় একটি দল তাদের মতাদর্শের কর্মকর্তাদের নিয়োগ পেতে দেনদরবার করলেও এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তার নিয়োগ চাইছে। বিপরীতক্রম, ধর্মভিত্তিক অপর রাজনৈতিক দলটি তাদের মতাদর্শের কর্মকর্তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে শীর্ষ পর্যায়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দেনদরবার করছে।
একাধিক কর্মকর্তা প্রশাসনের নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, সরকার হয়তো কর্মকর্তাদের আস্থায় নিতে পারছে না। এ কারণেই সচিব নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় সময় নিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিভিন্ন স্তরের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজের কাছে সরকারের সঙ্গে প্রশাসনের আস্থাহীনতার সম্পর্কের অভিযোগ জানিয়েছেন।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে অস্থিরতা ও সমন্বয়হীনতা থেকে বাদ যায়নি সরকারের মাঠ প্রশাসন। এ কারণেই বেশ কিছু জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও যুগ্ম সচিব পদে কয়েক মাস আগে পদোন্নতি দেওয়া হলেও তাদের উপযুক্ত পদে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। এই না পারা নির্বাচনের সময়ে আরও জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
নির্বাচনের সময়ে মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ডিসিরা। তবে এখনো এ পর্যায়ে অনেক কাজ সরকার শেষ করতে পারেনি। ডিসি ফিট-লিস্টে থাকা ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের অনেক কর্মকর্তাকে এখনো সরকার নিয়োগ দিতে পারেনি। এরই মধ্যে ২৮তম ব্যাচ থেকে আরও কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে ফিট-লিস্টের মাধ্যমে নির্বাচিত করে রেখেছে সরকার। গুঞ্জন রয়েছে, ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের ডিসি পদে নিয়োগ দিতেই ফিট-লিস্ট তৈরি করা হয়েছে। এই ব্যাচের প্রায় ৩০-৪০ জন কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রেখেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা এর আগে নির্বাচনে ইউএনও ও এসিল্যান্ড পদে থেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ডিসি ফিট-লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি চাঁপাইনবাগঞ্জ ও মাদারীপুরে ডিসি পদে দীর্ঘদিনেও নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। এ ছাড়া নওগাঁর জেলা প্রশাসককে চট্টগ্রামে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তিনি এখনো দায়িত্ব নিতে পারেননি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, ‘নির্বাচনের দায়িত্ব পালনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় এখনো শেষ হয়নি। সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো প্রশিক্ষণ নেননি, এ জন্য কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না। এই প্রশিক্ষণ নির্বাচনের কিছু আগে হলেও সমস্যা হবে না।’
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com