প্রজন্ম ডেস্ক:
দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে শীর্ষ ছাত্রসংগঠনগুলোর মতভেদ বাড়ছে। এই ইস্যুতে কথা বলছেন শীর্ষ রাজনীতিবিদরাও। তবে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা উদ্যোগের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যদিও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ-সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন।
গত মঙ্গলবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল দায়ী করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরকে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবির দায়ী করছে ছাত্রদলকে। এই ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, বিবৃতি ও কর্মসূচির কারণে ক্যাম্পাসগুলোতে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এরই মধ্যে কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে সব ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
কুয়েটের আহত শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বহিরাগত যুবদল নেতার রামদা হাতে ছবি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। অনেকে বলছেন, ক্যাম্পাসে আবারও পেশিশক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা হচ্ছে এবং এ জন্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করতে যাওয়া জুলাই আন্দোলনের পরিপন্থি। অনেক অভিভাবক সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে এ ধরনের কার্যকলাপ ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বেমানান।
সংষর্ষের পর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়। তারা ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। এসব কর্মসূচিতে দেওয়া ‘জবাই কর’ স্লোগান দেওয়ার ভিডিও আলোচনায় আসে। এ ঘটনা নিয়ে ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপান ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। তারা বলেছেন, কুয়েটে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধীর ওমর ফারুক, মনিটরিং করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
এ নিয়ে ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে ছাত্রশিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, দায় চাপানোর রাজনীতি এখন চলে না। এই প্রজন্ম যথেষ্ট সচেতন। দখলদারত্বের মনোভাব পরিহার করে, শিক্ষা ও সেবামূলক ছাত্ররাজনীতির ধারায় ফিরে আসুন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামর্থ্যের আলোকে ভূমিকা রাখুন। উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্যরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে ছাত্রদলের পরিণতি ছাত্রলীগের মতো হবে উল্লেখ করেন।
কুয়েটের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মতামত আসছে। অনেকে ক্যাম্পাসে এ ধরনের পরিস্থিতিকে নব্বইয়ের দশকের রাজনীতির সঙ্গে তুলনা করছেন। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অন্য ক্যাম্পাসগুলোতেও এ রকম পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের আশঙ্কা নিয়ে পোস্ট করা আরাফাত ওসমানীর স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘ছাত্রদল-ছাত্রশিবির যদি এই মুহূর্তে মুখোমুখি হয়, নিশ্চিতভাবে বলা যায় কোনো পক্ষই সহজে পেছাবে না। উভয়ই নিজের অস্তিত্বের লড়াই জ্ঞান করে মারামারি করবে। হয়তো ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে স্মরণকালের সর্বোচ্চ হতাহত ও লাশ দেখতে হবে এবার।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যেভাবে নিজ নিজ অফিশিয়াল প্যাডে একে অন্যের নাম উল্লেখ করে দায় আরোপ ও হুমকিধমকি দিচ্ছে, এটা খুব খারাপ ভবিষ্যৎই ইঙ্গিত করছে। আমার মনে হয়, এদের প্যারেন্ট সংগঠনের সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা অতি জরুরি এবং একান্ত অপরিহার্য।’
কুয়েটে রামদা হাতে যুবদল নেতার ছবি ভাইরাল হলে সেটিকে ২০১৪ সালের ছবি হিসেবে প্রচার করেন ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী। কিন্তু পরে ছবিটি এখনকার বলে প্রমাণিত হলে সেই যুবদল নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে ছাত্রদল কর্তৃক ছাত্রশিবিরকে গুপ্ত সংগঠন হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের সব কমিটির নেতা-কর্মীদের পরিচয় প্রকাশ করতে বলা হয়। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। ফলে ছাত্রশিবির কারা সেই তালিকা প্রকাশের দবি ওঠে। তবে ছাত্রশিবির সন্দেহে মারধর করাকে বৈধ করতে চাওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। জুলাই বিপ্লবের পর এ ধরনের কার্যকলাপ না মানার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আবারও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
সরকার পতনের পর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির ধরন নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কখনো নিষিদ্ধ, কখনো লেজুড়বৃত্তি বন্ধ বা আবাসিক হল রাজনীতিমুক্ত রাখার দাবি আসছে। অনেকে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতির চেয়ে কার্যকর ছাত্র সংসদ চালু রাখার পক্ষে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছে। তবে ছাত্রদলের বাধার কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা যায়নি। ডাকসু নিয়েও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর অধিকাংশ ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সেই নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে অকার্যকর হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়। সাম্প্রতিক ঘটনায় অনেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলাপ তুলছেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com