প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

লংমার্চের চিন্তা বিএনপির তিন সংগঠনের

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ণ
লংমার্চের চিন্তা বিএনপির তিন সংগঠনের

Manual2 Ad Code

তারিকুল ইসলাম:
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে লংমার্চ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে ঢাকা টু আখাউড়া পর্যন্ত এ লংমার্চ করতে পারে। এ লক্ষ্যে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন সংগঠনের বৈঠক রয়েছে। সেখানে লংমার্চের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

Manual6 Ad Code

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিন সংগঠনের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেতারা জানান, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন ভারতের আগরতলার এপারে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত লংমার্চ করতে চান তারা। তা ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Manual3 Ad Code

তিন সংগঠনের নেতারা আরও জানান, বিএনপি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেন দেশপ্রেম সবার আগে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। জনগণও এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ আছেন। আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলার ষড়যন্ত্র চলছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া উচিত ন্যায্যতার ভিত্তিতে। বাংলাদেশের মানুষও সম্পর্ক চায়। কিন্তু ভারতের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে সে দেশের সরকার বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। তাই তাদের আগের নীতি পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ কী চায় তার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও জামিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন দেখা দেয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কিছু মহল এবং মিডিয়া প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। চিন্ময় ইস্যুসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পর ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা-ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিসেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকেও তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশ্য বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা ও পতাকা অবমাননায় বাংলাদেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ দেখা দেয়। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল এ ঘটনার প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে আক্রমণ পূর্ব-পরিকল্পিত। উগ্রবাদীদের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের সংগঠনের সদস্যরা সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে আক্রমণ করেছে তা পূর্ব-পরিকল্পিত বলে ধারণা হয়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ। মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসাবে বাংলাদেশে-ঘৃণার ব্যবহার উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে। আশা করব, নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন ও বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনকালে যেসব নেতা ভারতে অবস্থান করছেন তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বিচারে সহায়তা করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ভারতের এমন আচরণ কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। তারা অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তাই ভারতের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পরই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। প্রতিবাদের অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে রিজভী তার স্ত্রীর দেওয়া ভারতীয় শাড়ি ছুড়ে মারেন। পরে সেই শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন নেতাকর্মীরা। এবার এর প্রতিবাদে লংমার্চ করার চিন্তা করছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন।

Manual1 Ad Code

সূত্র জানায়, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এই লংমার্চ হতে পারে। এই কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে। যুবদলের কেন্দ্রীয় একজন শীর্ষ নেতা জানান, নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লংমার্চ শুরু করার কথা প্রাথমিক আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক বড় গাড়িবহর নিয়ে এই কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনা তাদের। পথিমধ্যে নিজ নিজ জেলার নেতাকর্মী গাড়িবহর নিয়ে অংশ নেবেন। লংমার্চের শুরুতে এবং শেষে দুটি সমাবেশ হতে পারে। আজকের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি সফল করতে কয়েকটি টিমও গঠন করা হতে পারে। যারা সংশ্লিষ্ট জেলার সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করবেন এবং নানা দিকনির্দেশনা দেবেন। সবকিছু আজ বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code