প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাজনৈতিক ঐক্যই পথ

editor
প্রকাশিত জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
রাজনৈতিক ঐক্যই পথ

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য-সৌহার্দ গড়ে উঠেছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি তাতে ফাটল ধরেছে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ বাড়তে থাকায় দলগুলোর মধ্যে দোষারোপের রাজনীতি তীব্র আকার ধারণ করেছে।

 

বিশেষ করে পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে জড়িয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচারবিবর্জিত বক্তব্য ও সেøাগান পরিস্থিতিকে করেছে আরও উত্তপ্ত। এ ছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের কয়েকজন নেতার বাগযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

 

তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরি। একই সঙ্গে ঘোষিত সময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনেরও তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে যে পরিস্থিতি সৃষ্ট হবে তাতে ফ্যাসিবাদী শক্তিই লাভবান হবে।

 

দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

Manual3 Ad Code

 

বিএনপি বলেছে, সম্প্রতি পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জড়িয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচারবিবর্জিত বক্তব্য ও সেøাগান গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত অশ্লীল বক্তব্য ও সেøাগান গোটা জাতিকে বিক্ষুব্ধ করেছে।

 

তাদের মতে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

Manual5 Ad Code

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশে যাতে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে না পারে, সে জন্য দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আবারও হুমকির মুখে পড়বে।

Manual7 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রয়োজনীতা অনুভব করছি। সমঝোতা না হলে দেশে অরাজকতা দেখা দেবে এবং গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে থাকা শক্তি এর সুযোগ নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যত আগে সমস্যাটা বুঝবেন, তত আগেই দেশের মঙ্গল হবে। তিনি বলেন, মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ইদানীং নানা রকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে শুধু বিএনপি দল হিসেবে অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে এমনটা না, দেশের পার্টি সিস্টেম ভেঙে দিতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ইতিমধ্যে দেশের অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভঙ্গুর। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পার্টি সিস্টেম ভেঙে দিলে ওয়ান-ইলেভেনের মতো সরকার আসার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এটি দেশের জন্য ক্ষতি, তখন দেশের ভবিষ্যৎ অবস্থা অন্ধকার।

 

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, দলগুলোর মধ্যে একে অন্যকে কোণঠাসা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে দলীয় সিস্টেম যদি দুর্বল হয়ে যায়, তা হলে তৃতীয় শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা থাকে। এখন দেশ এই দিকে যাচ্ছে কি না স্পষ্ট না; তবে একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রতিটি দলই কোনো না কোনোভাবে দুর্বল অবস্থায় আছে বা তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। নতুন দলগুলোও ভালোভাবে অবস্থান করতে পারছে না। এটি দেশের জন্য অশনিসংকেত। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য দরকার। তিনি বলেন, আমরা খুব ভালো দিকে যাচ্ছি না। প্রত্যেক দলকে লক্ষ্য করা উচিত, নিজেদের মধ্যে গোলমাল মিটিয়ে ফেলা উচিত। যেন গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয়। সরকারেরও সেদিকে খেয়াল করা উচিত। প্রত্যেককে এখন সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ না থাকলে গোপালগঞ্জের মতো ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাই সমঝোতা হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অনৈক্য কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে তারা ইস্যুভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছেন। অধিকাংশ দলই বিভিন্ন ইস্যুতে একমত হয়েছে।

 

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হলেও দেশ এখনও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়েছে। তারা দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। তাই ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো গত ১১ মাসেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তাদের আগের মতোই হিংস্র মনোভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদ নির্মূলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সব দলের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিত।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code