প্রজন্ম ডেস্ক:
চারদিকে ‘মব ভায়োলেন্স’। সেই সঙ্গে বেড়েছে হত্যা-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা। এমন পরিস্থিতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের আগে দেশের এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসিতে চলছে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি। সরাসরি ঘোষণা না দিলেও আগামী ফেব্রæয়ারিকে সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নতুন ভোটার নিবন্ধন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটের সামগ্রী কেনাকাটা, পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও বিধিমালা সংশোধনসহ ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
সাক্ষাৎ শেষে গত মঙ্গলবার তিনি নিজ দফতরে সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের জন্য ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি চলছে। আমাদের প্রস্তুতি এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নেই। আমাদের ফোকাস জাতীয় নির্বাচন।
সিইসি জানান, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) অত্যন্ত আন্তরিক। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, সেটাই চান প্রধান উপদেষ্টা। এখানে উনার সঙ্গে আমাদের মত মিলে গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা এখন একই জায়গায় আছি।
এদিকে নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘মব ভায়োলেন্স’ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। শনিবার দুপুরে রাজধানীতে এক সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পাটগ্রামে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশালে যেভাবে মব চলছে, সেটা বন্ধ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে? মব সন্ত্রাস দেশে যে অবস্থা, সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে পারলে বিচার করে ফাঁসি দেয়। মব সন্ত্রাস সহ্য করার মতো না।
তিনি বলেন, বিগত যে তিনটা (সংসদ) নির্বাচন হয়েছে, তাতে মানুষের সামনে মুখ দেখানোর উপায় নেই। পৃথিবীর কাছে আমাদের সম্মান নষ্ট হয়েছে।
এর আগে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে থানায় হামলা চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে শুক্রবার দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কীসের? কী নির্বাচন হবে? এ জন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ অবশ্যই তৈরি করতে হবে।
নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রশ্নগুলো এসেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি, যদি মৌলিক বিষয়গুলোতে কার্যকর সংস্কার হয়, তা হলে আলহামদুলিল্লাহ একটা ভালো নির্বাচন হবে। এবং ‘যদি’র কোনো সুযোগ নেই। সংস্কার করতে হবে এবং ভালো নির্বাচনও করতে হবে। ‘মব সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, মব সর্বকালে বাংলাদেশে ছিল। এটা ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এটা কন্টিনিউ (অব্যাহত) করছে। কিন্তু এই মব আমরা চাই না, আমরা মবের ঘোর বিরোধী।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একটি দলের নেতা বলেন, এভাবে যদি ‘মব’ চলতে থাকে তা হলে ভোটের সময় বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে অন্য দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করবে। এতে ভোটের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাই মব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘মব ভায়োলেন্স’ কোনো অবস্থাতেই কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এটা অবশ্যই দমন করতে হবে। শুধু নির্বাচন নয়, নরমাল সময়ের জন্যও এটি করতে হবে। এটার বিষয়ে অন্য কোনো দ্বিতীয় অপশন নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে এখনও অনেক দেরি আছে। যদি ফেব্রsয়ারি মাসও ধরি তাও লম্বা সময় হাতে আছে। আশা করি এর মধ্যে পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। দিন দিন উন্নতি হবে।
আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে পুলিশের মনের অবস্থাটা আমরা কম-বেশি বুঝেছি। নির্বাচনের আগে তাদের মনোবল আরও শক্ত হয়ে যাবে। যখন দায়িত্ব কাঁধে চলে যাবে তখন তো তাদের পিছপা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা খারাপ হলে পুলিশও তখন শক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।
নির্বাচনের আগে পুলিশ বাহিনীতে রদবদল হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি কাছাকাছি সময় এলে বলা যাবে। যদি ভালো লোকই পদায়ন করা থাকে তাকে তো আর সরানোর দরকার নেই। আর যদি সৎ ও নিরপেক্ষ লোক না থাকে তা হলে অবশ্যই আমরা তাকে সরানোর জন্য সরকারকে অনুরোধ করব।
ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, বছরজুড়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। অনেক দূরই আমরা এগিয়ে গেছি। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আর একটা কমিটি করা হবে। সেই কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা থাকবে। তাদের সিদ্ধান্তের আলোকেই সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা সৎ, ভালো ও নির্দলীয় লোককে খুঁজব যাতে কোনো অনিয়ম না হয়।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ভায়োলন্স সব সময়ের জন্যই বিব্রতকর। রাজনৈতিক দল তাদের দৃষ্টিতে কথা বলবে। এটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। যখন নির্বাচনের দিকে আগাব তখন মানুষের দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে থাকবে। তখন বোঝা যাবে কোন দিকে যায়। নির্বাচনে সেনাবাহিনী ইনভলব আছে, তিন বাহিনী ইনভলব আছে, বিজিবি আছে, পুলিশ ও আনসার ইনভলব আছে, সিভিল অ্যাডমিনিট্রেশন ইনভলব আছে।
এ ছাড়া জুডিশিয়ারিও ইনভলব থাকবে, সবকিছু যখন ইন্টিগ্রিটি ওয়েতে হবে, তখন নিশ্চয়ই পরিস্থিতি ইমপ্রæভ হবে। তখন ভোটারাও নির্বাচনের দিকে মনযোগী হবে। বর্তমান পরিস্থিতি ভোটের জন্য সেরকম অন্তরায় দেখছি না। কিছু কিছু জায়গায় ভায়োলেন্স হচ্ছে কিন্তু নির্বাচন যত কাছে আসবে তখন এমন থাকবে না। কারণ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বসব। তখন পরিকল্পনা করব।
Sharing is caring!