প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বজ্রপাতে নিহতদের মৃতদেহ চুরি হয় কেন?

editor
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০২৫, ০৭:০২ পূর্বাহ্ণ
বজ্রপাতে নিহতদের মৃতদেহ চুরি হয় কেন?

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual3 Ad Code

বজ্রপাতে নিহত নারী কিংবা পুরুষের মরদেহের কঙ্কাল চুরি যাওয়ার খবর প্রায় সময় পাওয়া যায়। বহুকাল ধরে কুসংস্কার প্রচলিত আছে বজ্রপাতে কারও মৃত্যু হলে সেই মরদেহ মূল্যবান কোনো কাজে লাগে। তবে কি কাজে লাগে এই ধারণা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়।

ধারণা করা হয় বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির শরীর প্রাকৃতিক চুম্বক বা মূল্যবান ধাতুতে পরিণত হয়। অপরদিকে এ জাতীয় মৃত ব্যক্তিদের হাড় দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাধনা করলে অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করা যায় বা জাদু বিদ্যা কাজে আসে বলে ধারণা করা হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্য বজ্রপাত অন্যতম। প্রতিবছর বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করে অনেক মানুষ। চলতি বছরের মে মাসে দেশে বজ্রপাতে প্রায় একশত জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। গত বছর মৃত্যু হয়েছিল ২৮০ জনের। আর চলতি বছরের ৭ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৫০ জনের বেশি।

এসব তথ্য জানিয়েছেন রাইমস (রিজিওনাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম)-এর আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ খান মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।

Manual6 Ad Code

তিনি জানান, দেশে বছরে গড়ে প্রায় ৩ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন বজ্রপাত ঘটে এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও সিলেট সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত।

Manual1 Ad Code

ধারণা করা হয় বজ্রপাতে মৃতদের লাশ চুম্বকের ন্যায় কাজ করে। যার জন্য লাশ চুরি হয়। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং প্রচলিত একটি কুসংস্কার। বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে মৃত এবং বজ্রপাতে মৃত এক।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন বলেন, বজ্রপাতে মৃত লাশ চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে কবর অনেক সময় পাকা করতে হয়। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে বজ্রপাতে মৃত লাশ চুরি হয়ে থাকে। তবে এখন এমন ঘটনা পাওয়া যায় না।

সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানায় মির্জাপুর গ্রামের বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী আঠারো বছর আগে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করে। লাশ চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে কবরস্থানে কবর না দিয়ে আমরা বাড়িতেই উনার কবর দেই।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, লাশ চুরির পেছনের কারণ এক ধরনের মিথ্যা বিশ্বাস।

অনেকেই মনে করেন, বজ্রপাতে নিহত মানুষের শরীরে মূল্যবান জিনিস তৈরি হয়। তারা হয়তো ধারণা করে লোহার ভেতর দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহিত হলে যেভাবে লোহা চুম্বক হয়ে যায়, এক্ষেত্রেও সেরকম কোনকিছু হয়। কিন্তু এটা তো পুরোটাই অন্ধবিশ্বাস। এসব কারণেই অনেকসময় মানুষ মৃতদেহ চুরির চেষ্টা করে।

 

গ্রাম্য অনেক কবিরাজ বা ওঝা’র ঝাড়ফুঁক কাজের জন্য এই ধরনের মৃতদেহের হাড়-গোড় দরকার মনে করে আর সে ধরনের কুসংস্কার থেকেও এই মৃতদেহ চুরির ধারণাটি চলে আসছে বলে অনেকেই মনে করেন, বলে জানান তিনি।

আসলে ইলেকট্রিক শক খেয়ে মানুষের মৃত্যু হলে মৃতদেহ যেমন হয় বজ্রপাতে মৃত মানুষের মৃতদেহ ঠিক একইরকম হয়। কোনও পার্থক্য থাকেনা।

বর্তমানে বজ্রপাত বেড়ে গেছে যার ফলে বেড়ে গেছে মৃত্যুও। যার অন্যতম অন্যতম কারণ হিসাবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য, তেমনই অন্য একটি কারণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা তত বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. এনামুল হক সাগর বলেন, ‘বজ্রপাতে মৃত লাশ অনেক কাজে লাগে এবং এটি অনেক টাকায় বিক্রি হয় এটা ভেবেই এসব লাশ চুরি করে একটি চক্র। আসলেই পুরাতন বিভ্রান্তিকর মন্তব্য নিয়ে অনেকেই পড়ে থাকে। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা থেকেই এসব ঘটনা ঘটে আসছে। তবে এসব বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করি এবং চোর চক্রদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code