প্রজন্ম ডেস্ক:
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো কার্গো হাউজে অগ্নিকান্ডে নাশকতার সন্দেহ সামনে রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাশাপাশি পুলিশ ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। তদন্তে নাশকতার আলামতের গন্ধ পাওয়া গেছে। কী কারণে আগুন লেগেছে, সেই রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার কার্গো ভিলেজে যারা আসা-যাওয়া করেছে, তাদের চিহ্নিত করে সন্দেহভাজনকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার তোড়জোড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্পর্শকাতর স্থানে সংঘটিত আগুনের ঘটনায় গতকাল রবিবার পুলিশ সদর দপ্তরে জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাছাড়া ঘটনাস্থলের পাশেই বিশ্বমানের ফায়ার ইউনিট থাকতেও কেন এত বড় দুর্ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি, সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল আরও একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছে, কার্গোসহ বিমানবন্দরে অগ্নিনিরাপত্তা কী ধরনের ঘাটতি আছে আর যদি থাকে তাহলে বিষয়টি আঁচ করার পরও ঘাটতি কেন পূরণ করা হলো না সেই রহস্য উদঘাটন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিয়ন্ত্রিত ফায়ার সার্ভিস পরিচালনাকারীদের ভূমিকা, ৮ নম্বর গেট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করার বিরোধিতা কেন করা হয়েছে তার কারণ খুঁজতে বলা হয়েছে। অল্প সময়ে আগুন ছড়িয়ে পড়া ও কার্গোতে কী ধরনের দ্রব্য ছিল ও এসবের কর্ণধারদের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমল ও সরকার পতিত হওয়ার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোনো ঝামেলা ছিল কি না, তাও বের করতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত একজন ডিআইজি বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকা-টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আগুনের ধরন দেখে ‘নাশকতার গন্ধ’ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আজ (গতকাল) জরুরি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকেও নাশকতার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাছেও মনে হচ্ছে, আগুনটি সাবোটাজ হতে পারে। কারণ, বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সহজেই আগুন লাগার কথা নয়। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিও নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে বৈঠক থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি টিম, ডিএমপি, ডিবি পুলিশ ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
নাশকতাসহ কোনো কিছু উড়িয়ে দেব না : গতকাল বাণিজ্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ‘বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে তদন্তের ক্ষেত্রে নাশকতাসহ আমরা কোনো কিছুই উড়িয়ে দেব না, সবকিছুই আমলে নেব। সবকিছু আমলে নিয়েই অনুসন্ধান চালানো হবে। যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রতিটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ক্যাটালগিং কমিটি করা হয়েছে, যারা আগুনের পূর্ববর্তী ও বর্তমান অবস্থাসহ পুরো ঘটনার ক্যাটালগিং করবে। পরে গোয়েন্দা সংস্থাসহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে এর রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর হলো কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) এলাকা। আগুনের যে লেলিহান শিখা দেখেছেন, যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল, এ ধূম্রজালের ভেতর দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার মতো অবস্থা ছিল না। আমরা সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করব। যেন পণ্য সরবরাহে কোনোরকম জটিলতা না হয়। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ইন্সু্যুরেন্স কভারেজে কী আছে, বিমানবন্দরে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ কী আছে সবকিছু আমলে এনে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
দিনভর ভবনে ধোঁয়া, দেওয়া হয়েছে পানি : কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গতকাল সারা দিন সেখান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফায়ার সার্ভিস দুইপাশ থেকে পানি দিয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কার্গো ভিলেজের ৮ নম্বর ফটকের উত্তর পাশ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কার্গো ভিলেজে প্রবেশের ফটক এলাকা থেকেও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে ধোঁয়া বন্ধ করতে চেষ্টা করেন। অন্যদিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের সামনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ জানতে কার্গো ভিলেজে যান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তাছাড়া বিজিএমইএ’র একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে। রপ্তানিকারক ও পণ্য পরিবহন-সংশ্লিষ্ট কয়েকজনও পরিস্থিতি দেখতে গেটের সামনে ঘোরাফেরা করেন। ভেতর থেকে কাজ করে বের হওয়া ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বলেন, গুদামঘরের ভেতরে দাহ্য পদার্থ, বিশেষ করে কাপড়সহ নানারকম মালামাল থাকায় ভেতরে এখনো আগুন জ্বলছে। তাই আমরা নিরাপত্তার জন্য বারবার পানি দিচ্ছি। এখনো গুদামঘর থেকে হালকা ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা নেই।
আপত্তির মুখে নিয়োগ হয়নি ফায়ার জনবল : বিমানবন্দরের অগ্নিঝুঁকির কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালে ২০০ জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিস প্রস্তাব করেছিল বেবিচকের কাছে। কিন্তু একটি বাহিনী এর বিরোধিতা করায় জনবল নিয়োগ হয়নি। এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মেজর (অব.) শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘২০১৮ সালে বিমানবন্দরে ফায়ার স্টেশনের প্রস্তাব বিরোধিতার কারণে বাদ দেয় সিভিল অ্যাভিয়েশন। বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য তাদের বিশেষায়িত একটি ইউনিট রয়েছে। তাদের রয়েছে দুটি অত্যাধুনিক ক্র্যাশ টেন্ডার। তবে বেবিচক কর্তৃপক্ষ শুরুর দিকে তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জায়গাও ঠিক করে দিয়েছিল। তিন দফায় তা রেকি করাও সম্পন্ন করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তবে হঠাৎ রহস্যজনক কারণে তা বাতিল করে দেয় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। ফলে আজ আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’
গাড়ি প্রবেশ করা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য : কার্গো ভিলেজে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে বাইরে থেকে ফায়ার সার্ভিস প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু ৮ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠলে এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা উঠেছে। এ নিয়ে বিমান উপদেষ্টাও কথা বলেছেন। কার্গো ভিলেজের ৮ নম্বর ফটকের সামনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় আগুন লাগে। প্রথমদিকে সামান্য ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। ওই সময় এখানে কর্মরতরা তেমন গুরুত্ব দেননি বিষয়টি। তাদের দাবি, যে আগুন ছিল তা আধা ঘণ্টার মধ্যেই নেভানো সম্ভব ছিল। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলেও অনুমতির জন্য অনেকক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যা পরবর্তী সময়ে আশপাশে গড়ায়। শুরুতে গুরুত্ব দিলে এমনটা হতো না। তবে গতকাল উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘আটকে থাকার অভিযোগ ঠিক নয়, অগ্নিনির্বাপণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আপনারা জানেন, এটি একটি কেপিআইভুক্ত এলাকা, এখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হবে।’
নন-শিডিউল ফ্লাইটে লাগবে না ট্যাক্স : বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে সরকার নির্দেশনা জারি করেছে। আগামী তিন দিন যেসব নন-শিডিউল অতিরিক্ত ফ্লাইট আসবে ও যাবে, সেগুলোর সব ধরনের খরচ মওকুফ করা হয়েছে। আগুনের কারণে যেসব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং যারা বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান করছিলেন, তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এরপরও কোথাও কিছু ব্যত্যয় হয়ে থাকলে, তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি : সকাল থেকেই কার্গোর সামনে দেখা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের ভিড়। তারা সবাই একই সুরে দাবি জানাতে থাকেন ভেতরে ঢোকার। কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভেতরে আগুনের ধোঁয়া বের হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। ঠিক বাইরেই ধ্বংসস্তূপে নিজেদের পণ্যের শেষ চিহ্ন খোঁজার অপেক্ষায় ছিলেন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী। ভোর থেকে এখানে অপেক্ষমাণ থাকলেও বিকেল পর্যন্ত ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি তাদের। একটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আল-আমিন নামে বলেন, ‘কার্গো ভিলেজে আমার প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত টন পণ্য ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছি, কারণ এখনো কোনো কিছুর হদিস পাইনি। এতে আমাদের বহু ক্ষতি হয়েছে, যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দর থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। ভেতরে হয়তো বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বা কোনো কেমিক্যাল থেকে লাগতে পারে। এটা আমরা এখনো জানি না, আমাদের জানানো হয়নি। তবে আগুন লাগার পর যেভাবে দেরি হয়েছে, তাতে বোঝা যায় ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি ছিল।’
ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম থাকলে এমন দুর্ঘটনা হতো না : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম যদি থাকত, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা হতো না। এমন কোনো ব্যবস্থা আমরা পাইনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের সিস্টেম স্থাপন জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে ৩৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কাস্টম হাউজের অংশে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ভবনটি বিভিন্ন ছোট ছোট কম্পার্টমেন্টে ভাগ করা ছিল এবং ভেতরে প্রচুর দাহ্য (কম্বাসেবল) ও হ্যাজার্ডাস উপাদান ছিল। এজন্য অকুপেন্সি লোড অনেক বেশি ছিল এবং নির্বাপণে সময় লেগেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটি স্টিল স্ট্রাকচারের তৈরি। এসব ধাতব অংশ আগুনের তাপ শোষণ করে রেখেছিল, এখনো তা ধীরে ধীরে তাপ ছাড়ছে। এজন্য বাইরে থেকে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, তবে কোনো শিখা বা নতুন আগুনের আশঙ্কা নেই।’ ভবনের স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগুনের উচ্চ তাপমাত্রায় কিছু কলামে ফাটল ধরেছে, ভবন কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমরা কাজ করেছি বলে বুঝতে পারছি এটি এখনো আংশিক স্থিতিশীল। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কাঠামোগত জরিপ করে ঝুঁকি নিরূপণ করা। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা তদন্তাধীন। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা বিস্তারিত যাচাই করে প্রতিবেদন দেবে।’ তবে তিনি জানান, এটা মিরপুরের কেমিক্যাল গোডাউনের মতো উচ্চ তেজস্ক্রিয় কোনো ঘটনা নয়। বাতাসে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো বিপজ্জনক মাত্রা পাওয়া যায়নি।
শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি : অগ্নিকাণ্ডের পর বিমান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এখনো। ফ্লাইট চালু হলেও, শিডিউল বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ট্রানজিট ফ্লাইটের যাত্রীরা। শনিবারের রাতের নির্ধারিত একাধিক ফ্লাইট গতকাল রাত পর্যন্ত ছাড়তে বিলম্ব হয়। কিছু ফ্লাইট ছাড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর। এমনকি সকালে নির্ধারিত ফ্লাইটগুলোকেও ছাড়তে হয়েছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জরুরি বৈঠক : এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে ১২-১৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা বীরপ্রতীক ফারুক-ই-আজম। গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অগ্নিনির্বাপণ নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আপাতত আমদানি পণ্য থাকবে থার্ড টার্মিনালে : অগ্নিকাণ্ডের পর আমদানি পণ্য রাখার জন্য নতুন স্থান নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্র্তৃপক্ষ আপাতত ‘জিইসি মেইনটেন্যান্স’ নামের স্থানে আমদানি পণ্য রাখার জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষ সেখানে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করছে।
ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের ৯ নম্বর গেটে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং ওই গেট দিয়েই পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। আগুনের ঘটনার পর এনবিআর বিশেষ ব্যবস্থায় আমদানি কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির (পুনর্গঠিত) জরুরি বৈঠকে বসেন ফারুক-ই-আজম ও শেখ বশিরউদ্দীন।
গত শনিবার ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গোতে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপণের স্পেশাল টিম এবং আরও ছিলেন আনসার সদস্যরা। এ সময় পুরো বিমানবন্দর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছিলেন বিপুলসংখ্যক ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাসহ বিজিবি। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আরও একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com