প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

৯ গোলের ‘অ্যাবসোল্যুট সিনেমা’য় বেনফিকাকে হারাল বার্সেলোনা

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ণ
৯ গোলের ‘অ্যাবসোল্যুট সিনেমা’য় বেনফিকাকে হারাল বার্সেলোনা

Manual8 Ad Code

স্পোর্টস ডেস্ক:
এ ছাড়া আপনি ম্যাচটাকে কীইবা বলতে পারেন? এক ম্যাচে কত গল্প, একে সিনেমা না বলে উপায় আছে? মোটাদাগে এই ম্যাচ ৯টা গোল দেখেছে; লিসবন ৪-৫ বার্সেলোনা— স্কোরলাইন দেখলেই টের পেয়ে যাবেন।

তবে যা স্কোরলাইনটা বলতে পারছে না, তা হলো বৃষ্টিভেজা রাতের ম্যাচে ৩০ মিনিটে বেনফিকার ভ্যাঙ্গেলিস পাভলিডিসের হ্যাটট্রিক, বার্সার অবিশ্বাস্য একটা প্রত্যাবর্তনের গল্প, শেষ বাঁশির কয়েক সেকেন্ড আগে এক গোল, শিশুসুলভ সব ভুল, মাঠে-মাঠের বাইরে প্রতিবাদের ঝড়– এ সব কিছু এক ম্যাচেই হয়েছে। আর তাতে চলতি মৌসুম তো বটেই, বার্সেলোনা আর বেনফিকা মিলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে উপহার দিয়ে দিয়েছে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক ম্যাচ।

এস্তাদিও দে লুজ — মাঠটা বার্সেলোনাকে আজীবনের এক বিভীষিকা উপহার দিয়েছে বছর চারেক আগে। লিওনেল মেসির বার্সেলোনাকে এই মাঠেই ৮-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ, যার ‘খোঁচা’ এখনও বার্সাকে সহ্য করতে হয়। সেই ম্যাচের বায়ার্নের কোচ কে ছিলেন জানেন? হানসি ফ্লিক, যিনি আবার এখন বার্সা-বস। ম্যাচের আগে স্থানীয় এক সাংবাদিক তাকে সে প্রসঙ্গে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তবে সুকৌশলে সে বিষয়টা এড়িয়ে ফ্লিক জানান, তিনি তার দলকে উজ্জীবিত করছেন সেবারের ফাইনালের গল্প শুনিয়ে, সেটাও এই মাঠেই হয়েছিল, বায়ার্ন নেইমার-এমবাপের পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাসের দ্বিতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় ট্রেবল জিতেছিল।

তবে মাঠে সফরকারীরা যেভাবে শুরু করেছিল ম্যাচটা, তাতে মনে হচ্ছিল বার্সাকে বুঝি আরও একবার অনন্ত আঁধারেই ডোবাতে চলল এস্তাদিও দে লুজ, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘আলোর মাঠ’।

প্রতিপক্ষ শিবিরে আছেন কোনো এক গ্রিক, এ দৃশ্যটাও খুব বেশি সুখকর নয় বার্সার জন্য। বছর আটেক আগে এক গ্রিক কস্তাস মানোলাসের গোলে রোমার মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল বার্সাকে, রোমার কাছে সে হারই বার্সেলোনার দুঃসময়ের প্যান্ডোরার বাক্সটা খুলে দিয়েছিল।

এস্তাদিও দে লুজ আর গ্রিক, দুয়ের মিশেলে বার্সেলোনা ৩০তম মিনিটেই যেন নরক-দর্শন পেয়ে গিয়েছিল। গ্রিক ভেঙ্গেলিস পাভলিদিস গোল করলেন দ্বিতীয় মিনিটে। ২২ মিনিটে ভয়চেখ স্টেন্সনি রীতিমতো শিশুসুলভ এক ভুল করে বসলেন। বক্সের বাইরে এসে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে সতীর্থ অ্যালেক্স বালদের পায়ে মেরে বসেন বলটা। দুই জনই ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছিলেন, সুযোগসন্ধানী পাভলিদিসের গোল লিসবনকে এগিয়ে দেয় আবার।

মাসকয়েক আগে অবসর ভেঙে ফেরা স্টেন্সনি এরপর আরও এক ভুল করেন। বক্সে প্রতিপক্ষকে ফাউল করে বসেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিকটা পূরণ করতে ভোলেননি পাভলিদিস। প্রথম গোলের পর রবার্ট লেভান্ডভস্কির গোল বার্সাকে সমতায় ফিরিয়েছিল বটে, কিন্তু পরের দুই গোল, রক্ষণের ওভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া দলটাকে চোখরাঙানি দিচ্ছিল ওই ৮-২ এর মতো কিছুরই। প্রথমার্ধটা ওই চোখরাঙানিতেই শেষ করতে হলো দলটাকে।

দ্বিতীয়ার্ধেও যে পরিস্থিতিটা খুব বদলে গেল, বিষয়টা তেমনও ছিল না। রাফিনিয়ার গোলে বার্সা ব্যবধান যেই না কমাল, এর ৪ মিনিট পর ভুল করে বসলেন রোনাল্ড আরাউহো। প্রতিপক্ষের বাড়ানো বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন তিনি।

Manual4 Ad Code

ওহ হ্যাঁ! বার্সা যে এর আগে গোলটা করল, তাতেও আছে ভুলের ‘অবদান’। ৬৪তম মিনিটে বেনফিকার গোলরক্ষক আনাতোলি ত্রুবিন গোল কিকে নিয়েছিলেন। বক্সের ঠিক বাইরেই থাকা রাফিনিয়া পেতে দেন মাথা, ২৫ গজ দূর থেকে তার এই হেডার জড়ায় জালে! এর ৪ মিনিট পর বেনফিকার ওই গোলে ৪-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে সফরকারীরা।

Manual7 Ad Code

৭৮ মিনিটে বক্সে ফাউলের শিকার হন পুরো ম্যাচে বেনফিকা লেফটব্যাক আলভারো কারেরাসের কাছে বোতলবন্দি হয়ে থাকা লামিন ইয়ামাল। বার্সা পেয়ে যায় পেনাল্টি, তা কাজে লাগান রবার্ট লেভান্ডভস্কি। এরপর বার্সা সমতাসূচক গোলের দেখা পায় নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট বাকি থাকতে। পেদ্রি গনজালেসের ক্রস এরিক গার্সিয়ার মাথায় গিয়ে পড়ে, বদলি হিসেবে নামা এই ডিফেন্ডার দারুণ এক হেডারে বল নিয়ে আছড়ে ফেলেন স্বাগতিকদের জালে।

ম্যাচে এত কিছু হয়েছে, রেফারিং নিয়ে বিতর্ক না হলে বিষয়টা ঠিক জমছিল না যেন। সেটা হলো একেবারে অন্তিম সময়ে। আনহেল দি মারিয়ার ফ্রি কিক বক্সে গিয়ে পড়ে, সেখানে থাকা নিকলাস ওতামেন্দি প্রথমে, এরপর লিয়ান্দ্রো বারেইরো বক্সে পড়ে যান, ফাউলের আবেদনও তুলেছিলেন সমস্বরে, তবে তাতে রেফারি সাড়া দেননি একটুও। সে আক্রমণটাই বার্সাকে এনে দিল জয়সূচক গোলটা।

Manual5 Ad Code

ম্যাচের ৯৫ মিনিট ধরে কখনও পিছিয়ে কখনও সমতায় থাকা বার্সেলোনা এগিয়ে যায় প্রথম বারের মতো। ফেররান তরেসের বাড়ানো লং বল গিয়ে ডান উইংয়ে থাকা রাফিনিয়াকে খুঁজে পায়। বার্সার দ্বিতীয় গোলটি করা এই ফরোয়ার্ড এরপর ঠাণ্ডা মাথায় বল জড়ান জালে।

আর তাতেই মহা নাটকের শেষ প্রস্থে গিয়ে শেষ হাসিটা ফোটে বার্সেলোনার মুখে।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code