প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

টিকটকে আসক্ত হচ্ছে বিয়ানীবাজারের তারুণ্য

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ণ
টিকটকে আসক্ত হচ্ছে বিয়ানীবাজারের তারুণ্য

 

স্টাফ রিপোর্টার:

বর্তমানে বহুল ব্যবহূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে টিকটক একটি আলোচিত নাম, যেটি সম্পর্কে শোনেনি এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিনোদনের এটি অন্যতম মাধ্যম। আর এই আলোচিত টিকটক অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়ছে বিয়ানীবাজারের তারুণ্য। নিজেকে আকর্ষনীয় দেখাতে এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীরা টিকটকে নানা ঢঙে সাজছে। তারা বিভিন্ন স্পটে গিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি ভিডিও করে তা টিকটকে যুক্ত করছে। যেসকল তরুণ-তরুণী এই টিকটকে ভিডিও যুক্ত করছে, তারা ৭ম শ্রেণি থেকে ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থী। এই তারুণ্য ছদ্মনামে আইডি ব্যবহার করে টিকটক ভিডিও তৈরী করে মিউজিক অ্যাপ ব্যবহার করছে। তারপর সেই ভিডিওগুলো যুক্ত করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক অ্যাপে।

রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, এমনকি শহীদ মিনার, বাসার বারান্দাসহ যেখানে সেখানে তৈরি করছে ভিডিও। গানের সঙ্গে অঙ্গভঙ্গি মিলিয়ে তৈরি এসব ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপে আপলোড করা হচ্ছে। মানহীন এসব ভিডিও বানাতে গিয়ে বিপথগামী হচ্ছে অনেকে। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণীরা। সম্প্রতি বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কলেজ রোডে দুই তরুণ চটের ছেঁড়া বস্তা পরে টিকটক করতে আসলে বাঁধার মুখে পড়ে। তাদেরকে মারধরও করা হয়।

স্থানীয় টিকটক নির্মাতারা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কেউ সহজেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টিকটক ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করতে পারে। এটা হতে পারে অভিনয়, গান, কৌতুক, ফিটনেস, ভ্রমণ, কারিগরি দক্ষতা, স্বাস্থ্য, কবিতা, মোটিভেশন ইত্যাদি। টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে শুধু ভিডিও শেয়ার করাই নয়; কেউ চাইলে এখান থেকে এমন হাজারো মানুষের ভিডিও দেখতেও পারে। একটি ভিডিও শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে তা পৌঁছে যায় লাখ লাখ টিকটক ব্যবহারকারীর কাছে। এখানে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস বা গান যে কোনো ভিডিওকে অসাধারণ করে তোলে। এ অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও বানাতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। টিকটকে একটি শর্ট ভিডিও বানাতে গড়ে তিন-চার মিনিট সময় লাগে।

এছাড়াও বিগত দিনে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস, ভবন ও শ্রেণিকক্ষে কয়েক তরুণ-তরুণী টিকটক ভিডিও তৈরি করে। এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে এসব ভিডিও মেনে নিতে পারছেন না অভিভাবকেরা। পরে কলেজ প্রশাসন ক্যাম্পাসের ভিতরে টিকটক ভিডিও ধারণ বন্ধ করে দেয়। আগের ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বিনোদনের নামে কলেজটির শ্রেণিকক্ষসহ ভবনের বিভিন্ন জায়গায় নানা অঙ্গভঙ্গিতে অশ্লীল শব্দসহ হিন্দি ভাষায় ভিডিও বানাচ্ছে কয়েকজন টিকটক আসক্ত তরুণ।

 

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো: হাবীবুর রহমান বলেন, দিন দিন তরুণ সমাজ এসব অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার ফলে তাদের লেখাপড়া ও কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো সামাজিক অবক্ষয়ের বড় কারণ। এসব বন্ধে সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য আবুল হাসান জানান, রীতিমতো সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা টিকটক ব্যবহার করে, তাদের আগামী দিনের ভবিষ্যত নষ্ট করে ফেলছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। তরুণ বা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, হয়ে উঠছে সহিংস।

কুড়ার বাজার কলেজের প্রভাষক বিজিত আচার্য বলেন, মাদকের নেশার চেয়েও ভয়ানক নেশা হচ্ছে টিকটক সেলিব্রেটি। উঠতি তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ এখন টিকটকসহ বিভিন্ন মিউজিক অ্যাপসমুখী হচ্ছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় গ্রাম পর্যায়ের তরুণ-তরুণীরা এই আগ্রাসী থাবায় আসক্ত হচ্ছে।

Sharing is caring!