প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বাংলা ইংরেজি গণিতে দক্ষতায় বিপর্যয়

editor
প্রকাশিত মে ২৯, ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ণ
মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বাংলা ইংরেজি গণিতে দক্ষতায় বিপর্যয়

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual4 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে দক্ষতা ব্যাপকভাবে কমেছে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণিতে বিজ্ঞানে ৪৮ শতাংশ এবং গণিতে ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর দক্ষতার মান বেশ খারাপ।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তৈরি ‘মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জাতীয় মূল্যায়ন-২০২৩’ গবেষণা প্রতিবেদনের খসড়ায় এ চিত্র পাওয়া গেছে।

 

 

প্রতিবেদনে ফল খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে করোনা মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামাজিক অস্থিরতা, দেরিতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়া এবং নতুন শিক্ষাক্রমের প্রচলনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে শিখন দক্ষতা বৃদ্ধিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

 

জানতে চাইলে মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম বলেন, ‘অংশীজনদের নিয়ে কর্মশালার মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদনটি শিগগির চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।’ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ শিগগির এ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে। প্রতি দুই বছর পর এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

 

Manual6 Ad Code

দেশের মাধ্যমিক স্তরের ১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম ও দশম শ্রেণির ৫১ হাজার ১১৭ শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা চালানো হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল ৮১৫টি বিদ্যালয় ও ১৮৫টি মাদ্রাসা।

 

অষ্টম শ্রেণির চার বিষয় (বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান) এবং দশম শ্রেণির তিন বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১২ জুলাই আগের বছরের ওই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছিল।

 

প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের অর্জিত দক্ষতাকে পাঁচটি স্তরে (ব্যান্ড) ভাগ করে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ব্যান্ড-২ খুবই খারাপ, ব্যান্ড-৩ খারাপ বা গড়পড়তা, ব্যান্ড-৪ মোটামুটি ভালো, ব্যান্ড-৫ ভালো এবং ব্যান্ড-৬ খুবই ভালো হিসেবে ধরা হয়।

 

 

অষ্টমে গণিতের ফল খারাপ ৪৭ শতাংশের

 

গবেষণার তথ্য বলছে, অষ্টম শ্রেণির ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর গণিতে দক্ষতার অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে ৯ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ, ৩৮ শতাংশ খারাপ বা গড়পড়তা। বাকি ৫৩ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশের অবস্থা মোটামুটি ভালো, ১৭ শতাংশ ভালো এবং খুবই ভালো স্তরে আছে মাত্র ৬ শতাংশ।

তবে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবস্থা কিছুটা ভালো। আর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবস্থা অষ্টম শ্রেণির চেয়ে তুলনামূলক ভালো। দশম শ্রেণির ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে খারাপ অবস্থায় আছে। এই শ্রেণিতে খুব খারাপ অবস্থায় কোনো শিক্ষার্থী নেই। ভালো অবস্থায় আছে ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

 

 

ইংরেজির অবস্থাও আশানুরূপ নয়

 

গবেষণায় দেখে গেছে, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২২ শতাংশের ইংরেজির অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে ৫ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ। আর ১৭ শতাংশের অবস্থা খারাপ বা গড়পড়তা। এ বিষয়ে দক্ষতা মোটামুটি ভালো থেকে খুব ভালো পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭৮ শতাংশ। দশম শ্রেণির ইংরেজি শিক্ষার্থীর ৮৪ শতাংশের অবস্থা ভালো এবং ১৬ শতাংশের অবস্থা খারাপ।

 

 

বাংলায় ২২ শতাংশের অবস্থা খারাপ

 

গবেষণার তথ্য বলছে, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষা বাংলায় ২২ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে ৫ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ। ১৭ শতাংশের অবস্থা খারাপ বা গড়পড়তা। বাকি ৭৮ শতাংশের অবস্থা ভালো। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ১৬ শতাংশের অবস্থা খারাপ। আর বাকি ৮৪ শতাংশের অবস্থা মোটামুটি থেকে খুব ভালো।

 

Manual3 Ad Code

অষ্টমে বিজ্ঞানে দুর্বল ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী

 

গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বিজ্ঞানে অষ্টম শ্রেণির ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই খারাপ এবং ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী খারাপ বা গড়পড়তা স্তরে আছে। এই দুই স্তর মেলালে অষ্টম শ্রেণির এ বিষয়ের ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থীরই অবস্থা খারাপ। মোটামুটি স্তরে আছে মাত্র ৩০ শতাংশ। বাকি ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালো বা খুবই ভালো স্তরে আছে।

 

কয়েক বছর আগের চেয়ে ফল খারাপ

 

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে দক্ষতা কমেছে। করোনা মহামারির কারণে ‘মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জাতীয় মূল্যায়ন-২০২১’ তৈরি হয়নি।

তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কোর ছিল ৪৩৭, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪০৪-এ। ইংরেজিতে স্কোর ছিল ৩৮৯, যা কমে হয়েছে ৩৭৯। গণিতে ২০১৯ সালে স্কোর ছিল ৪২৪, যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯২-এ। একইভাবে ২০১৯ সালে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলায় স্কোর ছিল ৪৬২, যা কমে হয়েছে ৪১৩, ইংরেজিতে ৪১৫ থেকে কমে হয়েছে ৪০২ আর গণিতে ২০১৯ সালে স্কোর ছিল ৪৫৮, যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২৫-এ।

 

এগিয়ে খুলনা, পিছিয়ে সিলেট

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা ও গণিতে ভালো করেছে খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ইংরেজিতে ভালো করেছে চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীরা, বিজ্ঞানে রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আর সব বিষয়ে খারাপ ফল করেছে সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বাংলা ও ইংরেজিতে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো করেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শহরের শিক্ষার্থীরা গ্রামাঞ্চলের চেয়ে সব বিষয়ে ভালো ফল করেছে।

 

শিক্ষক ঘাটতির প্রভাব

শিক্ষাবিদদের মতে, দুর্যোগ-দুর্বিপাক এবং শিক্ষাক্রম ধরনের বিষয় ছাড়াও শিক্ষকের ঘাটতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার জন্য দায়ী। মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান এমনটাই বললেন। তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলোতে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানে অন্য বিষয়ের শিক্ষকেরা এই বিষয়ের ক্লাস নেন। এর প্রভাব পড়েছে অষ্টম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞানের ফলাফলে।’

অধ্যাপক হাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘শিখন ঘাটতি কমাতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, তাদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দ্রুত শিখন মান বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’

 

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code