প্রজন্ম ডেস্ক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক আঙিনায় নানা সমীকরণ বদলে যাচ্ছে। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি (জাপা) নিজেদের অবস্থান নির্ধারণে একদিকে স্বাধীনভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে কৌশলগত অ্যালায়েন্স বা রাজনৈতিক সমঝোতার দিকেও নজর রাখছে।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হচ্ছে জাপা এবার এমন রাজনৈতিক অবস্থান নিতে চাইছে যা দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাখার পাশাপাশি নির্বাচনি প্রতিযোগিতায় টেকসই অবস্থান দেবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাপা প্রায় তিন দশক ধরেই জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কখনো ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন দিয়ে, কখনো বিরোধী দলের সঙ্গে কৌশলি সম্পর্ক রেখে দলটি তার প্রভাব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি আবারও সমীকরণ বিবেচনা করছে।
দলীয় নেতাদের মতে, গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক সংস্কারে যেমন পরিবর্তন এসেছে, ঠিক তেমনই একাধিক দলের অবস্থান এখনও পরিবর্তনশীল। ফলে নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও মাঠের রাজনীতিতে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। জাপা মনে করে, এমন সময়ে অগ্রিম প্রস্তুতির পাশাপাশি আলোচনার দরজা খোলা রাখা জরুরি।
জাতীয় পার্টির ভেতরকার কাঠামো থেকে জানা যায়, দলটি এ নির্বাচনে সম্ভাব্য তিনটি পন্থা বিবেচনা করছেÑস্বতন্ত্রভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, নির্বাচনি অ্যালায়েন্স বা সমঝোতার ভিত্তিতে আসন সমন্বয় এবং পরিস্থিতি অনুকূলে হলে জোটে অংশগ্রহণ।
দলের একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। অধিকাংশ বিভাগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সুপারিশ আসায় খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ তালিকায় নতুনদের পাশাপাশি অভিজ্ঞ নেতাদেরও জায়গা রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় রয়েছে জাপা কি এবার কোনো জোটে যাবে? দলটির নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কিছু ইসলামী দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে জাপার সঙ্গে সম্ভাব্য অ্যালায়েন্সে আগ্রহ দেখিয়েছে। এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও নির্বাচনি পরিস্থিতি অনিশ্চিত হওয়ায় এগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে।
জাপার মতে, অ্যালায়েন্স হলে উভয় দলের প্রাপ্ত ভোট ও আসন সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে দলটি এখনও কোনো জোটের সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেয়নি।
জাপার কয়েকজন শীর্ষ নেতা মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে আদর্শগত ব্যবধান থাকলেও অতীতে তাদের সঙ্গে রাজনীতি করার
অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই প্রেক্ষাপট তৈরি হলে রাজনৈতিক সমঝোতা অসম্ভব নয়। তবে তারা স্পষ্ট করেন এ বিষয়ে এখনও দুই দলের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাপার এ বক্তব্যের পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণ অনিশ্চিত, তফসিলের আগে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে এবং জোটে গেলে দলীয় আসন সুবিধা বাড়ে।
দলটির নেতারা বারবার উল্লেখ করেছেন অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, কিছু এলাকায় সমাবেশ ও দলীয় কার্যক্রমে প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বচ্ছ নয়। নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি না তা নিয়েও সাধারণ মানুষ ও দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
জাপার কয়েকজন নেতা বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঝুঁকিতে যেতে চাই না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পূর্ণ উদ্যমে নির্বাচনি মাঠে নামব।
জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, জাপা নির্বাচনমুখী একটি দল। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত হলে দলটি সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে অংশ নেবে। কৌশলগত অ্যালায়েন্সের সুযোগ খোলা রয়েছে। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দল অ্যালায়েন্সে আগ্রহ দেখালেও এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যদি নির্বাচনের পরিবেশ প্রতিযোগিতামূলক না হয়, তাহলে নেতাকর্মীদের অযথা চাপের মুখে ফেলতে চাই না।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ত্যাগী ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন হবে। তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত। সুষ্ঠু ও সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে জাপা ভালো ফল করতে পারবে।
এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে কি না তা নিয়ে সংশয় এখনও কাটেনি। জাপাকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কিছু দলের অবস্থান দলের মধ্যে চাপ তৈরি করেছে। তবুও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ ইস্যুতে কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি, ফলে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আশাবাদী।
প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটনের ভাষ্য মতে, নির্বাচনের পরিবেশের ঘাটতি দলের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দলীয় বৈঠকেও কখনো কখনো সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। জোট বা অ্যালায়েন্স যাই হোক, সব সিদ্ধান্ত তফসিলের পর স্পষ্ট হতে পারে।
সম্পূর্ণ চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাতীয় পার্টি একদিকে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের শক্ত অবস্থানে রাখতে চায়, অন্যদিকে রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে ‘কৌশলগত নমনীয়তা’ বজায় রাখছে। দলের ভেতরে যেমন জোটের পক্ষে মত রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বাধীনভাবে নির্বাচন করারও সমর্থন। তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটিই এখন প্রধান প্রশ্ন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com