প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রোজা কেন রমজান মাসে ফরজ হলো

editor
প্রকাশিত মার্চ ৫, ২০২৫, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ
রোজা কেন রমজান মাসে ফরজ হলো

Manual7 Ad Code

মুফতি বিলাল হুসাইন খান:
নবীকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের রোজা পালনের জন্য যে রমজান মাসটি নির্ধারিত হয়েছে, তা বলা বাহুল্য।

তবে উম্মতে মুহাম্মাদীর রোজা পালনের জন্য রমজান মাসটিকে কেন নির্বাচন করা হয়েছে, এর সঠিক হিকমত বা যৌক্তিক কারণ তো আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। কিন্তু কুরআন-সুন্নাহতে দৃষ্টি মেলালে এ কথা বলা যায় যে, এ পবিত্র রমজান মাসের কতিপয় বৈশিষ্ট্য এমন রয়েছে, যেগুলো শুধু এ মাসের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট।

এ মাসটি ব্যতিত অন্য কোনো মাসের ঐ সব বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়নি। যেমন-
এক. এ মাসে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব আল কুরআনুল কারীমসহ সব আসমানি কিতাব ও সহীফাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে।

দুই. এ রমজানুল মুবারকে নফল ইবাদতের সওয়াব একটা ফরজের সমতুল্য হয়ে যায় এবং একটা ফরজ আদায়ের সওয়াব ৭০ ফরজের সমতুল্য হয়ে যায়।

তিন. এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।

চার. এ মাসে বড় বড় শয়তানদেরকে বেঁধে রাখা হয়, যদ্দরুন সে সেসব পাপ করাতে পারে না, যা অন্য মাসে করানো সম্ভব।

পাঁচ. রমজান মাসের আরো একটি বড় কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসটি বরকত, রহমত ও নাজাতের মাস।

হজরত উবাদাহ বিন ছামেত রা. থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের কিছুদিন পূর্বে ইরশাদ করেন : ‘রমজান মাস প্রায় আগত, যা বড়ই বরকতের মাস। আল্লাহ তাআলা এ মাসে তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাছ রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহগুলো মাফ করে দেন, দোয়া কবুল করেন, ইবাদতের প্রতি তোমাদের আগ্রহ ও প্রতিযোগিতা দেখতে থাকেন এবং ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করতে থাকেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলাকে সৎকর্ম করে দেখাও। হতভাগা ওই ব্যক্তি, যে এই মাসে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত থাকে।’

রোজার হিকমত

যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী (রহ.) তার কিতাবে রোজার বিশেষ ৩টি হিকমত লিখেছেন।

Manual2 Ad Code

১. মানব প্রকৃতির দাবি এই যে, তার জ্ঞান ও বিবেক সর্বদা প্রবৃত্তির উপর শক্তিশালী ও বিজয়ী হয়ে থাকবে। কিন্তু মানবীয় দুর্বলতার কারণে অনেক সময় তার প্রবৃত্তি আপন জ্ঞান ও বিবেকের উপর বিজয়ী হয়ে যায়, অতএব প্রবৃত্তির সংশোধন ও পরিশুদ্ধির জন্য ইসলাম রোজাকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে গণ্য করেছে।

২. যে ব্যক্তি ক্ষুধা ও পিপাসার শিকারই হয়নি, সে ক্ষুধা ও পিপাসার জ্বালা কীভাবে উপলব্ধি করবে এবং অনন্ত রিযিকদাতা মহান আল্লাহর নেয়ামতসমূহের পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা কি করে আদায় করতে পারবে? মুখের দ্বারা কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও পাকস্থলীতে ক্ষুধা ও পিপাসার প্রভাব ও শিরাসমূহের যথার্থ কৃতজ্ঞতা আদায়ে সক্ষম হবে না।

কেননা, যখন কারো প্রিয় কাঙ্খিত ও আকর্ষণীয় বস্তু কিছুকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়, তখনই কেবল তার অন্তর ওই জিনিসের মূল্য উপলব্ধি করতে পারে।

Manual1 Ad Code

৩. রোজা খোদাপ্রেমের এক বিরাট নিদর্শন। কোনো মানুষ যেমন কারো প্রেমে মত্ত হয়ে পানাহার ছেড়ে দেয় এবং নিজ স্ত্রীর ভালোবাসার কথাও ভুলে যায়, তদ্রূপ রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর প্রেমে মত্ত হয়ে এ অবস্থাটিই প্রকাশ করে। এ কারণেই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে রোজা রাখা জায়েয নেই।

Manual3 Ad Code

আবার এ ত্যাগ-বিসর্জনের কারণে রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহপাক নিজ হাতে দিবেন। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, বরং আল্লাহ তাআলা নিজেই রোজার প্রতিদান হয়ে যাবেন।

লেখক: শিক্ষক, লেখক ও ধর্মীয় আলোচক

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code