প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সাধারণ বিমা খাতে দাবি পরিশোধে করুণ চিত্র

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০৩:২৪ অপরাহ্ণ
সাধারণ বিমা খাতে দাবি পরিশোধে করুণ চিত্র

Manual1 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বিমার স্বীকৃতি রয়েছে। পলিসি করা থাকলে সে অনুযায়ী ভোক্তার হাসপাতালের বিল পরিশোধ বা দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি মিটিয়ে দেয় বিমা প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনে সময়মতো প্রাপ্য টাকাও বুঝিয়ে দেওয়া হয় বিমা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। বছরজুড়ে গ্রাহক থাকেন নির্ভার, ভরসা থাকে বিমা কোম্পানিতেই।

আমাদের দেশে বিমা খাত এখনো সেই ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি। বিপদগ্রস্ত গ্রাহক সময়মতো বিমা দাবি পান না। এই অনিয়মই এখন নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে দেশে।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সাধারণ বিমা খাতে দাবি পরিশোধের করুণ চিত্র দেখা গেছে। এই সময়ে মোট বিমা দাবির মাত্র ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৯১ দশমিক ৬৮ শতাংশ দাবিই পরিশোধ করা হয়নি। এই সময়ে মোট বিমা দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনিষ্পন্ন দাবির অঙ্ক ছিল ৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। নিষ্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে জীবন বিমা খাতে মোট বিমা দাবির পরিমাণ ৫ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা, যা মোট বিমা দাবির ৩৫ শতাংশ। অনিষ্পন্ন বিমা দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা, যা মোট বিমা দাবির ৬৫ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে উভয় খাতে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ অনেক বেশি। উভয় খাতে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

 

বিমা দাবি পরিশোধ না করার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমত, এর কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতি। পাশাপাশি আমাদের দেশের গ্রাহকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাদের আরও সচেতন হতে হবে। দাবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহককে নির্ভুল কাগজপত্র জমা দিতে হবে। প্রতিটি যোগাযোগ নথিভুক্ত রাখতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে দাবির নিষ্পত্তি না হলে আইডিআরএতে অভিযোগ জানাতে হবে। প্রয়োজনে বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে আবেদন করতে হবে। তাতেও সমাধান না হলে দ্রুত আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। শৃঙ্খলার অংশ হিসেবে এই ধাপগুলো পালন করতে হবে। এর পাশাপাশি দাবি পরিশোধে আইডিআরএ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমাদের দেশে বিমা পরিশোধের চিত্র মোটেও সন্তোষজনক নয়। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশের জীবন ও সাধারণ বিমা খাতের দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় পার্থক্য রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ব্যবধানের অর্থ এই নয় যে, জীবন বিমা খাতের অবস্থা খুব ভালো আর সাধারণ বিমা খাতের অবস্থা খারাপ। বিষয়টি হলো, জীবন বিমার দাবি পরিশোধের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সরল। সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে বিষয়টি তা নয়। সাধারণ বিমার দাবির ক্ষেত্রে প্রায়ই জটিল মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। এই পার্থক্য থেকে বোঝা যায়, সাধারণ বিমায় সক্ষমতা বিকাশের আরও সুযোগ আছে। সেই সঙ্গে এই খাতের প্রণালিগত অকার্যকারিতা দূর করতে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Manual2 Ad Code

প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রাহকদের বিমার টাকা পরিশোধ না করার শীর্ষে রয়েছে সাধারণ বিমা কর্পোরেশন। কোম্পানিটির বিমা দাবির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে মাত্র ৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ অনিষ্পন্ন বিমা দাবির পরিমাণ ২ হাজার ৭৬ শতাংশ। বিমা দাবি পরিশোধ না করার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স।

বিমা খাত বিশ্লেষকেরা বলেন, সাধারণ বিমা খাতে সাধারণত সম্পদের বিমা করা হয়। যেমন, অগ্নিকাণ্ডের কারণে কারখানা বা দুর্ঘটনার কারণে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। তাদের মতে, সামগ্রিকভাবে আর্থিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে জীবন বিমা খাত ভালো অবস্থায় আছে। জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর তহবিল বা লাইফ ফান্ড ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। ফলে তারা যে দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার পূরণে সক্ষম, এটি তার লক্ষণ। জীবন বিমার সুবিধা হলো, এই বিমা দীর্ঘমেয়াদি হয়। ফলে কোম্পানিগুলো তহবিলের অর্থ দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে। অন্যদিকে সাধারণ বিমার মেয়াদ কম। এগুলো সাধারণত মেয়াদি বিমা। জমা টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। ফলে মানুষ বাধ্য না হলে সাধারণ বিমা করতে চায় না। কিন্তু বাংলাদেশে গাড়ি, অগ্নি ও ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনার বিমা বাধ্যতামূলক নয়। এই বাস্তবতায় সাধারণ বিমা খাতে অতটা গতি আসছে না।

Manual6 Ad Code

এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন সদস্য বলেন, বিমা খাতের উন্নয়নের প্রথম ধাপ হলো প্রতিটি কোম্পানিকে তাদের নিজস্ব সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিমা কোম্পানি এবং বিমাসংশ্লিষ্ট অন্য দপ্তরের অভ্যন্তরীণ সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিমাসংশ্লিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code