প্রজন্ম ডেস্ক:
সাধারণ ভোট ও গণভোট এক দিনে ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গণভোটের কারণে ভোটগ্রহণের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ১০ ঘণ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার একজন উপসচিব এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ থেকে শুরু হবে দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি সংলাপ। সংলাপের জন্য দুই ভাগে ১২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। কেবল নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি ৫৩ দল ইসির এই সংলাপে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পাচ্ছে।
গণভোট ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বসহ (পিআর) নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এক দিনে হয় তা হলে ভোটগ্রহণের সময় আগে-পিছে এক ঘণ্টা করে কমিয়ে-বাড়িয়ে ১০ ঘণ্টা করা হতে পারে। বর্তমান সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীন বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় হবে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
কারণ ঐকমত্য সংস্কার কমিশন সাধারণ ভোট ও গণভোট এক দিনে করার সুপারিশ করেছে। বুধবার পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কার কমিশনের সঙ্গে স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করেনি। ইসি ও সংস্কার কমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গণভোট ইস্যুতে দুই দলের অবস্থান এখনও বিপরীত মেরুতে। জামায়াত চায় সংসদের আগে গণভোট এবং বিএনপি চায় দুই ভোট একত্রে। ইতিমধ্যে ঐকমত্য সংস্কার কমিশন এক দিনে গণভোট ও সংসদ ভোট করার সুপারিশ করেছে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একসঙ্গে করার ব্যাপারে সম্মত সরকারও। ভোটগ্রহণ কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন করতে এ চিন্তা সরকারের বলে জানা গেছে।
তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ চলতি সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাব খসড়া আদেশের তফসিলে রাখা হয়েছে। একটি আদেশ জারি করে গণভোট করার সুপারিশ ছিল ঐকমত্য কমিশনের। সেখানে একটিই প্রশ্ন রাখার সুপারিশ ছিল। নির্বাচন কমিশনও গণভোটে ‘হ্যাঁ বা না’ প্রশ্ন রাখার পক্ষে। বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতীয় সংসদের সঙ্গে গণভোট এক দিনে হওয়াই শ্রেয়। একই সঙ্গে সব ইস্যুগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে রেখে প্রস্তাবের পক্ষে না বিপক্ষে (‘হ্যাঁ বা না’) ভোট দেওয়ার বিধান রাখাÑযাতে ভোটাররা সহজেই সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। ওই কমিশনার আরও বলেন, যদি একাধিক পয়েন্ট হয় তা হলে সেটা গণভোট হবে না। হবে একটা জগাখিচুড়ি ভোট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টি প্রস্তাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশিরভাগ দল একমত। এগুলো নিয়ে গণভোটে একটি প্যাকেজ প্রশ্ন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। সেখানে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হবে এই ৩০টি সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান কি না। এর বাইরে ১৮টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বড় ধরনের মতবিরোধ আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব। এগুলো নিয়ে গণভোটে আলাদা তিন-চারটি প্রশ্ন করার চিন্তা হচ্ছে।
এদিকে সাধারণ ভোট ও গণভোট এক দিনে ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার একজন উপসচিব এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করছে। সেখানে গণভোটের কারণে ভোটগ্রহণের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ১০ ঘণ্টা করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক খসড়া করে রাখছে যাতে ইসির চাওয়া অনুযায়ী সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে তা হলে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ থেকে শুরু হবে দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনি সংলাপ। সংলাপের জন্য দুই ভাগে ১২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। কেবল নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি ৫৩ দল ইসির এই সংলাপে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পাচ্ছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, সংলাপের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), আচরণবিধি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যান্য বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হবে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের ৫ম তলার সম্মেলন কক্ষে এই নির্বাচনি সংলাপের আয়োজন করেছে সংস্থাটি। আজ প্রথম দিন ১২টি নিবন্ধিত দল সকাল ও বিকালে দুটি ধাপে নির্বাচনি সংলাপে অংশ নেবে।
সংলাপের প্রথম ধাপে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা সংলাপের আলোচনায় অংশ নেবেন।
দ্বিতীয় দফায় দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সংলাপে অংশ নেবেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) দলের প্রতিনিধিরা। এরপর বিএনপি জামায়াত ও এনসিপিসহ বাকি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। তবে এসব দলগুলোর সঙ্গে কবে কখন সংলাপ হবে তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছে ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ১২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী সংলাপের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ মাসেই অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনি এ সংলাপ কার্যক্রম চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। দেশে বর্তমানে ৫৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত এবং তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল। আর নতুন তিনটি দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সংলাপের বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, এ মাসের মধ্যেই দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় কার্যক্রম তারা শেষ করতে চান, যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যায়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), আচরণবিধিসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের নানা দিক নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে।
ইসি জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন শেষ হলে ভোটের প্রস্তুতি শতভাগে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে ইসি।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com