প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা জানালো বিবিসি

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৩০, ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা জানালো বিবিসি

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনই দেশে ফিরতে পারছেন না—বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। মায়ের গুরুতর অসুস্থতার মধ্যেও দেশে ফেরার বিষয়ে ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’—তার নিজের ফেসবুক পোস্টে এমন মন্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে; তারেক রহমানের দেশে ফেরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কোথায়, কার হাতে রয়েছে এই নিয়ন্ত্রণ?

Manual7 Ad Code

বিএনপির অবস্থান

এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে শনিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই সব ব্যাখ্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।

একইদিন অন্যদিকে তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কয়েক ঘণ্টা পর বিকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে (তারেক রহমানের ফেরা) সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ অথবা কোনো ধরনের আপত্তি নাই।

 

সিদ্ধান্তহীনতার পেছনে কী আছে?

অক্টোবরের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। দলের নেতারাও জানিয়েছিলেন যে, তিনি নভেম্বরেই ফিরতে পারেন। কিন্তু মাস শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান—ফেরার সিদ্ধান্ত তার নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

Manual2 Ad Code

এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় এসেছে পুরনো বিতর্কিত ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা। রাজনৈতিক মহলে অনেকে মনে করছেন, তারেক রহমানের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে—প্রভাবশালী মহলের কোনো অজানা প্রভাব তার দেশে ফেরা দীর্ঘায়িত করছে।

 

বিদেশি প্রভাবের আভাস?

বিএনপির কিছু সূত্র বলছে—তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনো শক্তিশালী দেশের আপত্তি থাকতে পারে। তবে কোন দেশ এবং কী কারণে আপত্তি—তা নিশ্চিত করা যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, তারেক রহমানের বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, তার দেশে আসার বিষয়টি একক সিদ্ধান্ত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ; এই দুদেশের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন ছাড়া তারেক রহমানের ফেরায় ঝুঁকি থেকেই যায়।

‘উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির বিষয়টি সামনে এসেছিলো এবং যে যা-ই বলুন না কেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন না হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কোন ভরসায়। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটাই নির্ভর করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়ার ওপরে।’

Manual7 Ad Code

মহিউদ্দিন আহমদ আরও বলেন—১/১১ পর্বে প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ‘মাইনাস ফোর’। শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ইতোমধ্যে ক্ষমতা হারিয়েছে; খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয়। ফলে আলোচনায় এখন তারেক রহমানের অবস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এছাড়া ২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রাজনীতিতে না জড়ানোর একটি অঙ্গীকার বা মুচলেকার কথাও নানা সূত্রে উঠে আসে।

বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার ‘কারাগারে কেমন ছিলাম (২০০৭-২০০৮)’ বইতে লিখেছেন, এমনও হতে পারে তিনি (খালেদা জিয়া) জেনারেলদের সঙ্গে এই সমঝোতা করেছিলেন যে, তারেক রহমান আপাতত নিজেকে রাজনীতিতে জড়াবেন না এবং এ মর্মে তারেক রহমান কোনো সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরও দিয়ে থাকতে পারেন।

 

Manual1 Ad Code

আইনি বা নিরাপত্তাজনিত বাধা নেই

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৫ মাসে তার সব মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও অস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদনও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। দৃশ্যমান আইনি বা নিরাপত্তাজনিত বাধা নেই।

তবে খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটজনক হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তারেক রহমানকে দেশে ফিরে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জোরালো হয়। বিএনপিও জানায়, মায়ের কাছে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তার পক্ষে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

 

নির্বাচন ঘিরে নতুন ইঙ্গিত

বিএনপির কয়েকজন নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন—ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, দেশে ফিরবেন তারেক রহমান এবং তিনিই নেতৃত্ব দেবেন নির্বাচনি প্রচারে।

প্রশ্নটি তাই এখনো স্পষ্ট নয়—তারেক রহমানের দেশে ফেরা আটকে আছে ঠিক কোথায়?

বিএনপি বলছে, রাজনৈতিক বাস্তবতার কিছু সংবেদনশীল বিষয় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আবার সরকার বলছে—তাদের কোনো বাধা নেই।

ফলে দেশজুড়ে জোরালো হয়ে উঠেছে একটাই প্রশ্ন—তারেক রহমানের দেশে ফেরা কোন শক্তির নিয়ন্ত্রণে, এবং কবে কাটবে এই অনিশ্চয়তা?

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code