প্রজন্ম ডেস্ক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ওপরই ভরসা রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই নির্বাচন পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনওকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে সংস্থাটি। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার (রিটার্নিং অফিসার) ক্ষমতা থাকছে ডিসিদের হাতে। তারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাবেন ইউএনওরা। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ।
মঙ্গলবার নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টোট) বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে (সম্ভাব্য) দুটি করে ব্যাচে ২৫ জন তথা মোট ৫০ জনের দুদিনব্যাপী (১২টি সেশনে) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকেন মাঠ প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নির্বাচন কমিশন কেবল পলিসি নির্ধারণ করে থাকে। বাস্তবায়নের প্রায় পুরো দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকে তাদের। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও সুপারিশ আসতে হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমেই। ফলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের ওই পদটিতে নিয়োগ করে নির্বাচনকে সরকারের হাত থেকে মুক্ত করার যে দাবি, তা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বিগত নির্বাচনগুলোয় যেহেতু ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছিল, তাই এ কাজে অন্যদের যুক্ত না করার পক্ষে ইসি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, কমিশনের কর্মকর্তাদের আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা করি। সেখানে কমিশনের পুরো মনোযোগ থাকে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন ব্যাপক পরিসরে হয়। এখানে কমিশনের একার পক্ষে পুরো মনিটরিং সম্ভব হয় না। তবে ডিসিরা জেলার প্রধান হিসেবে পুরো ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেন। তাই তারা পুরো নির্বাচন কার্যক্রম দেখাশোনা করতে পারবেন।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার। আর বাকি ৬৪ জন ছিলেন জেলা প্রশাসক। ভোটে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল ৫৯২ জন। এ ক্ষেত্রে ৪৯৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৪ জন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আটজন, জোনাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ১১ জন আর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন ৫৬ জন। এ ছাড়া কাস্টমস এক্সিকিউটিভ অফিসার পাঁচজন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন দুজন আর সার্কেল অফিসার একজন নিয়োগ করা হয়েছিল। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের গতবারের মতো এবারও রিটার্নিং কর্মকর্তার সহায়ক হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড় জেলাগুলোয় দুজন রিটার্নিং কর্মকর্তা করার কোনো চিন্তা নেই। তবে মেট্রোপলিটান এলাকায় বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হয়। এ কারণে ৬৪ ডিসি ও দুই বিভাগীয় কমিশনার নিয়ে ৬৬ জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হবে।
এদিকে ডিসিদের বাইরে অন্য কাউকে এ পদে (ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা) এনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না ইসি। ফলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন ও দাবি করে আসা কমিশনের যোগ্য কর্মকর্তারা এবারও থাকছেন উপেক্ষিত।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে আয়োজন করে আসছে ইসি। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি এখনও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপরই নির্ভর করছে। এ বিষয়ে কমিশন বলছে, জেলার প্রশাসনিক ইউনিট ধরা হলে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ডিসি। তাদের বাইরে জাতীয় নির্বাচনে অন্য কাউকে পরিচালনার দায়িত্বে দেওয়া হলে সমন্বয় করা অসম্ভব হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা সবাই থাকে ডিসিদের অধীনে। সেখানে অন্যদের এ কাজে যুক্ত করা হলে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে নির্বাচন। তাই নানাদিক বিবেচনা করে আগের ধারাবাহিকতার দিকে থাকছে কমিশন।
এদিকে ৩০০ সংসদীয় আসনে নির্বাচনকালে সিইসিসহ পাঁচজন কমিশনারের পক্ষে সঠিক তদারকি করা কঠিন। এ কারণে ডিসিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয় ইসিকে। তাই সরকারের মতো কমিশনও চায় না ডিসিদের বাইরে অন্য কাউকে রিটার্নিং অফিসার করা হোক। ফলে ইসির যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও রিটার্নিং অফিসার হওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের মতো এবারও তারা থাকছেন উপেক্ষিত।
যদিও ইসির ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনরা জাতীয় নির্বাচনে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা মহল থেকে ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে। নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকেও এই দাবি তোলা হয়েছে। কিন্তু কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তা (ডিসি) ও সহকারী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নিয়োগের পক্ষে। নির্বাচন পরিচালনায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা আইন ও বিধি অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকেন। এ যুক্তিতে নির্বাচন পরিচালনায় ডিসিতেই আস্থা রাখতে চাইছে ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আগামী নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আগামী যেকোনো একটি কমিশন সভায় বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে যাদের হাতে জেলার সব প্রশাসনিক ক্ষমতা রয়েছে তারাই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com