প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিশ্বকবির ‌’কমলার গন্ধ’ হারিয়েছে বিয়ানীবাজার

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৮, ২০২৪, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ণ
বিশ্বকবির ‌’কমলার গন্ধ’ হারিয়েছে বিয়ানীবাজার

Manual8 Ad Code

 

মিলাদ জয়নুল:

 

Manual8 Ad Code

সিলেট তথা বিয়ানীবাজারের কমলার ঐতিহ্যের কথা কে না জানে! এই অঞ্চলে উৎপাদিত কমলার খ্যাতির কারণে এবং কথায় সিলেটি টানকে ‘কমলার গন্ধ’ আখ্যা দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এককালে বিয়ানীবাজারের পরিচিতিই গড়ে তুলেছিলো কৃষিজাত পণ্য কমলার মাধ্যমে। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, বৈরি আবহাওয়া, পাহাড়ি জমি ও মাটির উর্বরতা কমে আসাসহ বিভিন্ন কারণে কমে গেছে এখানকার কমলার উৎপাদন। ফলে চীন, ভারত, ভুটান নেপালসহ বিদেশের কমলা দখল করে নিয়েছে দেশের বাজার। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে এগুলো পাওয়া যাওয়ায় বিক্রেতারা ঝুঁকে পড়েন বিদেশি কমলার প্রতি। এতে লোকসানের আশংকায় বিয়ানীবাজারের কৃষকরাও কমলা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসছে জলঢুপী কমলা।

 

সিলেটের কমলার জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলো বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ গ্রাম। কমলার জন্য দেশের বাইরেও খ্যাতি ছিলো এই গ্রামের। এখানকার উৎপাদিত কমলা ‘জলঢুপের কমলা’ নামে খ্যাতি ছিলো। তবে এখন ধারাবাহিকভাবে কমছে এই গ্রামের কমলা চাষ। গ্রামের বেশিরভাগ চাষিই কমলা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

 

Manual6 Ad Code

‘ইতা কি জাত কমলা, শীত আইলেও শীতের সময় লকেল কমলা পাওয়া যায় না। ফলর দোকানো শুধু বাইরার কমলা। ইতার মজা-গন্ধ জলঢুপী কমলার কানদাতও যাইতো পারতোনায়’-এমনটি জানালেন কমলা কিনতে আসা লন্ডনে বসবাসকারী মিছবাহ উদ্দিন। তিনি আরো বলেন, ‘দেশর বারা থাকি হুনি জলঢুপী কমলায় বাজার ভরি গেছে। কিন্তু ইতা কই!’ সরেজমিন দেখা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি বাগানে গাছ আছে প্রায় দেড়শ’টি। এরমধ্যে তিনটি গাছে কমলা ধরেছে মাত্র ১৬টি।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণের অভাব, উদাসীনতা, গাছ ও মাটির পরিচর্যা না করার কারণে উপজেলায় কমলা উৎপাদন কমছে। বিয়ানীবাজারে এখন বছরে মাত্র ৪-৫ হেক্টর জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে কমলার চাষ হয়। যার বাজার মূল্য মাত্র দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। বিয়ানীবাজারের কমলায় স্বাদ নেই, রস নেই। তাছাড়া কমলা বাগানগুলোতে পরিচর্যার অভাব রয়েছে। এখানকার মাটি উর্বরতা হারানো এবং ফুল ফোটার সময় বেশী গরম থাকার কারণে ঝরে যায়। উপজেলার মাথিউরায় দু’টি এবং জলঢুপে মাত্র ১টি কমলার বাগান রয়েছে। আর বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কমলার চাষ হচ্ছে।

 

স্থানীয় এলাকার ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, আগে আমাদের এলাকার প্রতিটি বাড়ির পাশেই কমলার বাগান ছিলো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ কমলা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন আগের মতো গাছ ফেলে রাখলেই বছর বছর ফল ধরে না। এখন গাছ ও মাটির যত্ন নিতে হয়, পরিচর্যা করতে হয়। এখানকার কৃষকরা এসব ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন।

 

Manual2 Ad Code

জলঢুপ এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম লুকু বলেন, গত কয়েকবছর ধরেই কমলা চাষ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। গাছে কমলার ফলন আশার পর তা পরিপক্ব হওয়ার আগেই পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। ফলে পাকার আগেই কমলা গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে। এখন কমলা চাষ করে লাভের পরিবর্ততে লোকসান হচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, লোকসানের কারণে এখন অনেকেই কমলা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।

 

Manual8 Ad Code

ওই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রথমে মাটির নিচে কমলার শিকড় থেকে পানি চুষে ফেলে একধরনের সাদা পোকা। পরে গাছের শিকড় খেয়ে ফেলে। এ অবস্থায় প্রথম বছর গাছের পাতা হালকা হলুদ হয়, দ্বিতীয় বছর পাতা পুরোপুরি হলুদ হয়ে যায়, তৃতীয় বছর গাছটি মারা যায়।’

 

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, স্থানীয় বাগানগুলির সঠিক পরিচর্চা হয় না। সেজন্য প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলনও হয় না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code