প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘নারী ফুটবলারদের ভাত খাওয়ানোর টাকাও ছিল না’

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৪, ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ণ
‘নারী ফুটবলারদের ভাত খাওয়ানোর টাকাও ছিল না’

Manual7 Ad Code

স্পোর্টস ডেস্ক:
পরপর দুই বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। দেশের মানুষকে চমকে দিয়েছেন। দেশকে সম্মানের বড় জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। তাদের উঠে আসার পেছনে ছিল অনেক না বলা কথা। অজানা অনেক কিছুই ছিল, যা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

Manual5 Ad Code

অপ্রকাশিত অনেক কথা প্রকাশ করলেন বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরন। জানালেন, আজকের সাফল্যে সবাই ভালোবাসা জানাচ্ছে, মেয়েদেরকে আদর করছে। অথচ এই দলটা কিভাবে আজকের জায়গায় এসেছে, সেই গল্পের খানিকটা অংশ সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে আনলেন কিরন।

তিনি জানান, তার ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েদের ফুটবল প্রতিভা খুঁজে বের করতে পরিকল্পনা করা হয়। কিরন বলেন, ‘১৪ বছর আগে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের অধীনে তিন মাসের জন্য দেশের চার ভেন্যুতে খেলোয়াড় বাছাইয়ের একটি প্রজেক্ট চালু করেছিলাম আমরা। বাছাই শেষে বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে তোলা হয় মেয়েয়দেরকে।’

Manual5 Ad Code

তখন থেকেই নারী ফুটবলারদের আবাসিক ক্যাম্প করতে গিয়ে নানা সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কিরন। সংকট মোকাবিলা না করে যদি ছেড়ে দেওয়া হতো, তাহলে আজকের পর্যায়ে নারী ফুটবল আসতে পারত না। নারী ফুটবলের আবাসিক ক্যাম্প করতে গিয়ে ফুটবলের লোকজনরাই নানা কটু কথায় পথ রুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।

তখনকার সংকটের কথা বলতে গিয়ে গতকাল দুপুরে বাফুফে ভবনে সংবাদমাধ্যমকে কিরন জানান, আবাসিক ক্যাম্পে তিন বেলা ভাত খাওয়ানোর টাকাও নাকি ছিল না। সহযোগিতায় কেউ এগিয়েও আসেননি টাকা দিতে চান না। ফুটবলের লোকজনই পদে পদে বাধা দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনোই তারা প্রশংসা করেননি।

Manual8 Ad Code

কিরন বলেন, ‘মেয়েদের অনুশীলন খরচ, মেডিক্যাল খরচ, ক্রীড়াসামগ্রী কেনার খরচ, কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলনে যাওয়া- আসার খরচ, অনুশীলনের পর আইস বাখের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার বরফ কিনতে হয়। ১ টাকাও ছিল না। কারণ স্পন্সর নেই। কালকে ভাত খাবে কিভাবে, সেই টাকাও ছিল না।’ কিরণ বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমাদের সব খরচ বহন করতে হয়েছে।’

তাহলে চলল কীভাবে? কিরন বলেন, ‘আমি এবং বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন টাকা দিয়ে কোনো রকমে মেয়েদের ক্যাম্প করার ব্যবস্থা করি। টানা ছয় বছর এভাবে চালাতে হয়েছে। এর মধ্যে সাকসেস এসেছে। তারপর ২০১৮ সাল থেকে স্পন্সর এসেছে ঢাকা ব্যাংক।’ নারী ফুটবলে আজকের এই অবস্থানের জন্য সাংগঠনিক পর্যায়ে কিরন সব কৃতিত্ব দেন কাজী সালাহউদ্দিনকে। সালাহউদ্দিন সব সময় নারী ফুটবলের পাশে ছিলেন। অনেক বাধা বিপত্তির পরও সালাহউদ্দিন কখনো পিছিয়ে যাননি। শত সমালোচনার পরও সালাহউদ্দিন নারী ফুটবলের জন্য কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন কিরন।

তিনি বলেন, ‘ফুটবলই কাজী সালাহউদ্দিনের জীবন। উনি ফুটবল ছাড়া অন্যকিছু বোঝেন না। উনার কাছে বাঁচলেও ফুটবল, মরলেও ফুটবল। বাংলাদেশে অনেক ফুটবল-বোদ্ধা রয়েছেন। কাজী সালাহউদ্দিন বেস্ট। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা উনাকে পেয়েছিলাম।’

ড. ইউনূসের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কিরন বলেন, ‘মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। সরকার মেয়েদের সংবর্ধনা দিয়েছে, আমরা উনাদেরকে ধন্যবাদ দিতে চাই। সেই সঙ্গে একটা আবেদনও রাখতে চাই। আমরা সাফ জিতেছি দুই বার। এখন আমাদের এশিয়ান লেভেলে যেতে হলে বছরে অন্তত পাঁচ-ছয়টা ফিফা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে শক্ত দলের সঙ্গে। তাতে আমাদের ফুটবলাররাও ইউরোপের ক্লাবে সুযোগ পেতে পারেন। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ফুটবল উন্নয়ন সম্ভব নয়। আগামী দিনে মেয়েদের ফুটবল উন্নতি করতে হলে সরকারকে পাশে চাই আমরা।’

Manual7 Ad Code

নারী ফুটবল দলের আজকের এই সাফল্যের পেছনে সারা বছর আবাসিক ক্যাম্প করানো, দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু রাখতে হলে সরকারের ফান্ড দরকার। পৃথিবীতে সব দেশই ফুটবল উন্নয়ন করেছে সরকারি সহযোগিতায়। এটা ছাড়া বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়ন করা সম্ভব নয় বলে জানান কিরন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code