প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের মন গলাতে সব চেষ্টা বাংলাদেশের

editor
প্রকাশিত জুলাই ২০, ২০২৫, ০৯:০১ পূর্বাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের মন গলাতে সব চেষ্টা বাংলাদেশের

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual1 Ad Code

মার্কিন প্রেসিডন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৩৫ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ নিয়ে বেশ চাপেই আছে বাংলাদেশ। বর্ধিত এই শুল্ক কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে এনে চুক্তি করার জন্য মার্কিন প্রশাসনের মন গলাতে সব রকমের চেষ্টাই করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর জন্য বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ যেমন নেওয়া হচ্ছে, তেমনি বাণিজ্য বহির্ভূত শর্তগুলোর মধ্যে যতটা মানা সম্ভব সে ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বাণিজ্য ঘাটতি কমনোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৩ লাখ টন গম এবং ১৪টি এয়ারক্র্যাফট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আজ রোববার ২ লাখ ২০ হাজার টন গম ক্রয়ের চুক্তি করবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আজই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে মার্কিন প্রশাসনকে একটি চিঠি দেওয়া হবে। গত ৯ থেকে ১১ জুলাই ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত তিন দিনের বৈঠকের পর কাজের অগ্রগতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে এই চিঠিতে।

Manual7 Ad Code

 

এ ছাড়া পরবর্তী বৈঠকের সময় চেয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে মার্কিন প্রশাসনকে আগামীকাল সোমবার। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বাইরে অন্য যেসব শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব চিঠিতে সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হবে না। বাণিজ্য বহির্ভূত শর্তগুলো আগামীতে যে আলোচনা হবে ওয়াশিংটনে সে আলোচনার টেবিলেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হবে। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য জানান। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসনের চাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা কমিয়ে আনা। আমরা সে বিষয়টিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। এ জন্য আমরা দেশটি থেকে প্রায় ৩ লাখ টন গম কিনব এবং ১৪টি এয়ারক্র্যাফট কেনা হবে। দুটি বিষয়েই আগে প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে। রোববার ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার চুক্তি আমরা করব। আশা করব এই চুক্তির ফলে আগামী যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সে বৈঠকে মার্কিন প্রশাসন ইতিবাচক মনোভাবে দেখাবে। একই সঙ্গে তারা যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে সেটিও কমাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা সে রকম মনোভাব মার্কিন প্রশাসন থেকে পেয়েছি।’

 

Manual8 Ad Code

আজ দেওয়া হবে চিঠি : বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আজ রোববার মার্কিন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি চিঠি দেওয়া হবে। এই চিঠিতে বাংলাদেশ সরকার গত মিটিংয়ের পর কাজের অগ্রগতি জানাবে। তাদের দেওয়া শর্তের কোনটা মানা হবে, কোনটা মানা হবে নাÑএ রকম কিছু এই চিঠিতে উল্লেখ করা হবে না। মানা না মানার ইস্যুগুলো পরবর্তী মিটিংয়ে আলোচনার টেবিলে ওঠানো হবে। আগের মিটিং শেষে দেশে এসে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে যে আলোচনা করা হয়েছে, সরকারের অন্যান্য দফতরের সঙ্গে যে আলোচনা করা হয়েছে তার অগ্রগতিগুলোই মূলত এই চিঠতে উল্লেখ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার মার্কিন সরকারকে আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে। সে চিঠিতে পরবর্তী মিটিংয়ের জন্য সময় চাওয়া হবে।

 

শ্রম বিষয়ক অনেক শর্তও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র : এদিকে বাণিজ্যের বাইরে বাংলাদেশের শ্রম খাতসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু শর্তও দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসন থেকে। অর্থাৎ শুল্কহার নির্ধারণ নিয়ে চলমান আলোচনায় শ্রম খাতকেও যুক্ত করেছে ওয়াশিংটন। দরকষাকষিতে শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষা জোর দিয়ে মালিকপক্ষের জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর শর্ত জুড়ে দিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশে এমন কোনো আইন থাকুক, যাতে করে কোনো দেশে জোরপূর্বক বা বাধ্যতামূলক শ্রমের মাধ্যমে তৈরি করা পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা যায়। একে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৩০ সালের শুল্ক আইনে সংশ্লিষ্ট ধারার আদলে কার্যকর করার শর্ত দিয়েছে তারা। বাংলাদেশের শ্রম আইনে দরকষাকষি ও সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দিতে শ্রম আইন সংশোধন করতে বলেছে দেশটি। এ জন্য শ্রম ইউনিয়ন নিবন্ধনে ২০ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা কমাতে বলেছে তারা। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলএ) সুপারিশ রয়েছে ১৫ শতাংশ। সে সঙ্গে ইউনিয়ন নিবন্ধনে শ্রমিকদের কারখানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা শিথিল করার শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

পাশাপাশি শ্রমিক ইউনিয়নবিরোধী কাজ ও অন্যায্য শ্রমচর্চা রোধে জরিমানার পরিমাণ এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে; যাতে মালিকপক্ষ এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে শ্রমিক এবং ইউনিয়নকে অন্যায্য শ্রমচর্চার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সুযোগ দিতে হবে। শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার দিতে হবে। শ্রমিকরা অবৈধ ধর্মঘট করলেও তাদের জেল-জরিমানা করা যাবে না।

 

বেশিরভাগ শর্তই মানা হচ্ছে :

রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফা আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের কারণে চুক্তির শর্তগুলোর বিষয়ে যদিও কেউ উন্মুক্তভাবে কোনো কথা বলছেন না। তবে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, চুক্তিতে শুল্কের বিষয় ছাড়াও অনেক উপকরণ রয়েছে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেগুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সুযোগ রয়েছে। চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পূর্ণভাবে আলোচনা না করলেও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় সরকার জানিয়েছে, যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তার ৮০-৮৫ শতাংশের বিষয়ে সম্মত হয়েছে তারা। বাকি ১৫-২০ শতাংশ নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, অমীমাংসিত বিষয় সবগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছা যাবে কি না এখনও নিশ্চিত না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করবে বাংলাদেশ।

 

বাণিজ্য ভারসাম্য আনার এই প্রচেষ্টা আগেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। এপ্রিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি লিখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম, এলএনজি ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনও একই ধরনের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

Manual3 Ad Code

 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য রফতানি করে। দেশটি বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রফতানি বাজার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে রফতানিকারকদের মধ্যে, বিশেষ করে পোশাকে খাতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code