প্রজন্ম ডেস্ক:
মাঠ পর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে গঠন করা হচ্ছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান এবং সাবেক আইজিপিকে সদস্য সচিব করে গঠিত হবে পুলিশ কমিশন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশনের। ফলে দায়িত্ব পালনে পেশাদারত্ব, নিরপেক্ষতা এবং সততা ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে কমিশনের রূপরেখা ও কার্যাবলি চূড়ান্ত করা হয়। চূড়ান্তকরণের আগে একটি খসড়া চূড়ান্ত হলেও কিছু পরিবর্তন, পরিমার্জনের প্রস্তাব এসেছে। সংযোজন-বিয়োজন শেষে তা আইন কমিশনে পাঠানো হবে। সেখানকার ভেটিং শেষে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। প্রকাশ, ৫ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি কাজ করবে। তবে ঋণখেলাপি, দেউলিয়া, বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিক, দুর্নীতি বা অন্য অপরাধে চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ কমিশনের সদস্য হতে পারবেন না।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ (খসড়া) ২০২৫-এ বলা হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ ইত্যাদির নিমিত্ত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সততা, আত্মমর্যাদাবোধ, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং জননিরাপত্তা নীতির আলোকে দক্ষ, আধুনিক এবং প্রভাবমুক্ত পুলিশ বাহিনী গড়তে জনবান্ধব পুলিশে রূপান্তর আবশ্যক।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন এই অধ্যাদেশের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে। বলা হয়েছে, এই কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হবে। কমিশন একটি স্বশাসিত সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে এবং এই আইন ও বিধি সাপেক্ষে এর স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন বা অধিকারে রাখার এবং তা হস্তান্তরের ক্ষমতা থাকবে। কমিশনের কার্যালয় থাকবে রাজধানীর যেকোনো সুবিধাজনক স্থানে। কমিশনের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্থায়ী ও প্রেষণে নিয়োজিত জনবল দ্বারা সাচিবিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশন ১১ বা ৯ সদস্যের সমন্বয়ে গঠন হবে। চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্য সচিব হবেন পুলিশ মহপরিদর্শক পদমর্যাদার সাবেক একজন কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে থাকবেন জাতীয় সংসদ নেতার ১ জন প্রতিনিধি (অস্থায়ী), জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার ১ জন প্রতিনিধি (অস্থায়ী), সৎ ও পেশাদার সচিব পদমর্যাদার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (স্থায়ী), অতিরিক্ত পুলিশ মহপরিদর্শক পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ১৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞ জেলা জজ পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকতা অথবা আইন পেশার একজন আইনজীবী (স্থায়ী), ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিজ বিশেষজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ( স্থায়ী), দেশ-বিদেশে নিবন্ধিত মানবাধিকার সংস্থার ১৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞ খ্যতনামা মানবাধিকার কর্মী (স্থায়ী)। এর মধ্যে একজন নারী সদস্য থাকবেন। খসড়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী উপধারা ১-এর দফা ক, খ, গ-এর উপদফা ৩, ৪, ৫ এবং ৭-এর নিয়োগপ্রাপ্ত সাতজন স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য সদস্যরা অবৈতনিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্দেশিত অথবা বিধি দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা সুপ্রিম কোটের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমমর্যাদার হবেন। সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় অথবা সংসদ কার্যকর না থাকলে রাষ্ট্রপতি সরকার প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে উপযুক্ত চার স্থায়ী সদস্য নিয়োগ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে শূন্য পদে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান তার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা চেয়ারম্যান পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের সার্বক্ষণিকভাবে নিযুক্ত জ্যেষ্ঠ সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনের সদস্যগণের নিয়োগ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে হবে। সদস্যগণের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে ৫ বছর মেয়াদে হবে। স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যগণ সরকার কর্তৃক বা বিধি দ্বারা সম্মানী ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।
কমিশনের সদস্য মনোনীত হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্যতায় বলা হয়েছে, দেউলিয়া, ঋণখেলাপি ঘোষিত ব্যক্তি, বাংলাদেশের নাগরিক নন অথবা দ্বৈত নাগরিক, চাকরিতে লাভজনক পদে থাকা ব্যক্তি প্রমুখ কমিটির সদস্য হবেন না।
বাছাই কমিটিতে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগের বিচারক, জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক।
পুলিশ কমিশনের কার্যাবলিতে বলা হয়েছে- পুলিশের কার্যক্রমে দক্ষতা, স্বচ্ছতাও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বাহিনীর, শৃঙ্খলা, পেশাদারত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, দক্ষ চিকিৎসক ও মনোচিকিৎসক সমন্বয়ে চিকিৎসক পুলিশ বিভাগ গঠন এবং জননিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সেমিনার কর্মশালা ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা হবে।
কমিশনের করা একটি কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে ২ থেকে ৩ বছরের জন্য জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সৎ, পেশাদার এবং চাকরিতে সন্তোষজনক কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ নিয়োগ হবেন। কমিশন পুলিশের আইন বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণার বিষয়ে সার্বিক দিকনির্দেশনা থাকবে। জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার আলোকে জননিরাপত্তা নীতি প্রণয়নে কাজ করা হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গবেষণার কাজ করবেন। অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পুলিশের ক্ষোভ নিরসনে কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com