প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড: সরকার চাইলে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদন কাজে লাগাতে পারে

editor
প্রকাশিত মার্চ ৮, ২০২৫, ০৯:০০ পূর্বাহ্ণ
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড: সরকার চাইলে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদন কাজে লাগাতে পারে

Manual3 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমন ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ গত ফেব্রুয়ারি মাসে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সরকার চাইলে বিচারকাজে তা কাজে লাগাতে পারে। বিশেষ করে অভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমন ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশের বিভিন্ন কোর্টে যেসব মামলা চলমান আছে, সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।

Manual8 Ad Code

এই প্রতিবেদনে কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বড় আকারের অভিযানের দিকনির্দেশনা ও তদারকি করেছিলেন, যেখানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছে বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছে, সেসবের উল্লেখ আছে। তবে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি আসলে কী কাজে দেবে অথবা অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়ায় কী ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির জানান, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমন ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য একটি ডকুমেন্টস। এই অভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমন ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সরকার চাইলে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন কাজে লাগাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে একটি স্বতন্ত্র অনুসন্ধান দলও গঠন করতে পারে, যাতে তদন্ত করে বিচারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

Manual4 Ad Code

তিনি বলেন, সরকার চাইলে এ ধরনের প্রতিবেদন দেশের ভেতরে চলমান মামলায় রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে। এটি দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও কাজে লাগানো সম্ভব, তবে এ ক্ষেত্রে সেটি কঠিন হবে। কারণ এই অভিযোগের বিষয়ে বিশ্বের অনেক দেশ বাধা প্রদান করতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মামলা করার প্রক্রিয়াটিও অনেক জটিল। বাংলাদেশ চাইলে বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রস্তাব তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের বাধার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু এ বিষয়ে মামলাগুলো চলমান আছে, তাই এ নিয়ে সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবে বলে মনে হয় না। সাধারণত নিজ দেশে যদি এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতে এ ধরনের মামলার বিচার দেশেই সম্ভব এবং সরকার সেই পথেই আছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনটি সম্প্রতি মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। মানবাধিকার কাউন্সিলের মূল সেশন না থাকলেও সাইডলাইন সেশনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ভলকার টুর্ক। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করার নিয়ম আছে, কারণ এই সেশনে সব স্টেকহোল্ডার থাকেন। তবে এ ধরনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরাসরি কারও শাস্তি নিশ্চিত করার বিধান নেই বলে জানায় সূত্র।

Manual7 Ad Code

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমন ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুর এই আট শহরে অনুসন্ধান চালায়। মূলত যে শহরগুলোতে বেশি মাত্রায় বিক্ষোভ হয়েছিল, সেসব স্থানে গিয়ে সরেজমিন কাজ করে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত দলটি।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান চলাকালে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মারা যান মিলিটারি রাইফেলের গুলিতে। ১২ শতাংশ মারা যান শটগানের গুলিতে, ২ শতাংশ পিস্তলের গুলিতে, ২০ শতাংশ মারা যান অন্যান্যভাবে। জুলাই অভ্যুত্থানে ১৩ হাজার ৫২৯ জন আহত হয়েছেন। গুলিতে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। আর গ্রেপ্তার হন ১১ হাজার ৭০২ জন। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিনিধিদল তদন্তের লক্ষ্যে ২৩০ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ১৫৩টি ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে। ১ হাজারেরও বেশি ছবি, ভিডিও, রেকর্ড, ফাইলের ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে। এ ছাড়া ৯৫৯টি ই-মেইল পায় তদন্ত দল। এসব বিষয় বিস্তারিত পর্যালোচনা করেই ১১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code