প্রজন্ম ডেস্ক:
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা প্রায় ছয়টা। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের পাশে পত্রিকার দোকানে সাজিয়ে রাখা পত্রিকাগুলোর দিকে চোখ বোলাতেই ইসহাক মিয়ার প্রশ্ন -এবারের গণভোটের প্রশ্নটা কী? ইসহাক মিয়া হেঁটে হেঁটে পান-বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করেন। একটুখানি দাঁড়িয়ে দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ বোলাচ্ছিলেন।
তার প্রশ্নে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন, দোকান ঘিরে পত্রিকার দিকে মুখিয়ে থাকা মুখগুলো। তাদের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা আযাদ হোসেন বলেন, গণভোটে জানি প্রশ্ন থাকে একটা, এখন দেখি অনেক। জবাব কিন্তু একটাই। কেমন হলো বিষয়টি! বিশেষ করে যারা একটু কম বোঝেন বা পড়তে পারেন না, তাদের জন্য তো বিষয়টি আরও জটিল। সবমিলে গণভোটের বিষয়টি ভোটারদের বোঝানোই বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
পাশে মূল সড়কে রিকশা থামিয়ে এসব আলাপচারিতা শুনছিলেন রিকশাচালক হেদায়েতুল ইসলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘হ্যাঁ-না ভোট (গণভোট) না দিলে কি এমপি ইলেকশনে (সাধারণ নির্বাচন) ভোট দেওয়া যাইব না?’
এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ আনজুম বলেন, “গণভোটের প্রশ্ন এমন কেন? চারটি প্রশ্নের একটি জবাব! চারটি প্রশ্নের কোনো কোনোটিতে আমার মত ‘হ্যাঁ’ হতে পারে। আবার কোনো কোনোটিতে ‘না’ হতে পারে। কিন্তু আমি ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে সব কটিতে হ্যাঁ বলা হয়ে গেল। আবার ‘না’ ভোট দিলে সব কটিতে না বলা হয়ে গেল। আমিই তো বিষয়টি বুঝি না। তাহলে সাধারণ মানুষকে বিষয়টি বোঝানো তো বেশ বড় চ্যালেঞ্জ।’’
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ভোটাদের গণভোটের বিষয়টি বোঝানো বড় চ্যালেঞ্জ, এটা বাস্তবতা। গণভোটের বিধান সংবিধানে নেইও। কিন্তু সরকারি আদেশ যদি হয়, তাহলে তা অমান্য করার সুযোগ তো দেখছি না।’
জামায়াতে ইসলামী থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘সবার দায়িত্ব হবে সাধারণ মানুষকে গণভোট বিষয়ে বোঝানো। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হবে সাধারণ মানুষকে বোঝানো। গণভোট নিয়ে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক (নুর) বলেন, এবারের গণভোট নিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝানোতে চ্যালেঞ্জ আছে। এটা চ্যালেঞ্জই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করাও যাচ্ছে না। আবার বিকল্পও নেই। সে ক্ষেত্রে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে গণভোট ইস্যুতে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে, এটা নৈতিক দায়িত্ব। সবাই তো গণভোটের পক্ষেই। তাই সবাই প্রচার-প্রচারণা চালালে মনে হয় চ্যালেঞ্জ থাকবে না।
কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংসদীয় আসনের জন্য এনসিপি থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন দলটির আইনজীবী সংগঠন ন্যাশনাল লইয়ার্স অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নাজমুস সাকিব। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, এমন বিধান করে দিতে হবে যেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রচার-প্রচারণার সময় বাধ্যতামূলকভাবে গণভোটের বিষয়াবলি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে বলে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, গণমাধ্যমের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন- অনুষ্ঠানাদি, সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও সাধারণ মানুষ গণভোটের বিষয়ে জেনে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবারের গণভোট। ভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে ভোটাররা তাদের মতামত জানাবেন।
গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে।’ সবকিছু বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্ন নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ভাষণে সেসব প্রশ্ন পড়েও শোনান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রশ্নটি হবে এ রকম— ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
ক. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com