প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কারাগারে ভিআইপি বন্দিরা তামিল মুভি দেখেন!

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
কারাগারে ভিআইপি বন্দিরা তামিল মুভি দেখেন!

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন ৬৫ জন, যারা ভিআইপি বন্দি নামে পরিচিত। এই বন্দিদের কারাগারে কীভাবে সময় কাটছে, তা নিয়ে মানুষের রয়েছে কৌতূহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সময় কাটছে গল্প করে ও আড্ডা দিয়ে। তারা দুজন একই রুমে থাকছেন। এ ছাড়া তারা ইসলামি বই পড়েও সময় কাটান। সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র একসঙ্গে আড্ডা দিয়ে ও গল্প করে সময় কাটান।

পুলিশের সাবেক দুই আইজি এ কে এম শহীদুল হক ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দাবা খেলে সময় কাটান। এ ছাড়া লাইব্রেরিতে গিয়ে তারা বইও পড়েন। অন্যদিকে নিয়মিত পত্রিকা পড়েন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আর সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বেশির ভাগ সময়ই গুনগুন করে গান করেন। একটি সূত্রের দাবি, তার সুন্দর কণ্ঠের সুখ্যাতি ইতোমধ্যে কারাগারে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

সূত্রমতে, সুযোগ পেলে হাঁটতে বের হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। তবে বেশির ভাগ সময় তিনি বিষণ্ন থাকেন। এ ছাড়া সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশ কর্মকর্তা কাফি ও সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ে সময় কাটান।

কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে বিশেষ ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন সাবেক সরকারদলীয় এমপি, অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ ভিআইপি বন্দি গল্প করে, আড্ডা দিয়ে, বই পড়ে, দাবা ও লুডু খেলে সময় কাটান। কেউবা টেলিভিশন দেখেন আবার কেউবা রেডিও শুনেও সময় কাটান।

তবে কারাগারে দুটি গ্রুপ রয়েছে বলে জানা গেছে, একটি হলো পুলিশ ও সরকারি আমলাদের গ্রুপ; অন্যটি হলো রাজনৈতিক মন্ত্রী-এমপিদের গ্রুপ। সূত্রের দাবি, এই দুই গ্রুপের কেউ পারতপক্ষে পরস্পরের মুখোমুখি হন না। কথাবার্তাও খুব একটা বলেন না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অবসান হয় তাদের প্রায় ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের। সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাপুটে অনেক কর্মকর্তাই গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে।

কারা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কেরানীগঞ্জে এখন বিশেষ ও শ্রেণিপ্রাপ্ত ৬৫ জন বন্দির মধ্যে সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামছুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ আরও অনেকে রয়েছেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ অনেক সরকারি আমলা। যাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, এডিসি আব্দুল্লাহিল কাফি, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েলসহ আরও অনেকে।

 

Manual3 Ad Code

ভিআইপি বন্দিরা তামিল মুভি দেখেন

সূত্র জানায়, কারাগারে ভিআইপি বন্দিরা তামিল মুভি দেখেন। কারাগারের ডিভিশন থেকে শুরু করে হাসপাতাল, সেল, সাধারণ ওয়ার্ড সবখানে এলইডি টিভিতে দিন-রাত প্রায় সারা দিন মুভি চলে। পেনড্রাইভের মাধ্যমে এসব মুভি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছে। কারাগারে অধিকাংশ বন্দি তামিল মুভি দেখেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। এ ছাড়া তুরস্কভিত্তিক বেশ কিছু সিরিয়ালও দেখেন অনেকে।

হাঁটতে বের হন ভিআইপি বন্দিরা

কারাগারে সাধারণ বন্দিরা জিমে যেতে পারেন, গান-বাজনা ও আর্ট শিখতে পারেন। এ ছাড়া মক্তবে কোরআন শিখতে পারেন। নিরক্ষরদের বাংলা ও ইংরেজি শেখার সুযোগ রয়েছে। কম্পিউটার শেখার আগ্রহ থাকলে তারা যেতে পারেন শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবে। তবে ভিআইপি বন্দিরা নিরাপত্তাজনিত কারণে এসব জায়গায় যেতে পারেন না। বিকেলে সাধারণ বন্দিদের যখন লকআপে দেওয়া হয়, তখন বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ভিআইপি বন্দিরা হাঁটতে বের হন। সাধারণ বন্দিদের বিকেলে লকআপ করা হলেও ভিআইপি বন্দিদের রুমের দরজা বন্ধ হয় রাত ৯টার দিকে।

আগে বিশেষ বন্দিদের থাকার জায়গায়গুলোতে বন্দি থাকা অন্য কয়েদিরা যেতে পারলেও এখন এ বিষয়ে রয়েছে কড়াকড়ি। শুধু দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন। এ ছাড়া প্রতিদিনই বিশেষ বন্দিদের থাকার রুমগুলো নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে ও চেক করা হচ্ছে।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, ডিভিশন পাওয়া বন্দিরা যেসব কক্ষে থাকেন সেসব কক্ষের আয়তন ১০ থেকে ১২ ফুট। এসব কক্ষে রয়েছে একটি খাট, একটি চেয়ার, একটি টেবিল ও টেলিভিশন। এ ছাড়া অ্যাটাচড একটি ওয়াশরুম রয়েছে। তবে রাতে ঘুমানোর সময় কাউকে মশারি দেওয়া হয় না। এই আয়তনের একটি রুমে এক বা একাধিক বন্দি থাকেন।

বিশেষ বন্দিদের জন্য কারাগারে আলাদা রান্না হয়। সকালের নাশতার জন্য রুটি, ডাল, সবজি ও জেলি বরাদ্দ থাকে। এ ছাড়া দুপুর ও রাতের খাবারের মেন্যুতে থাকে ভাত, মাছ, মাংস ও ডাল। তবে সাধারণ বন্দিরা একবেলা মাছ ও মাংস পান।

Manual1 Ad Code

কারা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৯৩৭ এবং নারী ১ হাজার ৯২৯ জন। কিন্তু কারাগারগুলোতে বর্তমানে মোট বন্দি আছেন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া এখন বিশেষ বন্দিদের চাপ বাড়ছে।

Manual6 Ad Code

এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং পুলিশ ও আমলারা। এই বিশেষ বন্দির সংখ্যা এখন ৬৫ জন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আমরা ধারণা করছি। বিশেষ বন্দিরা ডিভিশন পেয়ে থাকেন। কারাগারে ডিভিশন মানে আলাদা একটি নির্ধারিত ভবনে থাকার সুযোগ। সাধারণ বন্দিদের তুলনায় ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের খাবারের তালিকায় দু-একটি ভালো মানের খাবার থাকে। তবে বেশির ভাগ খাবারই সাধারণ বন্দিদের মতো।’

কারাগারে নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি কারাগার সংস্কার করা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ বন্দিদের থাকার জায়গাগুলোতে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে ও দায়িত্বরতদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, বিশেষ বন্দিরা ১৫ দিন পর এক দিন পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দিন মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ রয়েছে।

Manual8 Ad Code

 

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code