প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল আশা জাগালেও ‘সাড়া কম’

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল আশা জাগালেও ‘সাড়া কম’

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নেওয়া প্রকল্প বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে কর্মসূচি নিয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা ‘কমই আগ্রহ’ দেখাচ্ছেন।

যে কারণে দুই দফায় দরপত্রের সময় বাড়িয়েও বিনিয়োগকারীদের কাছ থকে কতটা সাড়া পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো।

চলতি ডিসেম্বরের ৮ তারিখে দরপত্র উন্মুক্ত করার নতুন তারিখ রেখেছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো, ডিপিডিসি, পিডিবিসহ কয়েকটি সংস্থা।

তারা বলছে, যে রকম ‘আশা’ করা হয়েছিল সেভাবে ‘সাড়া মিলছে না’।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বিষয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি প্রস্তাব ‘আকর্ষণীয়’ নয়। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য সৌরভিত্তিক আইপিপি (স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী) থেকেও ‘সুযোগ-সুবিধা’ কম। অনেকগুলো ‘ঝুঁকির’ দিক রয়েছে যা দরপত্রে স্পষ্ট করা হয়নি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দরপত্রের সময় বাড়ানো হয়েছে। আরও কয়েকটি দিন বাকি আছে। তারপর দেখবো কী করা যায়।”

গত বছর ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণ করে।

এ সরকারের সময় বিদ্যুৎখাতে দীর্ঘদিনের ‘দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাত’ থামাতে একের পর এক উদ্যোগ আসতে থাকে।

আওয়ামী লীগ সরকারের করা যেসব ‘অসম চুক্তি’ বাতিল করা সম্ভব তা বাতিল করে দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এখন পর্যন্ত ৩৯টা চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

এর মধ্যে বাদ পড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের তালিকায় ছিল ২৬৭৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৪টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব প্রকল্পে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসবে বলে হিসাব করা হচ্ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়।

বন্ধ করে দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সম্ভাব্য ১১ টাকা বা তার চেয়ে কিছু বেশি দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি ছিল।

 

Manual1 Ad Code

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা

আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ ছাদভিত্তিক সোলার প্রকল্প থেকে ১৪৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের নির্দেশ ও পরিকল্পনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত জুলাই মাসে জারি করা একটি পরিপত্রে সরকারি অফিসগুলোর ছাদে সরকারি কোম্পানির অর্থায়নে (ক্যাপেক্স মডেল) এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোতে বেসরকারি অর্থায়ন ও মালিকানায় (ওপেক্স মডেল) সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়, এসব সৌর বিদ্যুৎ ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতিতে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। অর্থাৎ উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ভবনের চাহিদা পূরণ শেষে হিসাব মতো (নেট মিটারিং) জাতীয় গ্রিডে চলে যাবে। আর হিসাব অনুযায়ী প্রতি তিনমাস পর পর বিনিয়োগকারীরা অর্থ পাবেন। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, এমন ছাদের প্রয়োজন হবে।

‘ওপেক্স মডেলে’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোর ছাদে ছাদে ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতিতে যেসব সৌর প্যানেল স্থাপনের বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ইউনিট মূল্য ৬ টাকা থেকে ৭ টাকা ধরা হয়েছে।

 

দরপত্রের মেয়াদ বাড়ছে

গত অক্টোবরে সরকার ৪৬ হাজার ৮৫৪টি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা করে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান তখন এক অনুষ্ঠানে বলেন, “ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিডে আনতে হবে। যেসব বিতরণ কোম্পানি ফেইল করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা দিয়ে কর্মকর্তার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হবে। কোনো কর্মকর্তার অসহযোগিতা করলে জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।”

পরবর্তীতে সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, নির্দেশনা মতে অক্টোবরেই বিতরণ কোম্পানি ডেসকো, ডিপিডিসি, বিআরইবি, বিপিডিবি, নেসকো নিজ নিজ এলাকায় ‘রুফটপ সোলার সিস্টেম’ স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ডিপিডিসির প্রথম দরপত্র আবেদন জমা ও উন্মুক্ত করার শেষ তারিখ ছিল ১৮ নভেম্বর। প্রথম দফায় সময় বাড়িয়ে করা হয় ২৭ নভেম্বর, দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে করা হয় ৮ ডিসেম্বর। স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা মিলিয়ে ১১৭টি ছাদ চিহ্নিত করেছে ডিপিডিসি।

৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘ওপেক্স মডেলে’ দরপত্র আহ্বান করেছে ডিপিডিসি।

একইভাবে ১২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরে ডেসকোর ডাকা দরপত্র আবেদন জমা ও উন্মোচনের শেষ তারিখ ছিল ১৮ নভেম্বর। সে তারিখ পিছিয়ে প্রথমে ২৭ নভেম্বর করা হয়েছিল। পরে সেই তারিখ আবার নিয়ে যাওয়া হয় ৮ ডিসেম্বর।

ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই পিএলসি-ডেসকো তার এলাকাগুলোকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেছে। উত্তরাঞ্চলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৫৭টি স্থাপনায় তিন লাখ ৬২ হাজার ৭৮৭ বর্গফুট ছাদ নির্বাচন করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে ৫৯টি স্থাপনায় চাল লাখ ৯৮ হাজার ১৩৩ বর্গফুট আয়তনের ছাদ নির্বাচন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অঞ্চলে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সরকারি দপ্তর মিলিয়ে তিন লাখ ৮২ হাজার ৭৬২ বর্গফুট আয়তনের ছাদ নির্বাচন করা হয়েছে।

একইভাবে দরপত্র আহ্বান করেছে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই পিএলসি-নেসকো, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-বিআরইউবি।

ডেসকোর ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রজেক্ট’ দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম ভূঞা বলেন, “যে রকম আশা করেছিলাম এমন সাড়া পাচ্ছি না। এই মডেল লোকজন আগ্রহী হচ্ছে না।”

প্রকল্পগুলো ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে আগ্রহ কম দাবি করে তিনি বলেন, তবুও ২/৩ জন বিনিয়োগকারী দরপত্র জমা দিয়েছেন।

Manual6 Ad Code

ডেসকো মেট্রো রেলে ১৫ মেগাওয়াট, দাশেরকান্দি পরিশোধন কেন্দ্রে ১০ মেগা সৌর বিদ্যুতের প্রকল্পের কথা চিন্তা করেছি তুলে ধরে মফিজুল ইসলাম বলেন, “তখন আগ্রহ পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে এসব স্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই প্যানেল বসাবে বলেছে।”

তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারী ঠিকাদাররা যেন স্থানগুলো পরিদর্শন করে বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে পারে সেজন্য সময় বাড়ানো হয়েছে। তারা যেন কাজের ‘অ্যাসেসমেন্ট’ ঠিক মতো করতে পারে সেজন্য তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময়টা একটু বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”

যোগাযোগ করা হলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর আহমদ বলেন, সময় বাড়ানো হয়েছে, যাতে আরও বেশি অংশগ্রহণ হয়।

ডিপিডিসির রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড রিচার্স শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহিরুল করিম বলেন, “কিছু দরপত্র বিক্রি হয়েছে, কেউ অধিকতর কিছু জানতে চেয়েছেন। অনেকেই প্রি-বিড মিটিংয়ে হাজির হয়েছেন।

 

বিনিয়োগ আগ্রহে ভাটা কেন?

‘রুফটপ সোলার’ নীতিমালা অনুযায়ী, বিতরণ সংস্থাগুলোর মধ্যে যারা যেই দরে পিডিবির কাছ থেকে পাইকারি মূল্যে বিদ্যুৎ পায় সেটাই হবে এসব প্রকল্পের বিদ্যুতের সর্বোচ্চ দর। তবে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে হলে অবশ্যই দাম কিছুটা কম ঘোষণা করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, পিডিবির প্রকল্পের বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি সর্বোচ্চ মূল্য ৭ টাকা ৬২ পয়সার চেয়েও কম ঘোষণা করতে হবে। ডেসকো ও ডিপিডিসির ক্ষেত্রে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ৮ টাকা ৫০ পয়সা। আবার ওজোপাডিকোর (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৪৬ পয়সা এবং নেসকোর ক্ষেত্রে ৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম।

দরপত্র অনুযায়ী, ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের ইউনিট মূল্য সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোর পাইকারি মূল্যের চেয়ে কম হতে হবে।

পিডিবির নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিদপ্তর পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, “যেভাবে ‘প্রাইসিং মডেল’ ঠিক করা হয়েছে তা যথেষ্ট লাভজনক। তবে আগের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে হয়তো কম।”

সম্প্রতি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের দপ্তর ভবন ঘিরে ১৭০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চার বছরের মধ্যে বিনিয়োগ উঠে আসবে। সেই হিসাবে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ চার টাকার বেশি হবে না।

বিগত সরকারের সময়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নেত্রকোণার চল্লিশা ইউনিয়নের বিল সুলঙ্গীতে ৫০ মেগাওয়াটের প্রকল্প করা হয়।

প্যারাগন বাংলাদেশ, রাইজেন এনার্জি ইউকে ও সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি যৌথ প্রকল্প থেকে প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৫ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে সরকার।

একই বছর খুলনার রূপসা উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৯২ পয়সা হিসেবে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়েছিল।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অনাবাদি চরের ৬৫০ একর জমিতে গড়ে উঠা দেশের সর্ববৃহৎ (২০০ মেগাওয়াট) সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতি ইউনিট ১৫ সেন্ট বা ১৬ টাকা ৬০ পয়সা দরে কেনার ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়।

পাবনার হেমায়েতপুরে ১০০ মেগাওয়াটের প্যারামাউন্ট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল প্রতি ইউনিট ১১ দশমিক ৯ সেন্ট বা ১৩ টাকা ৯ পয়সায়।

বাগেরহাটের মোংলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ওরিয়ন গ্রুপ, যেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ সেন্ট।

অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই বাতিল করা হয়েছে। তবে এর আগে যেসব প্রকল্প উৎপাদন শুরু করেছে সেগুলোতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ১১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা পর্যন্ত।

 

সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে অংশ নেওয়া জুলস পাওয়ারের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, “সরকার সঠিক অ্যাসেসমেন্টে ছাড়াই প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতের একটা টেন্ডার ছেড়েছে।

“স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের অনেক ঝুঁকি আছে। এসব ঝুঁকির বিষয়ে স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রতি টেন্ডারে নেই। বিদ্যুতের ট্যারিফের ক্ষেত্রেও একটা ধরাবাধা রয়েছে। এসব কারণে এই প্রস্তাব আকর্ষণীয় হয়নি। আমরাও বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছি না।”

সরকারের সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যবসা করা আরেক প্রতিষ্ঠান রেনকন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার মুহাম্মদ সুবায়েল বিন আলম বলেন, “এসব প্রকল্পে ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ অনেক বেশি। সরকার নিজেদের ওপর দায় না রাখে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কোনো কারণে প্যানেলগুলো সরাতে হলে তার কোনো গ্যারান্টি সরকার দিচ্ছে না।”

বিদ্যুতের সম্ভাব্য দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সরকার বলছে বাল্ক রেট (পাইকারি মূল্য) থেকে খুচরা মূল্য কম রাখতে হবে। আবার এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স যুক্ত। রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের খরচ বেশি হবে। হয় মূল্য বাড়াতে হবে অথবা ন্যূনতম গ্যারান্টি দিতে হবে।”

Manual6 Ad Code

“সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি টাকায় বিদ্যুৎ নিচ্ছে। প্রতি ইউনিট ২৬ টাকা, ৪০ টাকায়ও বিদ্যুৎ কিনছে। অন্যদিকে নবায়নযোগ্যকে পাইকারি মূল্যসীমা দিয়ে রাখছে। তাহলে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে কীভাবে উৎসাহ দেওয়া হল?”

ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবেল এনার্জি এজেন্সি’র (আইআরইএনএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভারতে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৭.১৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩৯.৭ শতাংশ উৎপাদন হলেও বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ৫.৬ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আর ২০৪০ সালের মধ্যে এই পরিমাণ ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code