প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ও গুতেরেসের দিনটি যেভাবে গেল

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ণ
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ও গুতেরেসের দিনটি যেভাবে গেল

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশে সফরে আসার দ্বিতীয়দিন শুক্রবার কক্সবাজারে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তারা অংশ নিয়েছেন এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সলিডারিটি ইফতারে। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন আন্তোনিও গুতেরেস।

Manual3 Ad Code

জাতিসংঘের মহাসচিব সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তায় কমানোর বিষয়টি তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে জানাবেন।

Manual6 Ad Code

শুক্রবার সারাদিনই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। দিনের প্রথমভাগে ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর যেমন নিয়েছেন।

বিকালে এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে সলিডারিটি ইফতারে অংশ নেন জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ইফতারে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গারা তাদের ওপর গণহত্যা বন্ধ করা ও তাদেরকে নিজ দেশে ফেরানোর দাবি জানান।

Manual1 Ad Code

পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কিভাবে দ্রুত তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার।

Manual6 Ad Code

ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিলেন গুতেরেসশুক্রবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান জাতিসংঘ মহাসচিব।
পরে সেখানে রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার ও রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করেন তিনি।
সেখানে রোহিঙ্গাদের সংস্কৃতি ও জীবন যাপন সম্পর্কে ধারণা নেন। পাশাপাশি কিছু রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে কথাও বলেন।
সেখানে মনোযোগ দিয়ে শুনেন শরনার্থী শিবিরের নারী ও শিশুদের কথাও।
এরপর হঠাৎ গুতেরেস আশ্রয় শিবিরের কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
এসব জায়গায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের যারা জাতিসংঘ মহাসচিবকে পেয়েছিলেন তারা অনেকেই তাদের দু:খ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
অনেকে আগামী মাস থেকে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন।
এই ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নয়ন সংস্থার নেওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পগুলোও ঘুরে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
‘প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান’
২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস।
সেবারও জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বলেছিলেন।
এবার যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ প্রধান বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, তখন আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকেরও বেশি কমানোর ঘোষণা এসেছে।
যে কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সাংবাদিকদের যে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন , এসময় তিনি বলেন, খাদ্য সহায়তা কমালে লোকজন আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়বে এবং অনেকে মারাও যাবে। আমরা সেটা কোন ভাবেই হতে দিতে পারি না যে বিশ্ববাসী রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে।
তাই আমি জোরালো ভাবে এই বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবো যে- এখানে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দরকার।
সম্প্রতি ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণার কারণে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাজেট সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যা আগামী এপ্রিলের এক তারিখ থেকে কার্যকর করার কথা রয়েছে।
এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে সলিডারিটি ইফতার
বালুখালি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরত্বে কুতুপালংয়ে পড়েছে আশ্রয় শিবিরের ২০ নম্বর ক্যাম্প।
ছোট ছোট পাহাড় বেষ্টিত এই ক্যাম্পের দিকে আমরা যখন যাচ্ছিলাম, তখন পথে পথে হাজারো রোহিঙ্গা শরনার্থী ছুটছিলেন ২০ নম্বর ক্যাম্পের দিকে।
বিকেলে সাড়ে চারটা নাগাদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পাহাড়ের চারপাশ।
সাদা পোশাক হাতে প্লাকার্ড নিয়ে অংশ নেন রোহিঙ্গা শরনার্থীরা।
নিজ দেশে ফেরত যাওয়া, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের জাতিগত মর্যাদা প্রদানের দাবিও তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।
এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে পৌঁছান অন্তর্বর্তীকালী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ- জামান।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার কিছু আগে সাদা পাঞ্জাবি পরে লাখো রোহিঙ্গার সাথে সলিডারিটি ইফতারে অংশ নিতে আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তখন তাকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুস।এরপর জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, আমি আজকে আপনাদের সাথে ইফতার করতে এসেছি এটা প্রমাণের জন্য যে, আপনাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি আমার গভীর সম্মান রয়েছে। এবং এখানে আজকে এসে দাঁড়িয়েছি যেন বিশ্ববাসীর নজর এই রোহিঙ্গাদের উপর থেকে সরে না যায়।
মূলত প্রতিবছর জাতিসংঘ মহাসচিব যে কোনো একটি মুসলিম দেশে গিয়ে ‘সলিডারিটি ইফতার’ করেন। যার মাধ্যমে তিনি মুসলিম ধর্ম ও বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে তার একাত্বতার জানান দেন।
এবার জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতারে অংশ নিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে কি ধরনের পরিস্থিতি মুখে এখানে এসেছে, তা আমাকে জানিয়েছে। তারা ঘরে ফিরতে চায়, মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি, স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে সেখানে ফিরে যাওয়া হচ্ছে এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতিতি এখনও ভয়াবহ, রাখাইনেও একই পরিস্থিতি।
শেষ আশা দেখছেন রোহিঙ্গারা
গত আট বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি। ইফতারে অংশ নিতে আশা রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের আহমদ উল্লাহ বলেন, আমাদের যদি একটা সেফ জোন করে দেয়, আমরা এই মুহুর্তে ফিরে যেতে প্রস্তুত আছি।
তাদের অনেকে বলছেন, এই মুহুর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি চেষ্টা চালায় তাহলে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরো সহজ হতে পারে।
রুহ হাবিব আরকানি নামের একজন রোহিঙ্গা যুব নেতা বলেন, আমাদেরও এখানে প্রায় আট বছর হয়ে গেছে, আমরা এখন প্রত্যাবাসন চাই।
তারা আরও বলেন, আট বছর ধরে সারাবিশ্ব যেহেতু কিছুই করতে পারছে না, তাই আমরা জাতিসংঘ থেকে সেফ জোন চাই, আমাদের সেফ জোন না থাকলে আমরা ফিরে যেতে পারি না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code