প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভোটের পরিবেশে গভীর নজর

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ
ভোটের পরিবেশে গভীর নজর

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রেখেছে বিদেশিরা। তারা চায় যে আসন্ন নির্বাচন সহিংসতামুক্ত এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচনের প্রাথমিক পরিবেশ-পরিস্থিতি মূল্যায়ন শেষে ফেব্রুয়ারির ভোটে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এবং কমনওয়েলথ (একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা স্বাধীন দেশগুলোর স্বেচ্ছাসেবী আন্তর্জাতিক সংস্থা)।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চলমান ভূরাজনীতিতে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভিন্ন রকম গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে হওয়ায় এই গুরুত্বের ভিন্নরকম তাৎপর্য রয়েছে। এ জন্য প্রভাবশালী দেশগুলো চায় বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক। এতে প্রভাবশালী দেশগুলো তাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করতে মজবুত ভিত্তি পাবে। এ জন্য সব রাষ্ট্রই আসন্ন ভোটের পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে।

Manual7 Ad Code

ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি মিশনগুলো প্রতিনিয়তই ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিবেদন তাদের হেডকোয়ার্টারে পাঠাচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে পরিবেশ-পরিস্থিতি জানা-বোঝার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের ভোট ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকরা আবার অন্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ করেও আসন্ন ভোটের পরিবেশ-পরিস্থিতি জানা-বোঝার চেষ্টা করছেন বা নিজেদের পর্যবেক্ষণ একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করছেন।

 

Manual5 Ad Code

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে এই বিষয়ে এখন আর বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো সন্দেহ নেই। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তাদের একাধিকবার আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি ভোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রাসঙ্গিক প্রস্তুতিপর্বের চিত্রও দেখানো হয়েছে। এতে বিদেশিরা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও ভোট ইস্যুতে বৈঠক করে তাদের যেসব বিষয়ে কৌতূহল রয়েছে সেগুলো জানা-বোঝার চেষ্টা করছেন। বিদেশি কূটনীতিকরা আসন্ন ভোট অনুষ্ঠানের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা পেয়েছেন এই প্রতিবেদক এমন তথ্য জানতে পেরেছেন।

 

ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত বোরিস ভ্যান বোমেল বুধবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাজনৈতিক দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনের বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। নির্বাচন কেমন হতে পারে, সহিংসতা হওয়ার কোনো শঙ্কা আছে কি না, ভোটাররা অবাধে ভোট দিতে পারবে কি না, ভোটের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি আছে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

Manual4 Ad Code

ঢাকায় অবস্থিত চীনের দূতাবাস তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুধবার জানিয়েছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফি বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উভয় পক্ষ চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি এবং সহযোগিতা গভীর করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে চীন।

 

এর আগে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতদের (আউফা) সঙ্গে মতবিনিময়ে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক জনগণের কল্যাণে। বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, রাজপথের জনগণের বিষয়ে আমরা মুগ্ধ। বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখুন। গত মার্চে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনে গিয়েছিলেন। ভুলে যাবেন না গুরুত্বপূর্ণ সফরটি ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের তিনটি প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ সফর হয়েছে চীনে। ওই তিন দলের নেতারাসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারাও চীন সফর করেছেন। তারা দুই দেশের মাঝে সহযোগিতা চান। এটাই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের শক্তি। এই সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে।

Manual5 Ad Code

ঢাকায় অবস্থিত ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইইউ এক বার্তায় ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত, জাপানের দুই কূটনীতিকের ছবি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইস্যুতে ইইউ এবং জাপান একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সংস্কার, নির্বাচন, বিনিয়োগ ও বহুপক্ষীয়তাসহ সবকিছুই ছিল।

গত ২৯ অক্টোবর এক বার্তায় ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, এই সপ্তাহের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে আমার দেখা করার সৌভাগ্য হয়। আমাদের আলোচনার আলোচ্যসূচিতে ছিল: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য ইইউর সমর্থন, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি, মানবাধিকার, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অভিবাসন এবং বহুপক্ষীয়তা।

অন্যদিকে জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক উপমন্ত্রী জোহান সাথফ গত ২৭ অক্টোবর থেকে দুদিনের ঢাকা সফর করেন। যা ছিল জার্মানির পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের সফর। এর আগে জার্মান সংসদ সদস্য বরিস মিজাতোভিচ গত ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর এই তিন দিন বাংলাদেশ সফর করেন। এ ছাড়া জার্মানির একটি প্রতিনিধি দল গত ১৭ থেকে ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করেন। জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাদের নিয়ে এই প্রতিনিধি দলে সরকারি-বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষাবিদ, ফেডারেল একাডেমি ফর সিকিউরিটি পলিসির সদস্যরা ছিলেন।

ঢাকার জার্মান দূতাবাসের মতে, জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে এসব সফর হয়েছে। একই সঙ্গে অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রে পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো অন্বেষণ করা হচ্ছে।

ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ গত ২৩ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ১২ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য ভোট দেওয়ার অনুমতি পাবেন। আর এর মাধ্যমে দেশটি এশিয়া ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অঙ্গনে আবারও যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আঞ্চলিকভাবে এবং বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। নির্বাচন কমিশন এই বিশাল চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি নেওয়ায় অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। আমি তাদের শুভকামনা জানাই এবং বাংলাদেশের জনগণকে শুভকামনা জানাই গণতন্ত্রে ফিরে আসার এই যাত্রায়। আমরা মনে করি, দেশের একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন যাতে বিভিন্ন দল অংশগ্রহণ করতে পারে।

 

ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হিকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন নির্বাচন ইস্যুতে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, নরওয়েতে নির্বাচনের সময় প্রতিযোগী প্রার্থীর প্রচার কার্যক্রমের সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। কারণ রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি নাগরিক সেবা। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। কিছু সংস্কার কাজ ইতিমধ্যে করা হয়েছে। এসব সংস্কারের বাইরে আরেকটি বিষয়ে সংস্কারের কথা ভেবে দেখতে হবে সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছাড়া বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রবণতা, সাংঘর্ষিক রাজনীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code