প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতে নতুন পাঠ্যবই : আকবরকে বর্বর, বাবরকে নির্মম বলে উল্লেখ

editor
প্রকাশিত জুলাই ১৭, ২০২৫, ০১:৫৯ অপরাহ্ণ
ভারতে নতুন পাঠ্যবই : আকবরকে বর্বর, বাবরকে নির্মম বলে উল্লেখ

Manual4 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

ভারতবর্ষের ইতিহাসে মোগল শাসনামল একটি সোনালী অধ্যায় হিসেবে স্বীকৃত। তবে এবার সেই ইতিহাসে বদল ঘটাতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। এনসিইআরটির উদ্যোগে প্রকাশিত ‘এক্সপ্লোরিং সোসাইটি : ইন্ডিয়া অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক পাঠ্যবইয়ে মোগল সম্রাটদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে নতুন ভাষ্যে।

অষ্টম শ্রেণির এই ইতিহাস বইয়ে আগে যেখানে আকবরের পরিচয় ছিল ‘মহামতি’ হিসেবে, সেখানে নতুন মুদ্রণে তাকে বিশেষায়িত করা হয়েছে একইসঙ্গে ‘সহনশীল’ ও ‘বর্বর’ হিসেবে। এবার থেকে তিনি ও তার শাসনকাল পরিচিত হবে এই দুই বিপরীতধর্মী বিশেষণে। আর তার পিতা বাবরকে বলা হয়েছে ‘নিষ্ঠুর নির্মম বিজেতা’।

এই পাঠ্যবইয়ের এক অধ্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে—‘নোট অন সাম ডার্কার পিরিয়ডস ইন হিস্ট্রি’, অর্থাৎ ‘ইতিহাসের কিছু অন্ধকার অধ্যায়’। এই অংশে যুদ্ধ, দমন-পীড়ন, শাসনগত নিষ্ঠুরতা ও সহিংসতার ঘটনাগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ে বলা হয়েছে, ‘অতীতের এসব ঘটনার জন্য বর্তমান প্রজন্মকে দায়ী না করে, শিক্ষার্থীদের উচিত এগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বোঝা।’

বইটিতে বলা হয়েছে, বাবর ছিলেন একদিকে সংস্কৃতিমনস্ক ও বুদ্ধিজীবী, অন্যদিকে ছিলেন রক্তপিপাসু বিজেতা। তিনি শহর দখলের পর সমগ্র জনগণকে হত্যা করেছিলেন, শিশু ও নারীদের দাসত্বে আবদ্ধ করেন এবং মৃত মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তোরণ নির্মাণ করেন।

Manual1 Ad Code

অন্যদিকে আকবরকে ইতিহাসে এতদিন “মহামতি” হিসেবে প্রশংসিত করা হলেও, নতুন পাঠ্যবইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি একইসঙ্গে সহিষ্ণু এবং বর্বর ছিলেন। বইতে বলা হয়, তিনি প্রশাসনে অমুসলিমদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করেন এবং চিতোরগড় অভিযানকালে ৩০ হাজার নিরস্ত্র নাগরিক হত্যার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি উল্লেখ রয়েছে ‘জিজিয়া কর’-এরও। বলা হয়েছে, এটি ছিল অমুসলিমদের জন্য এক ধরনের অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় চাপ।

বইয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এই কর মূলত অমুসলিমদের রক্ষা ও সৈন্যবাহিনীতে অংশগ্রহণ না করার শর্তে বসানো হলেও বাস্তবে তা হয়ে উঠেছিল ধর্মান্তরের প্ররোচক ও অসম্মানজনক এক করব্যবস্থা।

নবম মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে এই বইয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘নির্মম সামরিক শাসক’ হিসেবে। বলা হয়েছে, তিনি একের পর এক মন্দির ও গুরুদ্বার ধ্বংস করেছেন এবং তার শাসনকাল ছিল সংখ্যালঘুদের ওপর চরম দমন-পীড়নের সময়।

মোগল শাসকদের নিষ্ঠুর হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি বইটিতে স্থান পেয়েছে প্রতিরোধ, বীরত্ব ও সাংস্কৃতিক প্রাণচাঞ্চল্যতার ইতিহাস। তুলে ধরা হয়েছে মারাঠা, অহম, রাজপুত ও শিখদের বীরত্বগাথা। উল্লেখ রয়েছে জাট, ভিল, গোন্ড, সাঁওতাল ও কোচদের মতো উপজাতি গোষ্ঠীর- যারা কখনো নিজেদের এলাকা রক্ষায় পিছপা হননি।

Manual1 Ad Code

ছত্রপতি শিবাজিকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘দুর্দান্ত কুশলী’ নেতা হিসেবে, যিনি হিন্দু মূল্যবোধের পতাকা তুলে ধরার পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান জানাতেন। পাশাপাশি আহিল্যাবাঈ হোলকার, তারাবাঈর মতো নেতাদের দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অবদানও পাঠ্যবইয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে।

এনসিইআরটির পাঠ্যক্রম পর্যালোচনার অন্যতম সদস্য মাইকেল ড্যানিনো বলেছেন, ‘এই বইয়ের লক্ষ্য মোগলদের দানব হিসেবে চিত্রিত করা নয়, বরং ইতিহাসের সত্যকে সামনে আনা।’

Manual3 Ad Code

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিএল ভার্মা বলেছেন, ‘মোগলরা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে রাজত্ব করেছে। সেই সময়কালে কী ঘটেছে, তা জানা নতুন প্রজন্মের অধিকার। সবাইকে সত্য মেনে নিতে হবে।

তবে ঐতিহাসিক ভাষ্যকে ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্লিখনের প্রয়াস’ বলেও সমালোচনা করছেন অনেক ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষক। তাদের মতে, ইতিহাসের পুনর্বিন্যাসে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা জরুরি, যাতে অতীত শিক্ষা হয়ে ওঠে বিভাজনের নয়, বরং সংহতির মাধ্যম।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code