প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শিশু আইনের মামলার চাপে বিঘ্নিত হচ্ছে ধর্ষণের বিচার

editor
প্রকাশিত জুন ২৮, ২০২৫, ০১:২০ অপরাহ্ণ
শিশু আইনের মামলার চাপে বিঘ্নিত হচ্ছে ধর্ষণের বিচার

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

সারাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার মধ্যে ২৮ শতাংশই শিশু আইনে দায়ের করা মামলা। ঢাকায় এই সংখ্যা ২১ শতাংশ। এতে অতিরিক্ত মামলার চাপ সামলাতে হচ্ছে ট্রাইব্যুনালগুলোকে। দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে বিচারে। বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার বিচার পেতে দেরি হচ্ছে।

আদালত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। ঢাকার নিম্ন আদালতে মোট নয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনাল মূলত নারী নির্যাতন মামলাগুলোর বিচারের জন্য গঠিত।

 

২০১৩ সালে শিশুদের সব ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য পৃথকভাবে ‘শিশু আইন’ তৈরি হলেও দেশের কোথাও গঠন করা হয়নি পৃথক শিশু আদালত। প্রথমদিকে জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে শিশু আদালত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে গঠিত সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ‘শিশু আদালত’ হিসেবে গণ্য হবে বলে সংসদে বিল পাস হয়।

 

 

মূলত ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ কোনো অপরাধ করলে সেটা ওই আইনে বিচার না হয়ে আলাদাভাবে শিশু আইনে বিচার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোনো শিশু চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, হত্যাচেষ্টা বা এমন কোনো অপরাধ করলেও সেটার বিচার প্রচলিত দণ্ডবিধি আইনে না হয়ে ভিন্ন আদালতে শিশু আইনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু যত বড় অপরাধই করুক না কেন, তাকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার নিয়ম নেই। তাদের বিচার ভিন্ন নিয়মে শিশু আদালতে সম্পন্ন করতে হয়। বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নারী নির্যাতন মামলার পাশাপাশি এসব শিশু মামলার চাপ সামলাতে হচ্ছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে।

 

Manual1 Ad Code

সর্বশেষ প্রকাশিত এক হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকার নয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মোট ১৮ হাজার ৯২৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৭৩টি শিশু মামলা, যা বিচারাধীন মোট মামলার প্রায় ২১ শতাংশ।

 

এর মধ্যে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ৭৫৪টি শিশু মামলা বিচারাধীন রয়েছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এ। এখানে বিচারাধীন মোট মামলা ৪ হাজার ৯২১টি। এ আদালতে বিচারাধীন মামলার ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ শিশু মামলা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪১টি শিশু মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এখানে বিচারাধীন মোট মামলা ৩ হাজার ১১৭টি। এ আদালতে বিচারাধীন মোট মামলার ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ শিশু মামলা।

Manual6 Ad Code

 

এছাড়া এক নম্বর ট্রাইব্যুনালে ১৮৮টি, দুই নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৩০০টি, চার নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৫৫৪টি, পাঁচ নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৪৪৮টি, ছয় নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৫১৬টি, সাত নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৩৯১টি ও আট নম্বর ট্রাইব্যুনালে ১৮১টি শিশু মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিবরণী শাখার ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশের সব নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে শিশু আইনে দায়ের করা মামলার সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৬৯টি, যা মোট বিচারাধীন মামলার ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

 

এই অতিরিক্ত মামলার চাপ সামলাতে গিয়ে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। মামলার এক তারিখ থেকে পরবর্তী তারিখের মধ্যেও সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ ফারাক।

আদালত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশু মামলার বিচারের নিয়মও ভিন্ন। এসব মামলার চাপ সামলাতে গিয়ে তাদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।

Manual2 Ad Code

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এক কর্মচারী বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার পাশাপাশি শিশু আইনের মামলার চাপ পোহাতে হয় আমাদের। এর ফলে ধর্ষণ মামলাগুলোর তারিখ দীর্ঘ সময় পরপর পড়ে। ফলে ধর্ষণের বিচারে ধীরগতি সৃষ্টি হচ্ছে। ধর্ষণের বিচার দ্রুত করতে হলে শিশু আদালত পৃথক করতে হবে।’

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোসা. নার্গিস পারভীন মুক্তি বলেন, ‘শিশু আদালত আলাদা করলে মামলার চাপ অবশ্যই কমে যাবে। সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচারে দ্রুততা আসতে পারে।’

 

Manual3 Ad Code

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘শিশু আদালত আলাদা করলে তো ভালো। সরকার এটা আলাদা করার উদ্যোগ নিচ্ছে। শিশুদের বিচারের জন্য ভিন্ন আদালত করা হলে বিচার ত্বরান্বিত হবে। একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের মামলাগুলোর বিচারেও দ্রুততা আসবে।’

ওমর ফারুক আরও বলেন, ‘বেশি বেশি বিচারালয় হলে মামলার চাপ কমে আসবে। এখন তো একজন বিচারকের অধীনে কয়েকটি কোর্ট থাকে। জজ আদালতের একটি কোর্টে দায়রা আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন কোর্ট থাকে। একজন বিচারক কত মামলার বিচার করবেন? এখন সবচেয়ে বেশি মামলা চলে এনআই অ্যাক্টের মামলা (চেক জালিয়াতি মামলা)। যদি এনআই অ্যাক্টের মামলার বিচারের জন্য আলাদা আদালত হতো; আবার মাদক মামলা, অস্ত্র মামলা ইত্যাদির বিচারের জন্য যদি ভিন্ন ভিন্ন আদালত থাকতো, তাহলে বিচার অঙ্গনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসতো। মামলা জট থাকতো না।

 

 

পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, বিচার অঙ্গনে সরকারের বরাদ্দ কম। আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেই, বিচারক কম, আদালতে জনবল কম। এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নির্ধারিত বেতন নেই। তাদের বিল কবে পাবে এসবের ঠিক থাকে না। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের সব আইনজীবীর বসার জন্য কোনো অফিসও নেই। এসব সংকটের সমাধান না করে তো মামলা জট কমানো সম্ভব নয়। বিচার বিভাগে সরকার কম ব্যয় করলেও এখান থেকে আয় করে প্রচুর। বিপুল সংখ্যক কোর্ট ফি, স্ট্যাম্প বিক্রি হয়। এছাড়াও আদালতে বিভিন্ন মামলার রায়ে জরিমানা হয়, নিলাম হয়। এভাবে এই অঙ্গন থেকে সরকারি কোষাগারে প্রচুর টাকা জমা হয়। সরকারের উচিত এই খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা। তাহলে ভালো কিছু হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code