# ২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ১০৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম
# বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত
প্রজন্ম ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা নাজমুল উলফাত। থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে দুই মাস ধরে ভিসার চেষ্টা করছিলেন। অনেক চেষ্টার পর শেষে গতকাল রবিবার ভিসা পেয়েছেন তিনি। কালের কণ্ঠকে নাজমুল বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বন্ধুদের সঙ্গে থাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।
কিন্তু বাকিদের ভিসার মেয়াদ থাকলেও আমার ভিসা ছিল না। তাই গত আগস্ট মাসে ভিসা করতে দিই। কিন্তু ওই সময় ভিসা পাইনি। ফলে আমাকে রেখেই বন্ধুদের চলে যেতে হয়।’
ভিসা নিয়ে বিড়ম্বনায় হতাশা প্রকাশ করে নাজমুল আরো বলেন, ‘প্রথমবার ভিসা না মিললে জেদ করে আবার ভিসা করতে দিই। কিন্তু সেবারও ভিসা মেলে না। বন্ধুরা বলেছিল থাইল্যান্ডের ভিসা পাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও আমার দুবার ভিসা মেলেনি।
অবশেষে আজ (গতকাল) ভিসা হাতে পেলাম। এখন ভিসা পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হয়ে গেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সরকারি সময়সীমা সাত থেকে ১০ কর্মদিবস। কিন্তু বর্তমানে সময় লেগে যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ দিন। তার পরও অনেকে ভিসা শুধু থাইল্যান্ড নয়, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য বর্তমানে ভিসা প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এসব দেশের ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সময় যেমন দীর্ঘ হয়েছে, তেমনি ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হারও বেড়েছে।
মিরপুরের বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম। নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন। চীন, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার দেশগুলো তিনি বেশি ভ্রমণ করেন। নাহিদ বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন কাজে নানা দেশে ভ্রমণ করছি। কিন্তু আগে যেভাবে সহজে বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়া যেত, এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ভিসা পেতে প্রচুর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ভিসা পাওয়াটা অনেক জটিল হয়ে গেছে।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দুই থেকে তিনটি কারণে এই ভিসা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিদেশে গিয়ে আইন-কানুন না মানা, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করা, বেআইনি কাজ করা এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। এর ফলে এই দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ নানা রকম শর্ত আরোপ করছে। এতে ভিসা পেতে বাংলাদেশিদের সমস্যা তৈরি হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ভিসা নিষেধাজ্ঞা কঠোর হয়ে পড়ায় বাংলাদেশের পাসপোর্টের মানও কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের গ্লোবাল পাসপোর্ট সূচকে ১০৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম, যা এখন বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত।
হেনলি পাসপোর্ট সূচক আরো জানায়, উত্তর কোরিয়ার মতো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন ৩৮টি গন্তব্যে ‘ভিসা-অন-অ্যারাইভাল’ (আগমনী ভিসা) প্রবেশাধিকার পান, যা ২০১৮ সালে ছিল ৪৩টি গন্তব্য। অর্থাৎ বাংলাদেশিদের আগমনী ভিসা পাওয়ার সুযোগ আগের চেয়ে কমেছে।
হেনলি পাসপোর্ট সূচকের তথ্য অনুসারে, অন্যান্য দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপ ৫৬তম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া ভারত ৮৫তম, ভুটান ৯২তম, শ্রীলঙ্কা ৯৮তম, নেপাল ১০১তম ও পাকিস্তান ১০৩তম স্থানে রয়েছে। আর ১৯৩টি গন্তব্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে সিঙ্গাপুর শীর্ষে রয়েছে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া ১৯০টি গন্তব্যে প্রবেশাধিকার পেয়েছে। তবে আফগানিস্তান সর্বনিম্ন ১০৬তম স্থানে রয়েছে। দেশটির নাগরিকদের মাত্র ২৪টি গন্তব্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে।
ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরা বলছেন, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো পর্যটননির্ভর দেশগুলোও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশি দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়া-ভিয়েতনাম ভিসানীতি কঠোর করেছে। ইন্দোনেশিয়ায় এখন ব্যাপক কাগজপত্র ও উচ্চ ফিসহ পূর্ব-অনুমোদিত ভিসা প্রয়োজন হয়। ভিয়েতনাম মূলত নতুন ভিসা স্থগিত করেছে। এ ছাড়া ভারত, বাহরাইন, মিসর, দুবাই ও আবুধাবি ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। আর তুরস্ক ও ফিলিপাইন ভিসা প্রক্রিয়াকরণ দীর্ঘ এবং জটিল করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কাও এখন বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
চলতি বছর মালয়েশিয়া শত শত বাংলাদেশিকে বহিষ্কার করেছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ভ্রমণকারীদের অনেকের কাছে ভুয়া হোটেল বুকিং ছিল এবং পর্যাপ্ত তহবিল ছিল না। তাঁদের মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ীরা ভ্রমণ ভিসা ব্যবহার করে কর্মীদের বিদেশে পাঠাচ্ছেন।
এ বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আমাদের পাসপোর্টের কোনো দোষ নেই। সব আমাদের দোষ। আমাদের মানুষের মান যত কমবে, তত পাসপোর্টেরও মর্যাদাহানি হতে থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিদেশে গিয়ে সেখানকার আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ মানি না। আমরা বেশি সময় ধরে থাকি, বেআইনি কাজ করি এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। এর ফলে ওই সব দেশের কর্তৃপক্ষ এসব রোধের চেষ্টা করে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে আমাদের দেশের অর্থনীতি কিংবা রাজনীতি সবই অস্থিতিশীল। সরকারের ইমেজও ভালো না। এ ছাড়া আমাদের ওপর অন্যান্য দেশের যে আস্থা ছিল সেটিও বিভিন্নভাবে কমে গেছে। আবার ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে চলে গেছে, এখন ভিসাই বন্ধ। এর প্রভাব অন্য দেশের ওপরও পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে আমাদের পাসপোর্টের মর্যাদা কমে যাচ্ছে।’
উত্তরণের উপায় সম্পর্কে মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘যে সমস্যাগুলো আমরা করছি সেগুলোর সমাধান করতে হবে। সেটা এক দিনে হবে না। এই আস্থা ফিরিয়ে আনা একটু কঠিন। কিন্তু আমরা যদি চেষ্টা করি তাহলে অসম্ভব নয়। আমরা যদি লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করি, বিদেশে গিয়ে আইন-কানুন মেনে চলি, বেশি সময় না থাকি, বেআইনি কাজ না করি তাহলে আমাদের ওপর আস্থা ফিরে আসবে।’
এর আগে গত ৮ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভিসা জটিলতা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘আমরা খুব বেশি ফেক (ভুয়া) কাগজপত্র দাখিল করি। তুলনামূলকভাবে আমাদের ইরেগুলার মাইগ্রেশনে যাওয়ার সংখ্যা বেশি। রেপুটেশনেরও প্রশ্ন আছে। এ জন্য ভিসা জটিল হয়ে গেছে। আমাদের ঘর গোছাতে হবে। তবেই এই সমস্যার সমাধান হবে।’
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com