প্রজন্ম ডেস্ক:
জোরেশোরে চলছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। চলতি মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কমিশন। নির্বাচনে মূল দায়িত্ব পালনকারী মাঠ প্রশাসন সাজানোর কাজও শুরু হয়েছে।
সুষ্ঠু একটি নির্বাচন উপহার দিতে চলতি মাসের মধ্যে মাঠ প্রশাসনে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করতে চায় সরকার। ইতোমধ্যে ২৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলার সার্বিক তদারকিতে থাকেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
ভোট সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ সুপার (এসপি) পদেও আসছে পরিবর্তন। শিগগির বিভিন্ন জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দেওয়া শুরু হবে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
মাঠ প্রশাসন সাজানোর এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও আমলারা। তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে ভালো একটি জায়গায় নিতে অনেকটাই ব্যর্থ। এ প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে সব মহলেই সংশয় ও সন্দেহ রয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে যদি সরকার সুষ্ঠু ভোটের বিষয়টি মাথায় রেখে সঠিকভাবে প্রশাসন সাজাতে পারে, তাতেও প্রশাসনকেন্দ্রিক ব্যর্থতা অনেকটাই ঢাকা পড়ে যাবে।
তবে যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করতে ব্যর্থ হলে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে আরও বেকায়দায় ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা।
এসপি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, ‘এসপি নিয়োগে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি শিগগির আমরা নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।’
উপদেষ্টা বলেছিলেন এসপি পদে পদায়ন লটারির মাধ্যমে হবে- এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যেভাবে বলবে সেভাবে হবে।’
গত ৮ নভেম্বর মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন শুরু করে সরকার। ওইদিন মধ্যরাতে ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা, গাইবান্ধা, বরগুনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, কুষ্টিয়া ও ভোলা জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর পরদিন আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। ওইদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, জামালপুর, মেহেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ ও চাঁদপুরে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভোটের আগে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া সব ডিসিকে উঠিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া যাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয় কিংবা যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাদেরও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২৯ জেলায় পরিবর্তন আনা হলো। যদিও এর মধ্যে ২১ জনই নতুন মুখ। বাকি ৮ জন ডিসির জেলা বদল করা হয়েছে।
ভোটের আগে ডিসি পদে আরও পরিবর্তন আসতে পারে। এজন্য তালিকাও প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিয়ে তফসিলের আগে চলতি মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান একজন কর্মকর্তা।
৬৪ জেলার মধ্যে এখনো ৩৫ জেলায় আগের ডিসিরাই দায়িত্ব পালন করছেন। এই বাকি ৩৫ জেলার মধ্যে কতজন ডিসিকে পরিবর্তন করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে কথা বলতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
আসছে এসপি-ওসি পদে রদবদল
নির্বাচনের সময় মাঠে পুলিশ সুপার ও ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে এসপি-ওসির পদায়ন হবে লটারির মাধ্যমে। তবে এটি চূড়ান্ত নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পদায়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বর্তমানে ৬৪ জেলায় যারা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যায়নের মাধ্যমে এসপি পদে পদায়নের জন্য যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করা হয়েছে।
এখন সৎ ও যোগ্য এসপিদের জেলায় রাখা হবে। বাকিদের সরিয়ে সেখানে নতুন এসপি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে ডিসির মতো এসপি পদেও নিয়োগ দেওয়া হবে ধাপে ধাপে। সহসাই এসপি পদে রদবদল আসছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছিলেন, গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন পুলিশ কর্মকর্তাদের এবারের ভোটে দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হবে। কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, গত তিনটি নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন কর্মকর্তা পাওয়া দুরূহ। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, গত তিন নির্বাচনে দায়িত্বে ছিলেন কিন্তু বড় ধরনের কোনো অভিযোগ নেই, এমন কর্মকর্তাদের রাখা হবে।
যোগ্যদের নিয়োগের পরামর্শ
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘আপনি যদি যোগ্য লোকদের ডিসি-ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেন, তাদের মোটিভেট করে দেন যে, তোমরা ভালো কাজ করবা, আমাদের অনেক দুর্নাম হয়েছে, আমরা যতটুকু বিতর্কিত হয়েছি সামনে তোমরা আমাকে সেটা ঘুঁচিয়ে দেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও বিভাগীয় কমিশনাররা যদি মাঠটা গরম করতে পারেন, যোগ্য লোক ঠিকভাবে নিয়োগ দিতে পারেন, তারা যদি কাজ করেন, তাহলে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ভালো নির্বাচন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্বল দিক আছে। এরপরও যদি তারা মাঠ সাজাতে পারেন, এ মুহূর্তে গর্জে উঠতে পারেন, তাহলে ভালো একটা নির্বাচন তারা উপহার দিতে পারবেন।’
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের যতটুকু সময় বাকি আছে এ সময়ে যদি যোগ্য ও চৌকষ কর্মকর্তাদের ডিসি-ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। কারণ একজন যোগ্য ডিসি রাজনীতিবিদসহ কৌশলে সবাইকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। সরকার এটা শুরু করেছে, এটি ভালো।’
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com