প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

যেভাবে তিন দলের ‘মন রক্ষা’ করলেন ড. ইউনূস

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ
যেভাবে তিন দলের ‘মন রক্ষা’ করলেন ড. ইউনূস

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের ঘোষণা দিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান ঘটেছে। বিএনপি প্রকাশ্যে নোট অব ডিসেন্টের কথা জানালেও বাস্তবে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। জামায়াত কিছু প্রশ্ন তুললেও নতুন কর্মসূচি দেয়নি এবং এনসিপিও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ তিন দলের ভারসাম্য বজায় রাখায় মোটামুটি সন্তুষ্টি সৃষ্টি করেছে। এতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের অপ্রত্যাশিত বাধা দূর হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি ছাড়াও অন্যান্য দল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে বাস্তবতার সঙ্গে মেনে নিয়েছে।

 

গণসংহতি আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতের পিআরও’র দাবি এবং সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত দাবি কিছুটা বাস্তবায়িত হওয়ায় তারা বেশি লাভবান হয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হয়ে পুরোপুরি নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করবে।

 

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্য দিয়ে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর মোটামুটি সমাধান হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তিন দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। এতে তিন দলেরই জয় হয়েছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে সৃষ্টি হওয়া সংশয়ও দূর হয়েছে। এতে আপাতত সংকটের সমাধান হলেও পরবর্তীতে সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

 

Manual6 Ad Code

পর্যবেক্ষকরা আরও জানান, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের কথা বলে বিএনপিকে খুশি করা হয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, সনদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিশ্চয়তা আদেশে রেখে জামায়াতের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছেন। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে সন্তুষ্ট হয়েছে জামায়াত। আবার এনসিপিরও গণপরিষদের আদলে সংবিধান সংস্কার পরিষদের দাবি পূরণ হয়েছে। এই তিন দলের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সব বাধা দূর হবে। এখন সবার নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা উচিত। একই সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধে আর না জড়িয়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা উচিত দলগুলোর।

 

সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রায় নয় মাসের আলোচনার ফসল জুলাই সনদ স্বাক্ষর। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধারাবাহিক আলোচনা শেষে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে গত ১৭ অক্টোবর এই সনদ স্বাক্ষর হয়। সেখানে স্বাক্ষর করে ২৫টি দল। তার পরও রাজনৈতিক সংকট দূর হয়নি। বরং সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয় বড় দুই দল ও তাদের শরিকরা। এতে করে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়। যা গড়ায় মাঠের আন্দোলনে। এ নিয়ে সমঝোতায় দলগুলোকে সাতদিনের সময় দিলেও সমাধান হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের ঘোষণা দেন। গেজেট আকারে জারি করা হয় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ।

 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে-এই সিদ্ধান্তকে ইতোমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি।

 

দলটির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ। এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।

 

জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হোক, তা তারা চান না। সেজন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ তারা করতে দেবেন না।

 

Manual6 Ad Code

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য অধ্যাদেশের পরিবর্তে আদেশ জারি করায় সরকারকে সাধুবাদ জানান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে ঐকমত্য কমিশনের অনেক সুপারিশ মানা হয়নি উল্লেখ করে তিনি এও বলেন, সরকার বিএনপির নোট অব ডিসেন্টকে একোমোডেট করার জন্য চারটা ভিন্ন ভাগে গণভোটের প্রশ্নগুলোকে বিভাজিত করেছেন; যা সুস্পষ্টভাবে জটিল ও অপ্রচলিত।

 

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করায় এবং সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট ঘোষণা দেওয়ায় সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদও।

 

শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ নিয়ে দায়বদ্ধতা দেখায়নি।

 

সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে সরকার সব রাজনৈতিক দলকে খুশি করলেও জনগণকে ফাঁকি দিয়েছে।

Manual3 Ad Code

 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার আদেশ জারিকে স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সব বাধা দূর হবে। সেজন্য সব দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ভূমিকা রাখতে হবে।

 

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা আদেশের কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও তাকে স্বাগত জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দলগুলোর মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমরা মনে করি, এটা এখন একটি অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য সমাধান।

 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর  বলেন, জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এবং ভিন্ন মত তৈরি হয়েছিল। যেটি জাতীয় নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছিল। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সেই সংশয়টি অনেকাংশে কেটেছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সরকারকে সহায়তা করা।

 

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি দেশের সব রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণার পর আর কোনো নতুন দাবি উত্থাপন না করে পুরোপুরি নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হবেন। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একই দিন গণভোট করার সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

Manual6 Ad Code

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তাদের মতো করে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে কিছুটা অসন্তোষও প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভাষণের মধ্য দিয়ে তিন দলকেই সন্তুষ্ট করার চেষ্টা ছিল এবং তারা সন্তুষ্ট হয়েছে। এই ভারসাম্যে তাদেরই জয় হয়েছে।

 

রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক মনে করেন, তবে এতে বিএনপি সেরকম লাভবান হয়নি। কারণ বিএনপির দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জাতীয় নির্বাচনের একই দিনে গণভোট। কিন্তু বাস্তবতা হলো-জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষে গণভোট করার কোনো সামর্থ্যই ছিল না। বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াত। তাদের পিআরও’র দাবি মানা হয়েছে। নিম্নকক্ষে মানা না হলেও উচ্চকক্ষে তো হয়েছে। আবার সংবিধান সংস্কার পরিষদের গঠনের দাবিও মানা হয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি নির্বাচনমুখী হবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code