প্রজন্ম ডেস্ক:
প্রকৃতিতে শীতের পূর্বাভাস নিয়ে আসে হেমন্তকাল। শিশিরভেজা সকাল, হালকা কুয়াশায় শীতের আমেজ স্পষ্ট হতে থাকে। তবে কার্তিক-অগ্রহায়ণ পেরিয়ে বাংলা দিনপঞ্জিকায় পৌষ এসে গেলেও দেখা নেই শীতের। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় শীতের আমেজ কিছুটা অনুভূত হলেও শীতের প্রকোপ নেই অন্য কোথাও। রাজধানীতে এখনও বৈদ্যুতিক পাখার ঘূর্ণনে মিলছে ঠান্ডা হাওয়া। আবহাওয়া ও পরিবেশবিদদের আশঙ্কা প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ মূলত অশনিসংকেত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘চলতি মাসে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কুয়াশার মাত্রা বাড়বে। এতে করে শীতের কিছুটা প্রকোপ বাড়বে।’ এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘গত ১০ বছর যাবৎ শীতের প্রকোপ কম। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণভাবে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের ফলে শীতকাল কমছে।’
কী বলছে গবেষণা
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়ের আবহাওয়া বিভাগের যৌথ ‘দ্য ফিউচার ক্লাইমেট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো না গেলে তাপমাত্রায় নাটকীয় পরিবর্তন আসবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো না গেলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ২০৪১-২০৭০ সালে ঋতুভেদে গড় তাপমাত্রা বাড়বে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ২০৭১ থেকে ২১০০ সালে একই সময়ে সেটি বেড়ে দাঁড়াবে দেড় থেকে সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০৪১-৭০ সালে বাড়বে ১ থেকে আড়াই ডিগ্রি এবং ২০৭১ থেকে ২১০০ সালে একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়াবে দেড় থেকে ৪ ডিগ্রি। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০৪১-৭০ সালে বাড়বে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি এবং ২০৭১ থেকে ২১০০ সালে ৩ থেকে সাড়ে ৪ বা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ধীরে ধীরে দেশের কয়েকটি বিভাগ থেকে শীতকাল হারিয়ে যাবে।
এদিকে আরেকটি গবেষণাপত্র ‘চেঞ্জিং ক্লাইমেট অব বাংলাদেশ শীর্ষক’ গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে শীতকালে সূর্যের আলো কমেছে। সবচেয়ে বেশি রংপুরে কমছেÑ শূন্য দশমিক ৯; ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে কমেছে শূন্য দশমিক ৮ এবং সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশালে কমছে শূন্য দশমিক ৫ ও খুলনায় শূন্য দশমিক ১। অর্থাৎ রংপুর, ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে রাতের তাপমাত্রা বেড়ে ধীরে ধীরে শীত হারিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, এ দুটি গবেষণায় যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ, আফরোজা সুলতানা এবং এস এম কামরুল হাসান অন্যদিকে নরওয়ের পক্ষে ছিলেন কাজসা পারদিন, হেনস অলাভ হাইজেন ও জন ইভেন নিলসেন। গবেষণার বেইজলাইন ধরা হয় ১৯৮৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।
ধানের জন্য ক্ষতিকর
রাতের তাপমাত্রা বাড়লে তা ধান চাষের জন্য ক্ষতিকর বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও এগ্রো-ক্লাইমেট চেঞ্জ এক্সপার্ট ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মিলন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে রাতের তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে শীত কম অনুভূত হচ্ছে। রাতের তাপমাত্রা বাড়া ধানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কেননা দিন ও রাতের তাপমাত্রার একটা নির্দিষ্ট পার্থক্য আছে। সেটি না থাকলে ধানের দানা পুষ্ট হয় না। এতে ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি কৃষির জন্যও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
রাতের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে ১০ শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে ড. কামরুজ্জামান মিলন বলেন, ‘এখন রাতের তাপমাত্রা সহনশীল জাত উদ্ভাবনে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। আমরা যে সময় ধানের চারা রোপণ করতাম সেই সময় পাল্টাতে হবে। ক্রপিং প্যাটার্ন বদলাতে হবে।’
এদিকে শীতের তীব্রতা কম অনুভূত হলে তা ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী হলেও গমের জন্য উল্টো জানিয়ে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো আব্দুল হাকিম বলেন, ‘রাতে শীতের তীব্রতা কম হলে বা এমনিতেই শীত কম থাকলে ভুট্টা উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না। বর্তমানে শীতের যে তীব্রতা তা ভুট্টাচাষের জন্য অনুকূলে। তবে শীতের তীব্রতা কম হলে গমগাছের কুশি কম হবে।’
শীতকালীন সবজিতে পোকামাকড় বাড়বে
শীত না থাকলে ফসলের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারেÑ এ সম্পর্কে জানতে চাইলে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘বেশি শীত ও কুয়াশা না থাকা বোরো ধানের বীজতলার জন্য ভালো, এতে চারা ভালো হয়। পরিষ্কার আবহাওয়ায় রবি শস্যেরও ফলন ভালো হবে। তবে ৮-১০ দিনের মধ্যে শীত না পড়লে সবজির স্বাদ হবে না। কেননা শীতকালীন সবজিতে শীতের অভাব থাকলে সবজি মজাদার হয় না।’
শীতে ফসলের রোগবালাই সম্পর্কে অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘শীতকালে শীত পড়লেই ভালো, তবে কুয়াশা নয়। শীতে তাপমাত্রা কমলেও যদি ঝকঝকে রোদ থাকে তাহলে গাছের সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয়। কিন্তু শীতের তীব্রতা না থেকে যদি আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে তাহলে পোকার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সালোকসংশ্লেষণ হয় না।’
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com